বেগম শাহরাজাদ আর একটি নয়া কিস্সা শুরু করলেন–জাঁহাপনা, আল্লাতাল্লা নিজের মেজাজ-মর্জি মাফিক দুনিয়ার এক এক মুলুকের আদমিকে আলাদা আলাদা প্রকৃতি দিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। যেমন সিরিয়ার জেনানাদের দিকে যদি নজর দেয়া যায় তবে দেখা যাবে সে-মুলুকের প্রত্যেকটি জেনানার বুকভরা ঈর্ষা। কারো কোনদিক থেকে নসীব ফিরলে তারা একদম জ্বলে পুড়ে মরতে থাকে। তামাম সিরিয়া মুলুকে ঢুঁলে এলেও এমন কোন আদমির সঙ্গে মোকাকাৎ হবে না যার দোষের চেয়ে গুণের পরিমাণ বেশী।
এবার যদি কায়রোর দিকে নজর দেন তবে দেখবেন তারা সৎ, ভদ্র, বিনয়ী ও পরোপকারী। তাদের চরিত্রে বিলকুল সৎগুণের একত্রে সমাবেশ ঘটেছে। এমন কি বিদ্যা শিক্ষার ব্যাপারেও তারা অগ্রগণ্য। শুধু কি এ-ই? বদমাইশি, রাহাজানি, চুরি ও মস্তানির ব্যাপারেও কায়রোবাসীদের সমকক্ষ অন্য কোন মুলুকের আদমিরা কিছুতেই হতে পারবে না।
এক সিরিয়ার কারবারী কায়রোবাসীদের সমকক্ষ অন্য কোন মুলুকের আদমিরা কিছুতেই হতে পারবে না।
এক সিরিয়ার কারবারী কায়রো নগরে হাজির হ’ল। বাজারের ধারে একটি কামরা ভাড়া নিল। রেশমী কাপড়া ও কামিজ-সালোয়ারের আর পিরান-পাৎলুনের তার কারবার।
এক সকালে বাজারের এক দোকানে সে হাজির হ’ল। তার কোর্তা, কামিজ ও পাৎলুন প্রভৃতির যারপরনাই গুণগান জুড়ে দিল।
এক বিকেলে সে এক সড়ক দিয়ে যাবার সময় তার নজরে পড়ল তিনটি খুবসুরৎ লেড়কি হাসাহাসি করতে করতে তার আগে আগে যাচ্ছে। তাদের যৌবনের জোয়ার লাগা দেহ পরদেশীটির মধ্যে আবেগের সঞ্চার করল। কলিজা ছটফট করতে লেগে গেল। সে একদম সে-সামাল হয়ে পড়ল। লম্বা লম্বা পায়ে কয়েক কদম এগিয়ে পথচারিণীদের লক্ষ্য ক’রে বল্ল–‘শুনেছো, বাজারের মুসাফিরখানায় আমি আশ্রয় নিয়েছি। আজ সন্ধ্যায় আসবে কি? একসঙ্গে খানাপিনা আর গানাটানা করা যাবে, চলে এসো। আর যদি বল তোমাদের ডেরায় যেতে তবুও আপত্তি নেই। বল, আমি যাব, নাকি তোমরাই আসবে?’
–‘আমাদের সবারই স্বামী আছে। আমাদের মকানে গেলে কেলেঙ্কারী হয়ে যাবে। আমরা বরং তোমার ওখানেই যাব।’
লেড়কিগুলো এগিয়ে গেল। আদমিটি দোকানে গিয়ে ঝটপট কিছু দামী বাদশাহী খানা ও খুসবুওয়ালা গুলাবী সরাব খরিদ ক’রে সোজা মুসাফিরখানায় চলে গেল।
সন্ধ্যার আন্ধার নামতে না নামতেই লেড়কি তিনটি ঝলমলে সাজপোশাক গায়ে চাপিয়ে, তার ওপর বোরখা গায়ে মুসাফিরখানার কামরায় হাজির হ’ল। কামরায় ঢুকেই তারা তিনজনই সালোয়ার-কামিজ খুলে একদম বিবস্ত্রা হয়ে মেঝেতে পা ছড়িয়ে বসে পড়ল।
পরদেশী নওজোয়ানটি বুঝল মওকা একদম হাতের মুঠোর মধ্যে চলে এসেছে। সে ঝটপট খানাপিনার রেকাবি ও খুসবুওয়ালা গুলাবী সরাবের বোতল নিয়ে এল।
লেড়কিগুলো সাধ্য মত খানা গিল্ল। তারপর গলা পর্যন্ত সরাব ভরে নিল।
কিছুক্ষণের মধ্যে সরাবের কাজ শুরু হয়ে গেল। তারা হাসাহাসি মাখামাখি শুরু ক’রে দিল। পরদেশী লেড়কাটি একের পর এক জেনানাকে আলিঙ্গন, দলন, চুম্বন ও সম্ভোগের মাধ্যমে নিজের কামতৃষ্ণা নিবৃত্ত করতে লাগল। এভাবে পারস্পরিক দেয়ানেয়ার মাধ্যমে কি ক’রে যে রাত্রি বাড়তে লাগল কারোরই হুঁশ নেই।
এক লেড়কিকে বুকে জড়িয়ে ধরে পরদেশী নওজোয়ানটি জিজ্ঞাসা করল–‘সাচ্চা বলবে, আমার আগে এরকম কোন তাগদওয়ালা আদমির সঙ্গে সম্ভোগ করার সুযোগ পেয়ছে? এত সুখ কি আর কেউ দিতে পেরেছিল। বল তো?’
লেড়কি তিনটি এক সঙ্গে তাকে জাপ্টে ধ’রে সমস্বরে ব’লে উঠল–‘আরে ধ্যুৎ! কি যে বল! তোমার মত সুখ কোন পুরুষই আজ পর্যন্ত দিতে পারে নি।’
আদমিটি বেহেড মাতাল বনে গেল। বিবস্ত্রা লেড়কি তিনটিকে দু’পাশে নিয়ে জাপ্টা জাপ্টি গড়াগড়ি খেতে লাগল। খুনে তার মাতন লেগে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সরাবের নেশা তাকে আরও জেঁকে ধরল। একদম বুঁদ হয়ে পড়ল। মওকা বুঝে লেড়কি তিনটি তার মোহর আর হীরা-জহরৎ যা কিছু তল্লাশী ক’রে পেল বিলকুল পুটুলি বেঁধে বেমালুম চম্পট দিল।
সকাল হ’ল। পরদেশী নওজোয়ানটিএ নিদ টুটল। চোখ মেলে দেখে কামরার সামানপত্র ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে রয়েছে। লেড়কি তিনটি হাফিস হয়ে গেছে। তার বুঝতে দেরী হ’ল না, খুবসুরৎ লেড়কিগুলো তার যথাসর্বস্ব নিয়ে চম্পট দিয়েছে। তাকে একদম ভিখমাঙ্গা বানিয়ে দিয়ে গেছে।
নিঃস্ব রিক্ত নওজোয়ানটি নিজের মুলুক সিরিয়ার দিকে পা বাড়াল।
কিস্সা থামিয়ে বেগম শাহরাজাদ বল্লেন, জাঁহাপনা, সিরিয়ার সে-নওজোয়ানটির যা পাওনা ছিল তা-ই পেয়ে গেছে। পরদেশে এসে নক্করবাজিতে মাতলে তার হালৎ এরকমই হয়, দরকারও।
কিস্সাটি খতম ক’রে বেগম শাহরাজাদ চুপ করলেন।