ছিরু পাগলার বউ

ছিরু পাগলার বউ

– হাই পাগলা!
– মানে? কে পাগলা?
– পাগল কি নিজেকে পাগল বলে স্বীকার করে?
– কি বলছিস এসব?
– ঐ তুই বলদ নাকি?
– আমি কেন বলদ হতে যাব?
– এই তো লাইনে আইছোস মামা! তুইতো বলদ না তুই হইলি পাগলা। হাহাহাহাহাহ…..

আমি আর কোন উত্তর দিলাম না। তাহলে ও আমার ইজ্জ্বতের ফালুদা বানিয়ে দেবে। আরও উল্টাপাল্টা বলবে। মেজাজ টাই খারাপ হয়ে গেল। তাই লগআউট করে বেরিয়ে আসলাম। আমি অনয় আর এতক্ষন যার সাথে কথা বলছিলাম তার নাম মমি। আমার ফ্রেন্ড। আস্ত একটা ডাইনি। সবসময় এভাবে পিছু লেগেই থাকে। আর সবসময় আমাকে রাগায়। মমি আর মমির বিড়াল আমার জীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে। প্রায় প্রতিদিন সকালেই বিড়ালটা সাথে নিয়ে মর্নিং ওয়াকের নাম করে আমাদের বাসায় চলে আসে। কিন্তু তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে কি আর বলব টিং টিংয়ে রোগা, গাল দুটো ভাঙ্গা ঠিক যেন সৈয়দ মুজতবা আলীর “রসগোল্লা” গল্পের ঝান্ডুদার মত। বাসায় ঢুকেই আমার রোমের দরজা খোলা পেলে তার আদরের বিড়ালকে লেলিয়ে দেয় আমার পিছু। আর এই বিড়ালের অত্যাচারে আমি উঠতে বাধ্য। আর যদি দরজা বন্ধ পায় তখন নিজেই দরজাই ডাক বাজানো শুরু করে। তখন মন চায় এই দুইডারে ধরে কঁচু গাছের সাথে বাইরাই। কিন্তু আমার দুর্বাগ্য আশেপাশে কোন কঁচু গাছ নাই। আবার ভয়ও হয় যদি ইভটিজার বানিয়ে দেয় তাহলে তো রক্ষা নেই। মাথা নেড়া করে জুতার মালা গলায় দিয়ে সারা শহর ঘোরাবে। সাথে জেল খাটা তো আছেই। তাই মনে মনে স্থির করলাম এদের বুদ্ধ দিয়ে শায়েস্থা করবো।

পরের দিন সকালে আমি বিছানায় শুয়ে আছি। হঠাৎ কে যেন আমার কান ধরে জোরে জোরে টানা শুরু করেছে। গায়ের চাদর সরাতেই দেখি মা।
– এই বাদর ছেলে উঠ। উঠ বলছি!
– মা সকাল বেলা এসব কি শুরু করলে বলতো? যাও আমি পরে উঠবো!
– উঠ তোর বিচার আছে!
– মানে? আমার আবার কিসের বিচার? আমি কি করেছি?
– তুই মমিকে কি বলেছিস? মমির মা এসেছে কি যেন বলবে শোন?
– ওরে আল্লাহ আমি মমিকে কি বললাম আবার? আচ্ছা মা তুমি যাও আমি আসছি।
– অনয়! তুমি মমিকে কি বলেছো ও সকাল থেকে কাঁদতেছে।
– না আন্টি আমি তো মমিকে কিছুই বলিনি? ও কাঁদবে কেন?
– তুমি নাকি মমিকে বলেছো তার বিড়ালকে বস্তায় ভরে পানিতে ফেলে দিয়ে আসবে?
– না আন্টি। আমি এটা কেন করতে যাব?
– সকাল থেকে না খেয়ে শুধু কান্না করতেছে আর আমাকে তোমার মার কাছে আসতে বলতেছে?
– আচ্ছা আন্টি আমি মমির সাথে কথা বলছি! বলেই আমার রোমে চলে আসলাম।

এসেই মমিকে কল দিয়েছি। দুইবার রিং হয়ে কেটে গেল। রিসিভ করল না। মনে হয় ভয় পাইছে। তাই রিসিভ করল না। আমিও ছাড়বার পাত্র নয়। ও আমার ইজ্জ্বতের ফালুদা বানিয়েছে। ওকে ছেড়ে দেওয়া প্রশ্নই আসে না। তাই তৃতীয় বারের মত কল দিলাম। ও..মা! এখন দেখি রিং হওয়ার আগেই রিসিভ করে ফেলল। রিসিভ করেই হরহর মোভির ডাইনির মত হাসা শুরু করেছে আর…..
– কিরে বার বার কল দিচ্ছিস কেন? মা গিয়ে কিছু বলেছে নাকি?
– ঐ তুই আন্টিকে কি বলেছিস?
– তুই আমাকে হুমকি দিবি আর আমি চুপ করে বসে থাকব?
– আমি কি তোকে বলেছি যে তোর বিড়ালকে বস্তায় ভরে পানিতে ফেলে দিয়ে আসব?
– না তো? আরে পাগলা আমার বিড়াল তো হারিয়ে যেতে পারে তাই না? তাই পার্মানেন্ট একজনকে ঠিক করে রাখলাম, যে আমায় খোঁজে এনে দিবে।
– তুই বলে সকাল থেকে কান্না করতেছিস আর কিছুই খাসনি?
– হা হা হা মামা কসকি মা গিয়ে এসবও বলছে নাকি? এ জন্যই বলি মাই মাদার ইজ গ্রেট। আমি কেন না খেয়ে থাকব আর কান্না করব? আমাকে কি পাগলা কুকুরে কামড় দিছে নাকি? বুঝলি মগা সবি-ই অভিনয়।

এরপর আমার কি বলা উচিত আমার জানা নেই। তাই ফোন রেখে দিয়ে ছাদে চলে আসলাম। মেয়েটি নিশ্চিত ইবলিশের আপন বোন। না হলে এত কুবুদ্ধি মনে আসে কিভাবে? মন চাইতেছে এখনি এই ছাদ থেকে লাফ দেয়। না এসব ভাবলে হবে না। যে করেই হোক এর মোক্ষম জবাব দিতেই হবে।

পরের দিন আমি একাই ভার্সিটিতে যাচ্ছি। পথে হঠাৎ ছিরু পাগলের সাথে দেখা। সামনে দাড়িয়ে টাকা চাচ্ছে। নাছোড় বান্দা। টাকা না দিলে কোনভাবেই ছাড়বে না। তাই পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে দশ টাকার একটা নোট তার হাতে ধরিয়ে দিলাম। চলে যাব এমন সময় হঠাৎ আমার শুভোদয় হল, আরে যদি ছিরুকে দিয়ে প্রতিশোধ নেয়া যায় তাহলে তো মন্দ হয় না। এতে সাপও মরবে লাঠিও ভাঙ্গবে না। তাই ছিরু পাগলের সাথে কথা বলা শুরু করলাম…..

– আচ্ছা ছিরু এই টাকা দিয়ে কি করবে?
– কেন সিগারেট খাব।
– এখানে তো অনেক টাকা। বাকিগুলো দিয়ে কি করবে।
– আইস্ক্রিম খাব।
– আচ্ছা আর বাকি টাকা দিয়ে কি করবে?
– আর আর আর…….
– আচ্ছা ছিরু, তুমি বিয়ে করবে না?
– করবো! তুই আমাকে একটা সুন্দর বিয়ে করিয়ে দে।
– আমার কাছে পাত্রীর ছবি আছে দেখবে?
– দেখা!

আমি তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ফোন বের করে ডাটা কানেকশন দিলাম। মমির প্রোফাইলে গিয়ে কয়েকটা ভাল ভাল ছবি দেখালাম ছিরু পাগলাকে। তারপর বলে দিলাম এটা তোমার বউয়ের ছবি। আর এর নাম মমি। সব কিছু ভালভাবে বুঝিয়ে দিয়েছি ছিরুকে তবুও একটু পরীক্ষা করি, পারে কি না, হাজার হলেও পাগল তো?

– আচ্ছা ছিরু তোমার বউয়ের নাম কি বলতো?
– মমি।
– মনে থাকবে তো তোমার বউয়ের নাম?
– হুম। আমার বউয়ের নাম মমি।
– কেউ যদি জিজ্ঞাসা করে তোমার বউয়ের নাম কি তখন কি বলবে?
– আমার বউ মমি।

তোমার বউয়ের নাম মমি। এটা মনে থাকে যেন। ছিরু মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। পরে আরও দশ টাকার একটার নোট ছিরু পাগলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ভার্সিটিতে চলে গেলাম। ছিরু পাগলও আমার বউয়ের নাম মমি জবতে জবতে চলে গেল। এভাবে আরও কয়েকবার তার ব্রেইন ওয়াশ করেছি মমির নাম দিয়ে। এর পর থেকে যে কেউ তার বউয়ের কথা জিজ্ঞাসা করলেই মমি নামটা ছিরুর মুখ থেকে বেরিয়ে আসে।

তারপর থেকেই আমি শুধু সুযোগ খোঁজতেছি। কখন মমিকে ছিরু পাগলের সামনে আনা যায়। এক সপ্তাহ পর আমাদের ভার্সিটিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। আয়োজনের তোড়জোড় চলতেছে। দিন যতই এগিয়ে আসছে ভার্সিটিকে রঙ্গিন আবরনে সাজানো হচ্ছে। একদিন কাজ শেষে ভার্সিটি থেকে বাসায় যাওয়ার জন্য বের হয়েছি। হঠাৎ দেখি ছিরু পাগল ভার্সিটি গেটের পাশেই দাড়ানো। আমাকে দেখেই এগিয়ে এসেছে আমার দিকে টাকার জন্য। দিতে বাধ্য আমি একটা দশ টাকার নোট নাছোড়বান্দা ছিরুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। এরপরে পরপর কয়েকদিন তাকে ভার্সিটি গেটের সামনে দেখতে পেলাম। মনে হয় আমার মোক্ষম সুযোগ আসতে চলেছে। পরের দিন সকালে অনুষ্ঠান। আগেরদিন বিকালে মা আমায় ডেকে বলতেছে মমিদের বাসায় গিয়ে ঘুরে আসতে। একটা পার্সেল দিয়ে আসতে হবে মমির আম্মুকে। পরে আম্মুকে জানিয়ে দিলাম মা আমি আগামীকাল সকালে ভার্সিটিতে যাওয়ার পথে নিয়ে যাব। পরেরদিন সকালেই রেডি হয়ে পার্সেলটা হাতে নিয়ে মমিদের বাসায় পৌছে গেলাম। কিন্তু বাসার ভিতরে প্রবেশ করে যা দেখলাম তা দেখে আমি আনন্দে আত্মহারা। যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। নিজেকে কন্ট্রোল করতে খুব কষ্ট হচ্ছিল। দেখি মমি কাঁদতেছে। মমির বিড়ালকে নাকি তার ছোট ভাই বেদড়ক পিটিয়েছে। বিড়ালের হাটতে সমস্যা হচ্ছে। শোনে আমার যে কি ভাল লাগতে ছিল বলে বুঝানো যাবে না। বিড়ালের অপরাদ মমির ছোট ভাইয়ের কাগজ দিয়ে বানানো ঘর ছিড়ে ফেলেছে। আমার মনে বাধ ভাঙ্গা উল্লাস চেপে রেখে মুখ দিয়ে শান্তনার বাণী বের করলাম। এরপর মমির কান্না থামিয়ে তাকে সাথে নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। ভার্সিটি গেটে নেমেই দেখি আরও ত্রিশ থেকে বত্রিশ জন দাড়ানো। ভার্সিটির ভিতরে ঢুকতে যাব হঠাৎ ছিরু পাগল এসে সামনে খাড়া। তার টাকা চাই। ছিরুকে দেখে আমার মনে বিজয়ের প্লাবন বইতে শুরু করেছে। মনে মনে ভাবলাম এখন যদি কোনভাবে ছিরুকে মমির নাম মনে করিয়ে দিতে পারি তাহলেই কেল্লাফতে। আমার কাজ হয়ে যাবে। তাই বুদ্ধি করে আমার কাছে টাকা থাকা সত্তেও ছিরুকে শুনিয়ে মমিকে বললাম…..

– মমি তোর কাছে খুচরো দশ টাকা হবে?

– না। আমার কাছে খুচরো কোন টাকাই নেই।

মমির নাম শুনেই ছিরু পাগলা মমির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মিম আমার বউ, মিম আমার বউ অনর্গল জপে যাচ্ছে ছিরু পাগলা। তা দেখে আমাদের মাঝে হাসির রোল উঠেছে। মমি ভয় পেয়ে দ্রুত ভার্সিটির ভিতরে চলে যায়। আমরা ছিরু পাগলাকে আটকে দিয়ে ওখান থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরের দিন থেকে সারা ভার্সিটিতে ভাইরাল মমি ছিরু পাগলার বউ। আমাদের সাথে সাথে মাঝে মাঝে স্যাররাও ক্ষ্যাপায় মমিকে ছিরু পাগলার বউ বলে।

মমি এখন এতে অব্যস্ত হয়ে গেছে। ছিরু পাগলার বউ বললে আগের মত আর রাগে না। কিন্তু কিছুদিন বেশ ভুগিয়েছি মমিকে। ছিরু পাগলার কথা তাদের বাসা পর্যন্ত পৌছে গিয়েছিল। মমির পরিবারের অনেকেই মাঝে মধ্যেই তাকে ক্ষ্যাপাত। এমন কি তার বাবাও। আর আমার তো কথাই নেই। আমার এই মধুর প্রতিশোধের কথাটা বেশ কিছুদিন চেপে রাখতে পারলেও আজ কেন জানি আর পারলাম না। মমির কাছে সত্যটা বলে ফেলেছি….

– মমি তোকে একটা কথা বলি?
– কি কথা?
– শুনে রাগ করবি না তো?
– আরে না। তুই নির্দিধায় বলতে পারিস!
– ছিরু পাগলকে তোর নাম কে বলে দিয়েছিল জানিস?
– কে????
– আমি!
– কিইইইই????????????
– তুই রাগ আর প্রশ্ন করতে থাক আমি রাখি। টুত….টুত….টুত।

ফোন রেখে দিয়েই দরজার ছিটকিনিটা ভালভাবে লাগিয়ে দিলাম। তা না হলে সকাল বেলা কান মলা খেতে কার ভাল লাগবে বলুন। রোমে না ঢুকতে পেলে হয়তো দরজায় কিছুক্ষন ঢোল বাজাবে। আমি না হয় ওঠে ঢোলের তালে তালে কিছুক্ষন সাম্বা ড্যান্স দিয়ে আবার ঘুমিয়ে পরবো। কি বলেন আপনারা আমার আইডিয়া দারুন না?

গল্পের বিষয়:
ফ্যান্টাসি
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত