লেবু চা অতঃপর

লেবু চা অতঃপর

সেদিন স্কুল থেকে বাসায় আসতেসি। প্রতিদিন একটা গুটিবাজের সাথে আসি। আজ ঐ গুটিবাজ ওরটারে নিয়ে ঘুরতে গেছে। তো একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বললাম, “মামা একটা লেবু চা” চা খেতে খেতে দেখলাম একটা মেয়ে রেল লাইন ধরে হাটছে। মেয়ে না বলে বড় আপু বললে বেশি ভালো হয়। মনে হয় হসচ দিচ্ছে।

উনি এমন ভাবে হাটছে যে আগে তিনি এখানে কারো হাত ধরে হাটতেন। আজ সেটা মিস করছেন। আপুটার চোখের কোণে চিকচিক করছে। এটা হয় মেকাপ নাহলে অশ্রু। মজাই লাগছে। চা শেষ হয়ে গেছে। চা টা ভালো ছিলো। তাই মামাকে আরেকটা দিতে বললাম।

চা খাওয়া শেষ করে গেলাম আপুর কাছে । উনি এখন আর হাটছে না। বসে আছে। মনে হয় পা ব্যাথা করছে । কোলের মধ্যে মাথা লুকানো। হয়ত কাদছে। এসব সিরিয়াস টাইমে ফাইজলামি করার মজাই আলাদা। উনার পাশে বসতে যাবো এসময় তিনি উঠে আবার হাটতে লাগলেন । আমি তার পাশে হাটতে লাগলাম। আমার সন্দেহ ঠিক আছে উনি কেদেছিলেন। গালে এখনো পানি লেগে আছে।

পাশে হাটার সময় বললাম, “আররে মিথি আপু না? ” উনি আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চোখে বিশ্বয়। বুঝলাম আন্দাজে বলা নাম লেগে গেছে।

উনি: জি কিন্ত তুমি কে তোমায় তো চিনলাম না। (মনে হয় বুঝেছে আমি তার ছোটো তাই তুমি বলছে। নয়ত আন্তরিকতা। আমি দ্বিতীয়টাই ধরে নিলাম)

আমি: না চিনলেও হবে। একটা টিস্যু দিয়ে বললাম: নিন। চোখের পানি মুছুন। দেখতে খারাপ লাগছে।

উনি : (টিস্যু নিয়ে মুখ মুছল) বললেন: ভালো দেখালেই বা কি? আধা ঘণ্টা পরেই তো মরব।

আমি: সেটা আপনি পারবেন না। কারন আপনি মরলে এইচএসসি দিবে কে? তার বিশ্বয় আরো বাড়ছে।

আবার বললাম: রেজাল্ট পাওয়ার আগে মানুষ মরে কিন্তু পরীক্ষার আগে আজ পর্যন্ত কেউ মরে নি। তা আপু আত্মহত্যা করার কারন টা কি জানতে পারি?

উনি: হয়ত পারেন হয়ত না। আমি: বিষয়টাকি প্রেম ঘটিত কিছু?

উনি: মা মা মানে হ্যা

ঝড়ে বক মরে ফকিরের কেরামতি বাড়ে. আমারও কেরামতি বাড়ছে। কাকতালিয় ভাবে মিলে যাচ্ছে কথা গুলো। আর উনার বিশ্বয়ও বাড়ছে প্রতিকথায়। যাক হিমুর কাছাকাছি যেতে পারছি।

উনি: তুমি তো আমার সবই জানো। আমি কি তোমার নামটা জানতে পারি?

আমি: আমার নাম হিমালয়(কুত্তায় কামড়াইসে আসল নাম বলব তারে?) উনি: হিমালয় থেকে হিমু?

আমি: জি দুজনই হেসে দিলাম উনি : আমি তুমাকে তুমি বলছি তাই তোমারও উচিত তুমি বলা।

আমি: আমি তো তোমাকে তুমি করেই বলছে । আপনাকে আমি তুমি করে বলিনি। দেখুন এখনো কিন্তু আমি আপনাকে তুমি করে বলছি।

উনি:??

দিলাম মাথা হ্যাং করে। ট্রিক টা হিমুর আমি কাজে লাগালাম।

আমি : প্রবাদ আছে কেউ একসাথে ৭ পা একসাথে কেউ হাটলে তারা বন্ধু। সে নিয়মে তুই করে বলি?

উনি: দেখ তুমি আমার মাথা হ্যাং করে দিয়েছ আর না। তোমার নামের সাথে কাজের মিল আছে।

আমি: বাদ দেন। কাজটা কেন করেছিলেন। বিশ্বাস করেছিলেন? যানেন না পৃথীবির কাউকে বিশ্বাস করতে নেই? সক্রেট্স তার পুত্রকে বলেছিল, “বৎস নিজরের বাপকেউ কখনো বিশ্বাস করবে না”

উনি: আমি তো তোমাকেও বিশ্বাস করি।

আমি: এই ২ মিনিটের পরিচয়ে!! আপনিতো আমার শুধু নামই জানেন আর কিছুই নাহ

উনি: নাম দিয়েই তো মানুষকে চিনা যায় আমি: না যায় না । এটা আপনার ভুল ধারনা। এই জন্যই আপনার এই দশা। পরিবারের কথা না ভেবে মরতে আসছেন।

উনি: তুমি কি আমায় আত্মহত্যা থেকে ফিরাতে আসছ?

আমি: পাগল? আপনাকে মরতে হেল্প করতে আসছি

উনি: মানে?

আমি: মানে হলো আজকে কোনো ট্রেন যাবে না। কাালকে ৮:৩০ এ আইসেন। খুলনার ট্রেন যাবে। তখন মইরেন উনি: সিরিয়াসলি মরব?

আমি: অবশ্যই কারন যে যা চায় তা না পেলে সে টিকে থাকতে পারে না। উনি: ওকে তাহলে কাল ঐ সময় এসেই মরব।

আমি: একটা কথা বলি। আপনি আরো কিছুদিন পরে মরেন। কারন আপনার প্রাণ আপনি মারতে পারলেও আপনার অনাগত সন্তানকে মারার অধিকার আপনার নেই। সে দুনিয়ায় আসুক, তাকে নিরাপদে রেখে আসুন। তাহলেই মরার জন্য আপনার সব পথ খোলা। চলি।

আর কিছু শুনার ইচ্ছা না রেখেই এসে পরলাম। জানি সে মরবে না । কালকে আমাকে ধন্যবাদ/সরি টাইপের কিছু বলার জন্য এ সময় আসবে। কিন্তু আমি আসব না। হিমুরা কখনো আসে না। তারা মানুষকে অপেক্ষায় রেখে ডুব দেয়। আমার তো এটাই লক্ষ। আমি হিমু হব। বাসায় ফিরছি। বাসায় দেরি করার জন্য বকা খাবো না। কারন আজ আগেই ছুটি দিয়েছে। এই সুযোগে আমার গুটিবাজ বন্ধু ওর গফের সাথে আর আমি রেললাইনের আপুর সাথে ছিলাম।

-দ্যা গ্রেট অপদার্থ

গল্পের বিষয়:
ফ্যান্টাসি
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত