মদের বোতল পাশে ছাদের কিনারায় বসে আছি।
”আর দু-মিনিট বাদে উনিশ বছর বয়সে পা রাখবো।কতো স্বপ্ন বুনেছিলাম দিনটা নিয়ে।আশা ছিলো অবিরাম।ভাগ্যের পরিহাসে সবকিছু আজ মরিচিকা।
যার সাথে দিনটা সেলিব্রেট করতে চেয়েছিলা সে আজ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।”
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখলাম আর এক মিনিট ত্রিশ সেকেন্ড বাকি আছে।
ঠিক তখনি মোবাইল বেজে উঠলো।
স্ক্রিনে সুমিতের নাম্বার।রিসিভ করতে হতাশার সুরে ভেসে এলো “বস্ কোথায় আপনি?”
– ছাদে।
– ধুর,রুমে আসেন তাড়াতাড়ি।
– কার?
– আপনার।
– রুমে গিয়ে কি করবো?
– আপনি আসবেন কি না?
– আসছি ওয়েট।
অতঃপর মদের বোতল রেখে রুমে গেলাম।
চারিপাশ অন্ধকার।কোথাও কারো চিহ্ন পর্যন্ত নেই।নিজের রুম নিজের কাছে হঠাৎ করে ভূতের ঘর মনে হচ্ছে।আতংকে মাথার কোণে জমা হয়েছে ঘাম।
এর মাঝে ঘড়ির ভয়ংকর এক শব্দ হলো ঢং….
শুনে আমার যেনো জ্ঞান হারিয়ে ফেলা অবস্থা।
তারপরি রুমের মাঝ বরাবর হলুদ বাতি জ্বলে উঠলো।নিচে টেবিলে বিশাল কেক রাখা।অদ্ভুত রকমের দেখতে সে কেক।যেনো কংকালের আস্ত এক মাথা।
ঠিক তার কয়েক সেকেন্ড পর আরো দুইবার ঢং ঢং….
রুম পুরো আলোকিত হয়ে গেলো।
*
নিজের চোখকে বিশ্বাস করা দায় হয়ে গেলো।এমন পরিস্থিতিতে আমি কি ভয় পাবো!না খুশি হবো!
রুমে মানুষ নয়,দাঁড়িয়ে আছে শত খানেক ভূত।
এমন আয়োজনে আমার অবস্থা দেখে সবাই হাসতে হাসতে হাততালি দিয়ে একসাথে বলে উঠলো “হ্যাপি বার্থডে টুই ইউ বস্।”
– এইটা কি উইশ!নিশ্চিত আমায় হার্ট এটাক দিয়ে মারার প্লান করা হয়েছে।
– দাঁড়ান বস্,খেল এখনো বাকি।(সুমিত)
– আমার কিছু হলেরে…..
– আকিল সুইচ অন।(সুমিত)
– হ্লা,রিমোট রিফাতের কাছে।(আকিল)
– ওপস,রিফাত সুইচ অন কর।(সুমিত)
বালক কি করিলো অজানা,তবে কিছুক্ষণ বাদে ফ্লোর হলুদ বর্ণ ধারণ করলো।ধীরে ধীরে সাদা কংকালের হাত উঠে আসতে লাগলো।তারপরি মনে হলো আমার পা টেনে ধরে।
আমি ভয়ে লাফিয়ে “আআআ” বলে চিৎকার দিলাম।
অপরদিক সবাই হাসতে হাসতে যেনো কূল হারিয়ে ফেলে।
– বস্ সাবধান,পা ধরতে পারলে কিন্তু ভূতের দেশে নিয়ে যাবে।(জাহিদ)
– কি বলিস এসবো।ভয় দেখাস কেনো ভাই।
নিমেষে সবার হাসি দ্বিগুণ রূপ ধারণ করলো।এদিকে আমার জান যায় অবস্থা।
অতঃপর রাফসান মুখ খুললো “হাহাহা,বস্ এটা জাস্ট গ্রাফিক্স লাইটিং।লাফালাফি বন্ধ করে দাঁড়িয়ে দেখেন কিছু হবেনা।”
– সত্যি বলছিস তো!
– হুম।(রাফসান)
বালকের কথায় কিছুটা সাহস করে দাঁড়ালাম।কোনো রিএক্সন না দেখে বোকা বোকা একটা হাসি দিয়ে বললাম “আরে পাগলা,এটা আগে থেকে জানতাম।তোদের এমনি এন্টিটেন করলাম।”
– শিওর বস্!(রিফাত)
– দুইশ পারসেন্ট।
– ওকে ডান।
বলা বাকি ঘর অন্ধকার হতে বাকি নেই।অন্ধকার ঘরে সবার ড্রেস জ্বল জ্বল করে লাল বর্ণ ধারণ করলো।
কোথা থেকে ভেসে আসতে লাগলো ভয়ংকর আওয়াজ।
জান আমার গলায় এসে ঠেকে আছে।
– আমিতো মজা করছিলাম।
– নাহ্ বস্,আপনি ভয় পাচ্ছেন না জানি।(রিফাত)
– হ্লা,এখন কি জ্ঞান হারায়ে প্রমাণ দিতে হবে?
– রিফাত এবার থামো।(নীলা)
– দেখ ভাই নীলাও বলছে।ম্যাডামের কথা রাখতে হয়।
– ওকে।(রিফাত)
*
কিছুক্ষণে এক এক করে আবার সব বাতি জ্বলে উঠলো।সাথে গলা থেকে নেমে জানটা বুকে অবস্থান করলো।
– আর কি কোনো সারপ্রাইজ বাকি আছে?
– এবার ফাইনাল রাউন্ড বস্।(সুমিত)
বলে নিজেদের মাঝে ঝগড়া শুরু করে দিলো।রিফাত বলে আমি দিবো,সুমিত বলে আমি দিবো,আকিল বলে আমি।ঝগড়ার মাঝে থেকে জাহিদ রিমোট নিয়ে দিলো ভৌ দৌড়।পিছু ছুটলো নীলা।কোথা থেকে সোহান লাফ দিয়ে রিমোট নিয়ে গেলো।সাব্বির পা বারিয়ে সোহানকে ফেলে দিয়ে রিমোট নিতে যাবে এমন সময় মোহসিনা আপু হাজির।
উনি সুযোগ বুঝে রিমোট তুলে নিয়ে কি করলো খোদা জানে,আমি শূন্যে উঠে গেলাম।চারিপাশ দিয়ে কংকাল মাথানত করতে লাগলো।এর মাঝে মাথায় সুন্দর মুকুট অবস্থা করে গেছে।
হাতের দিকে চেয়ে দেখি হাড্ডী দিয়ে গড়া সুন্দর ছুড়ি।
– বস্ কেক কাটেন।(সুমিত)
– মাটিতে তো আগে নামি।
– নামতে হবেনা।হাত সামনে করেন এমনিতে এগোতে পারবেন।(সুমিত)
– আমায় কি সুপার ম্যান মনে হয়?
– হুম,আপনি তো আমাদের সুপার ম্যান।(সুমিত)
ওর কথায় হাত সামনে করে কিছুটা অবাক হলাম।ধীরে ধীরে এগুচ্ছি।
অতঃপর কেকের সামনে গিয়ে কেক কাটলাম।
ঝামেলায় পড়ে গেলাম,কাকে রেখে কাকে খাওয়াবো।
তখনি মনে হলো আমার গুরুজন মোহসিনা আপুর কথা।
একটুকরো কেক আপুর গালে দিলাম,আপুও অল্প আমায় খাইয়ে দিলেন।
তারপর বড় এক টুকরো হাতে ধরলাম এবং সুমিত,রিফাত,আকিল,রাফসান,জাহিদ একসাথে খেয়ে আমার মুখ ক্রিমে মাখিয়ে দিলো।
ব্যস,শুরে হয়ে গেলো ওদের মাঝে মারামারি।
তখনি আমার দুই বোন মীম এবং রূপা সামনে এগিয়ে এসে বললো “ভাইয়া এবার আমাদের পালা।”
– হাহাহা,তোমাদের নীলা আপুকেও ডাক দাও।
অরঃপর নীলাও এলো।তিন টুকরা কেক তুলে তিনজনের গালে পুরে দিলাম।সবার মুখে মিষ্টি হাসি।
কেক কাটা পর্ব প্রায় শেষ।
এমন সময় মাইকে সোহানের কণ্ঠে ভেসে এলো “লেডিস এন্ড জেন্টাল ম্যান,শকিং খেতে আপনারা কি প্রস্তুত!”
সবাই চিৎকার দিয়ে বললো “হ্যা।”
সোহান তখন হাস্যকর এক বাক্য আমার উদ্দেশ্যে বললো “রফি এবার আপনাদের মাঝে গান পরিবেশন করবে।”
সবার মাঝে তোলপাড় শুরু হয়ে গেলো।আরজিত সিংও অতটা রিকোয়েস্ট পায়না যতটা আমি পেলাম।তবে ভাব নিতে ভুলিনি।
অল্প-স্বল্প ভাব নিয়ে মনে মনে বলাম “এবার দেখানোর প্রতিশোধ নেওয়ার পালা।”
– ওকে আমি গান গাইবো।কিন্তু একটা শর্ত আছে।
– কি শর্ত।(সবাই)
– আপনাদের ড্যান্স করতে হবে।
ভাগ্যক্রমে কেউ না বলতে নারাজ।
পিছু হাঁটার পথ না পেয়ে আমিও নিধীর ভাবনায় মাইক হাতে দুঃখের গান শুরু করলাম-
“হামে তুমছে পিয়ার কিতনা,
ইয়ে হাম নেহি জানতে।
মাগার জি নেহি সাকতে,
তুমহারে বিনা!!
শুনা গাম জুদাইকা উঠাতে হে লোক,
জানে জিন্দেগি ক্যাসে বিতাতে হে লোক।
দিন ভি ইহা তো লাগে,
বারাষ কে সামান।
ইয়ে দিল বেকারার কিতনা,
ইয়ে হাম নেহি জানতে।
মাগার জি নেহি সামতে,
তুমহারে বিনায়ায়ায়া।
হামে তুমছে পিয়ার…….”
*
এভাবে চলতে থাকলো পার্টি।একের পর এক ধাপ অতিক্রম করে,কখনো শক,কখনো লাফালি,কখনো মিষ্টি ঝগড়া।নাচ গান তো আছেই।
তবে মজার শেষ নেই এবং সকলের মাঝে যেটা বৃদ্যমান তা হলো ভালবাসা।
দেখতে দেখে কেটে গেলো চারটি ঘণ্টা।সবাই এবার ক্লান্ত।ঘুমের দেখা পেয়ে আমার সাধের দশতলা বাড়ি যে যার মতন পার্সোনাল রুম নিয়ে ঘুমিয়ে গেলো।
আমিও চলে গেলাম ছাদে।
সেখানে রিফাত,সুমিত,রাফসান,আকিল,জাহিদ,সোহান,নিয়ামত দাঁড়িয়ে।আমায় দেখে কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা করলো।
– কিরে হাতে কি?
– বলবোনা,শুনলে মারবেন।(নিয়ামত)
– কিছু বলবোনা,দেখি।
আকিল তখন নিয়ামতের হাত থেকে মদের বোতল নিয়ে আমায় দিয়ে বললো “বস্ দুই ঢোক আছে,চিল আপ।”
……………………………………………….<সমাপ্ত>………………………………………………