হ্যাপি বার্থডে কেকটি

হ্যাপি বার্থডে কেকটি

ঘরে যে একটা বৌ আছে ভুলেই যায়।
বারান্দায় দাড়িয়ে মেইন গেটের দিক তাকিয়ে অপেক্ষা করসি আর ইফতি কে ফোন করসি।
হঠাৎ এক ধমক মারা স্বরে হাত থেকে মোবাইল পড়ে গেলো।
-ঐ বারান্দায় দাড়ায়া কারে দেখো? হুম ঘরে মন টিকে না?
-আম্মা আসলে আপনার ছেলে আসতে দেরি করছে তো তাই দাড়িয়ে আছি।
-তুমি বারান্দায় দাড়ায়া থাকলে কি আমার পোলা তাড়াতাড়ি আসবে?
-না আম্মা আসলে ……
– যাও ঘরে যাও। পোলা মানুষ দেরি করবেই। তা কি বারান্দায় দাড়ায়া অপেক্ষা করতে হবে? যাও ঘরে যায়া ঘুমাও।
-জ্বী।
মন খারাপ করে ঘরে চলে গেলাম।
ইজি চেয়ারে লাইট অফ করে বসে আছি। আর মোবাইলে ফোন ধরসি। ইফতি এখনো ফোন ধরে না। হঠাৎ আবার ধমক
-এখনো ঘুমাও নাই কেন? হ্যাঁ? আমার কথা কি কানে যায় না? মোবাইলে কি হ্যাঁ? তোমার মায়ের কাছে
আমাদের বাসার বদনাম করতেসো?
-না আম্মা আমি তো আপনার ছেলেকে ……
-চুপ। বেশি কথা বলো তুমি। কোন দুঃখে যে ছেলের কথা শুইনা তোমাকে ঘরের বৌ বানাইসিলাম। আমার কপাল। কত কত দিন ইফতির বাপ বাসাতেই আসতো না। কই আমি কি বারান্দায় যায়া দাড়ায়া থাকতাম?
খায়া দায়া ঘুমায়া থাকতাম। যতসব নখরা দেখতে আল্লাহ আমারে বাচায়া রাখছে। ধুর!
-আম্মা আমি ঘুমিয়ে পরছি।
-যা মন চায় করো গিয়া …
আম্মা যাওয়ার সময় বিড়বিড় করে বলছে ” বেশরম কোথাকার। রাত জাইগা অপেক্ষা করা লাগে। ঢং যত্তসব ”
একটু কষ্টই লাগলো। আম্মা সবসময় ই এমন করে। একটু আগে সে ধমক দিয়েছে খাওয়ার টেবিলে খাবার দেওয়ার সময়। ইফতির সাথে রাতে খাবো বলেসিলাম তাই। সেখানেও বেশরম না জানি আর কত কি বেচারি আমাকে উপাধি দিলেন।
এই একটা বেলাই তো এক টেবিলে খাওয়ার সুযোগ পাই। সেটাও পারি না।
আচ্ছা স্বামীর সাথে খেতে বসা কি বেশরমগিরি?
তার জন্য অপেক্ষা করাও কি খারাপ?
আরেকবার এসে যদি দেখে আমি জেগে আছি তাহলে খবরই আছে আমার। কাথা মুরি দিয়ে কাথার তলে
ঢুকে ইফতি কে কল দিচ্ছি। কি যে হলো ওর ফোন ই ধরসে না।
হঠাৎ গেইটের আওয়াজ পেলাম।
ইফতি এসেছে।
ওর কাছে গেটের চাবি থাকে। চাবি দিয়েই খুলেছে।
উঠতেই নিচ্ছিলাম এমন সময় আমার শ্বাশুড়ী আম্মার আওয়াজ শুনলাম।
-বাবা এত দেরী করে ঘরে ফিরিস কেন?
-আম্মা আজ একটু কাজ ছিলো। তোমরা খাওয়া দাওয়া করছো?
-আমি তো করছি। তোর বৌ খায় নাই.. কি আর খাবে একটু পর পর ই দেখি কি যেনো চাবায়।
এইটা শুনে আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। আমি সন্ধ্যা থেকে কিছুই খাই নাই।
-হুম আচ্ছা… আম্মা তুমি ঘুমাও নাই কেন এখনো?
-আরে বাবা আমি তো মা। আমি তো জাগবোই। বৌ হইলে আলাদা কথা।
-থাক আম্মা ওর ঘুম পাইসে ঘুমায়া গেছে। কত ভোরে উঠে ঘুম পাইসে ঘুমায়া গেছে। তুমিও ঘুমিয়ে যাও।
-তোর খাবার?
-আমি বাইরে থেকে খেয়ে আসছি আম্মা। তুমি ঘুমাও।
-হাতে ব্যাগ কিসের?
-ওহ এইটা আমার না। এক ফ্রেন্ড আমার গাড়িতে ভুলে ফেলে গিয়েছে। কাল দিয়ে দিবো।
-আচ্ছা বাবা রাত জাগিস না। তাড়াতাড়ি ঘুমায়া যাইস।
-আচ্ছা আম্মা।
কথাগুলা শুনে কষ্টই লাগলো।
আরো কষ্ট লাগলো ইফতি বাইরে থেকে খেয়ে আসছে। আমি ওর জন্য অপেক্ষা করসিলাম না খেয়ে।
কষ্টে আমার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো..
আমি কাথা মুরি দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে রইলাম।
আমার রুমে গেইট আটকানোর আওয়াজ পেলাম।
কিছুক্ষণ পর হঠাৎ অনুভব করলাম কাথার ভিতর ইফতি ঢুকে আমাকে
জড়িয়ে ধরে কানের কাছে এসে বলছে –
-ম্যাডাম আপনে যে ঘুমান নাই আমি জানি।
আমি তো অবাক। মাথা থেকে কাথা সড়ায়া বললাম
-তুমি জানতে?
– জ্বী ম্যাডাম জানতাম। আপনে এখনো পর্যন্ত এক রাত ও আমার আগে ঘুমান নাই। আর আজ ঘুমায়া
যাবেন?
-আমি তোমার সাথে রাগ করসি।
-কেন যেনো ম্যাডাম?
-তুমি বাইরে থেকে খেয়ে আসছো।
এত গুলা ফোন দিসি তাও ধরো নাই।
রাতের ১১.৩০ টা বাজে। এতক্ষণে বাসায় আসছো।
-সরি ম্যাডাম। একটু কাজ ছিলো। কিন্তু আমি আপনেকে ছাড়া খেয়ে ফেলসি এটা আপনে কিভাবে বিশ্বাস করলেন?
এখন কিন্তু আমিও রাগ হবো।
-তুমি খাও নাই? আল্লাহ!! চলো চলো খাবার দেই।
ইফতি আমার হাত টেনে ধরে বলল
-তনু একটা শাড়ি এনেছি। আগে এটা পড়ে আসো।
-হায় আল্লাহ করসো কি? আম্মা দেখলে?
– দেখে নাই। তুমি ওয়াশ রুমে যাও শাড়ি পড়ে একটু
সাজুগুজু করে আসো।
-এত রাতে?
-হুম এত রাতেই। যাও
-কিন্তু ……
-তনু যাও।
-আচ্ছা।
-কাজল আর লিপস্টিক নিয়ে ঢুকো।
-এত রাতে সেজে কি করবো?
-এত কথা বলো কেন? আম্মাকে ডাকবো?
-না বাবা যাচ্ছি।
শাড়ি লাল শাড়ি। ইসসস কি সুন্দর শাড়ি টা। শাড়ি
পরে চোখে কাজল পড়ার সময় কি যেনো টুং টাং
আওয়াজ পাচ্ছি। গেইট খুলতে নিয়ে দেখি গেইট
বাইরে থেকে আটকানো।
-এই কি ব্যাপার বাইরে থেকে আটকাইছো কেন?
-আরে বাবা বাইরে তেলাপোকা। তুমি তো ভয় পাও তাই গেট আটকিয়ে রাখসি। যাতে তুমি বের হয়ে ভয়
না পাও, দাড়াও এটাকে মাইরা নেই।
-ওহ আচ্ছা। ভালো করসো.. আমাকে জানায়ো। আর কিছু ভাইঙ্গো না। আম্মা সকালে পিটানি দিবে।
-হাহাহা
আচ্ছা আসো বের হউ।
আমি বের হয়ে রিতি মতে অবাক।
ঘরে মোম দিয়ে সাজানো। ১০/১২ টা বেলুন।
খাবারের প্যাকেট। চকলেট। আর একটা ছোট্ট কাপ কেক।
-ও আল্লাহ!! এ কি!! এগুলা কখন করলে?
-শুভ জন্মদিন আমার স্ত্রী
প্রতিবছর ফোনে উইশ করি এবার সামনে পাইছি।
কেক ছোট এনেছি। নাহলে বড় কেক খেয়ে শেষ
করতে পারতাম না। আর সকালে আম্মা দেখলেও ক্যাচক্যাচ
করতো.. আসো আসো কেক কাটো। আর তোমার ফোন
বাজছে। তোমার বাবা কল দিয়েছে। ফোন ধরো।
আমি ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে
বাবা ওপাশ থেকে বলে উঠলো
-হ্যাপি বার্থডে মা।
আমি কান্না ভয়েসে
-thank you বাবা।
– এই কিরে কাঁদিস কেন? সব ঠিক আছে?
-আব্বা সব ঠিক আছে। আমি তোমাকে একটু পর কল দিচ্ছি।
ফোনটা কেটে ইফতি কে শরীরের সকল শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। আর কেঁদে ফেললাম।
-এই কি হইসে? কেক ছোট বলে কান্না করতেছো? সরি জান সরি।
-ইফতি আমাকে এভাবেই ভালোবাইসো। এভাবেই থাইকো। তাহলে আমি আম্মার শত বকা হাসি মুখে সহ্য করে নিবো।
ইফতি আলতো করে আমার মাথায় হাত রেখে বললো
-আমি আছি আজীবন আছি। আমার জন্য তুমি বাবা মা ছেড়ে আসছো। আর আমি তোমাকে এত টুক না দিতে
পারলে কেমনে হবে বলো? আম্মার বয়স হইসে অনেক কথা বলে তুমি কিছু মনে কইরো না।
-না আমি কিচ্ছু মনে করিনা জান।
-আমি জানি। এজন্যই তো তোমাকে আরো বেশি ভালোবাসি। আম্মা যা বকা দিবে আমি ভালোবাসা দিয়ে তা পোষায়া দিবো। চলবে তো?
-হুম চলবে।
-হইসে এখন কান্না বন্ধ করো। আসো কেক কাটি।
আম্মা তোমার কান্নার আওয়াজ শুনে ঘুম থেকে উঠে গেলে অযথাই আবার চিল্লাবে। কেমন?
ইফতি আমার চোখ মুছে দিয়ে। আমার হাতে হাত রেখে ঐ পিচ্চি একটা কেক কাটালো। কেক টা ছোট।
কিন্তু এতে যে কত শান্তি ছিলো। একমাত্র আমি জানি।
কেক কাটার সময় ভাবসিলাম আমি দুনিয়ার সবচেয়ে ভাগ্যবতী মেয়ে যে এত ভালোবাসার একটা মানুষ
পেয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ …
________________________________________
প্রতিটা মেয়ে এমন স্বামী চায়। এমন স্বামী থাকলে
অনেক কিছু হাসি মুখে সহ্য করা যায়। যদি স্বামী টা
আদর দিয়ে তা পুষিয়ে দেয়।কিছু কিছু মানুষ তাদের স্ত্রী র কষ্টগুলোও বুঝতে পারে।
এই গল্প গুলো সত্য বানাতে খুব টাকা পয়সা আর সময়
লাগে না। গল্পকে বাস্তব রূপ দান করতে একজন স্বামীর অনেক অবদান রয়ে যায়। দয়া করে ঐ মেয়েটাকে একটু ভালো রাখুন যে কিনা সব ছেড়ে আপনার কাছে আজীবনের জন্য চলে আসে।
অনেকেই
বলবেন এসব কল্পনা … কল্পনাকে বাস্তব বানানো খুব কঠিন কিছুনা। আজ আপনি চেষ্টা করুন। কাল আপনাকে দেখে অন্য কেউ চেষ্টা করবে।

গল্পের বিষয়:
ফ্যান্টাসি
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত