পাত্রী যখন ছাত্রী

পাত্রী যখন ছাত্রী

প্রায় মিনিট পাঁচেক হবে,আমি পড়াতে এসে বসে রইলাম।এখনও ইশিতা মানে আমার ছাত্রী আসার নামই দেখতেছি না।পড়বে না নাকি,,,,?ধ্যাত,ভালোই লাগে না আর টিউশনি করাতে।

মনে মনে এসব ভাবতেছি,,,,, :-কেমন আছেন,স্যার? আমার ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে বলল,ইশিতা। :-এইতো আছি একরকম। তোমার খবর কি?(আমি) :-ভালো।(বসতে বসতে বললো,ইশিতা) :-আজ এতো সাজগোজ করে আসার কারণ কি? কোথায়ও যাবে নাকি? (আমি) :-না,স্যার।আপনার জন্য সাজলাম,আর কি,,,, (মিনমিনিয় কথাটা বললো,যা আমার কানে পৌছালো) :-মানে,,,?

:-না,স্যার।কিছুনা। :-নাও বই নাও।আর এতদেরী করে আসো কেন? তোমার পরিক্ষার তো চারদিন বাকি,তাইনা? :-হুমম,আসলে স্যার সাজতে সাজতে একটু দেরী হয়ে গেলো। আচ্ছা,স্যা র,শাড়ীতে এবং সাজগোজে আমায় কেমন লাগছে,,,,?(ইশিতা) :-হুমম,ভালো।

(আমি) :-শুধু ভালো,,,?(মন খারাপ করে) :-না না,খুব ভালো।এবার তো বই নাও,,,,, :-স্যার,আজকে না আমার পড়তে মন চাইতেছে না,,, :-তাহলে আমি আজ আসি,,,,,, এই বলে আমি উঠতে যাবো,,,,, :-স্যার উঠছেন কেন? আমি তো বলি নাই পড়বো না,শুধু বললাম মন চাইতেছে না,,,,, :-ও,,,তাহলে আর কোন কথা না বলে পড়তে বসো,,, :-আচ্ছা,,,তার আগে আমা কয়েকটা কথার জবাব দেনতো,,,

:-আবার,,,আচ্ছা বলো,,, :-আচ্ছা,আমাকে আপনার পছন্দ হয়,,,?মানে কেমন লাগে,,,,? :-ভালো। :-তাহলে তো,আর কোন কথাই নাই,,,,,

:-মানে,তুমি কি বলতে চাইছো,,,,,?(আমি) :-আমি আপনাকে বলতে চাইছি যে,আমি আপনাকে ভালোবাসি,,,,, (ই শিতা) :-ভালোবাসি।হা হা হা,,,,তুমি হয়তো ভুলে গেছো আমি তোমার কি লাগি,,,? :-আপনি আমার স্যার হোন বা যাই হোন।তাতে আমার কিছুই আসে যায় না।আমি শুধু এতটুকু জানি যে,আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচবো না।আমি আপনাকে ভালোবাসি,,,, (একটু গরম হয়ে) :-আস্তে কথা বলো,,,,

:-আমি আস্তেই কথা বলতেছি।এখন আপনি আমাকে বলেন তো আপনি আমাকে ভালোবাসেন কিনা,,,,?

:-দেখো ইশিতা,আমি জানি না তুমি আমায় কতটুকু ভালোবাসো।আমি শুধু এতটুকু জানি যে,তুমি আমার ছাত্রী।আমার সাথে তোমার যায় না। সত্যি বলতে কি,আমিও তোমাকে পছন্দ করি। কিন্তু এই পছন্দ সেই পছন্দ না।যেটা তুমি ভাবতেছো।আর সামনে তোমার পরিক্ষা,তুমি এসব নিয়ে না ভেবে পড়ালেখায় মন দাও। এতে তোমার অনেক ভালো হবে,,,,,,

(নরমসু রে বললাম,আমি) :-আপনি আমাকে যাই বলুন,তা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নাই।আমি আপনার কাছে যা জানতে চাইছি সেটা বলুন।তা না হলে এর ফল ভালো হবে না,,,,, :-এই মেয়ে,,,তোমার সমস্যাটা কি?হুম।আমি তোমাকে পড়াতে এসেছি।আজাইরা আলাপ করতে না।আগামীদিন থেকে আমি আর তোমাকে পড়াইতে আসতেছি না,,,,, এই বলে আমি পড়ার টেবিল থেকে উঠে চলে আসতেছি,,,,,

:-ওই,আপনি নিজেকে কি ভাবেন,,,?হুম।আমি যেটা চাই ওইটা পেয়েই ছাড়ি।আপনি আমাকে ভালোবাসেন আর নাই বাসেন,তাতে আমার কিছু যায় আসে না।তবে আপনি এটা মনে রাখবেন,আমি শুধু আপনাকেই ভালোবাসি। আর যদি বিয়ে করি আপনাকেই করে ছাড়বো। এটা আমি বলে রাখলাম,,,,এখন আপনি আসতে পারেন,,,,,(একটু কাঁধো কন্ঠে, ইশিতা) :-সেটা সময়েই বলে দিবে।এককাজ করো,এসব চিন্তা বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মন দাও।আর আমি সত্যি বলছি,আগামীদিন থেকে আমি আর আসছি না,,,,,,,

এই বলে আমি চলে আসার জন্য ইশিতার রুম থেকে বাহির হয়ে আসলাম। তখনই,,, :-বাবা,আমি তোমার আর ইশিতার মধ্যকার কিছু কথা শুনেছি।তুমি ওর কথায় কিছু মনে করো না।আর তুমি ওকে পড়াতে আসবে।সামনে ওর পরিক্ষা।এখন তুমি যদি ওকে না পড়াও তাহলে পড়াবেটা কে,,,?এখন তুমি ওকে যদি না পড়াও,তাহলে আমরা টিচার পাবো কোথায়,,,? বাবা,তুমি আসবে তো,,,? (এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে গেলো,আন্টি মানে ইশিতার মা) :-আন্টি,আমার পক্ষে ওকে পড়ানো সম্ভব না। আপনিই বলেন,এসবের কোন মানে হয়?না আন্টি আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না,,,, :-বাবা,তুমি এভাবে না করতে পারো না,,,,,

:-তা ছাড়া আমার আর কিছু করার নেই,,,(আমি) :-কিছু করার নেই মানে। বাবা,ওর পরিক্ষার আর মাত্র চারদিন বাকি। তুমি এমন করতে পারো না।(আন্টি) :-একথাটা আপনি ইশিতাকে একটু বুঝিয়ে বলুন যে,ওর এখন পড়াশোনা করার দরকার,সামনে ওর পরিক্ষা আর হ্যা, আপনি যেহেতু এতো করে বলছেন,আমি আসবো। :-আচ্ছা,আমি ইশিতাকে বুঝিয়ে বলবো।আর বাবা,তুমি কিন্তু অবশ্যই আসবে,,,, :-আচ্ছা,এখন তাহলে আমি আসি,,,

এই বলে আমি পেছন দিকে একফাক তাকিয়ে দেখলাম ইশিতা দরজার পাশে দাড়িয়ে আছে। তারমানে ইশিতা,আমার আর তার মায়ের মধ্যকার আলাপ গুলো দরজার পাশে থেকে শুনেছে। শুনলে আমার কি? আমি আর কিছু না ভেবে ইশিতাদের বাসা থেকে বাহির হয়ে আসলাম। “কি মেয়েরে বাবা? সামনে পরিক্ষা।কোথায় এখন ভালো করে পড়াশোনা করবে।আর তা না করে কি সব নিয়ে ভাবছে।” ধ্যাত,এই মেয়েটা আমার মেজাজটা খারাপই করে দিলো। কিন্তু আপনারা এটা ভাববেন না যে,ইশিতা দেখতে খারাপ? আসলে ইশিতা দেখতে যেমন সুন্দর তেমন মায়াবতি ও এবং অনেক মেধাবিও বটে।এককথায় বলতে পারেন,ইশিতা হবে যেকোন ছেলের দেখার ক্রাশ। কিন্তু আমার এতে করে কোন মাথাব্যথাই নেই। কেন নেই,,,? সেটা আমি আপনাদের এখন বলতে পারবো না। ওহ হো,,,

আপনাদের তো আমি আমার পরিচয় দিতেই ভুলেই গেছি। তাহলে আপনাদের আমার পরিচয়টা দিয়েই দিই। তাহলে শুনুন,,,

আমি রাজু।এবারে মাস্টার্স শেষ করেছি এবং আজ থেকে আরো এক সপ্তাহ আগে একটা বেসরকারি প্রতিষ্টানে চাকরি ও পেয়ে গেছি। প্রায় সকল টিউশনিই ছেড়ে দিয়েছি। শুধুমাত্র ইশিতাদেরটা ছাড়তে পারি নাই। কেন পারি নাই? সে কারণটা হলো ইশিতার সামনে ইন্টারের ফাইনাল পরিক্ষা। মেয়েটা আমাকে খুব ভালোবাসে,সেটা আমি ভালো করেই বুঝি।আর ওকে আমি ও পছন্দ করি। কিন্তু এতে করে আমার কিছুই করার নাই। আজ থেকে সাত বছর আগে,ধরেন আমার ইন্টারের ফাইনাল পরিক্ষার পরেই আমি গ্রাম থেকে এই অচেনা শহরে এসে উঠি নিজেকে প্রতিষ্টিত করার জন্য। হ্যা,আজ আমি পেরেছি নিজেকে প্রতিষ্টিত করতে। এমনও সময় আমার গেছে,যে আমি না খেয়েও ছিলাম। এই শহরে এসে কষ্টটাকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে নিয়ে আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাই।

আবশ্যক,আমার পড়াশোনা চালানোর খরচ চালাতে এবং বাড়িতে টাকা পাঠাতে আমার করানো টিউশনি গুলোই এই পর্যন্ত ভুমিকা পালন করে গিয়েছে।এছাড়া আমার আর কোন উপায়ই ছিলো না। আপনাদের তো বলাই হয়নি,,,,

আমি হলাম একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে।বাড়িতে আমার মা-বাবা আর ছোট এক ভাই-এক বোন রয়েছে। আমি আমার পরিবারের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে এ শহরে আসি। আর আমাকে প্রত্যেক মাসে মাসে বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয়। আপনারা হয়তো এটা ভাবছেন,আপনাদের আমি কেন এসব বলছি? এসব বলার কারণটা আপনারা বুঝবেন আমার লেখার পরিপেক্ষিতে। যাইহোক আমি এবার ইশিতার সম্পর্কে কিছু বলি,,,,

ইশিতা হলো তার বাবা- মায়ের একমাত্র সন্তান।তার মা-বাবা তাকে খুব ভালোবাসে। টাকা-পয়সার অভাব নেই।তাই, ইশিতা যা চায় তাই পায়।তবে এটা ভাববেন না মেয়েটা অহংকারি। আর তার মা-বাবা হলো সহজ সরল মনের মানুষ। আমার মতে উনাদের মত মানুষই হয় না। আমি আজ দুবছর ধরে ইশিতাকে পড়িয়ে আসছি। তাই উনারা আমাকে নিজের ছেলের মতোই দেখে।উনারা আমার প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে সবসময়ই পাশে থাকেন। আমি যতগুলো টিউশনি করাইতাম,সবগুলো থেকে আমি এই টিউশনিটাতে যথার্থ পরিমানে অর্থ পেতাম।যার কারণে,আমাকে বাড়িতে টাকা পাঠাতে হিমশিম খেতে হতো না। আপনাদের তো একটা কথা বলাই হয় নাই,,,,,,

আমার এতো তাড়াতাড়ি চাকরি পাওয়ার পেছনে যার অবদান রয়েছে,তিনি হলেন ইশিতার বাবা। উনার সহযোগিতায় আমি বিনা ঘুষে এবং বিনা পরিশ্রমে এত সহজে চাকরি পাই। কারণ,বর্তমানে মামা- খালু ছাড়া চাকরি পাওয়াই দুষ্কর ও ভাগ্যের ব্যাপার।আর সেটা আমায় আপনাদের আর বুঝিয়ে বলতে হবে না।আপনার এসব ভালোই বুঝেন। আপনারা হয়তো বা,আমার এসব কথা বলার কারণটা বুঝে গিয়েছেন।আর যদি বুঝে না থাকেন,তাহলে আমিই বুঝিয়েই বলি,,,,,

ইশিতাদের অবস্থান আর আমাদের অবস্থানের কথাতো আপনাদেরকে আমার আর বলতে হবে না। ইশিতার বাবা-মা আমার জন্য যাই করেছেন,তা আমার জন্য অনেক সৌভাগ্যের। এখন আপনারাই বলেন,আমার কি উচিত হবে,উনাদের সরলতার সুযোগ নেওয়া,,,? এসকল কথা বিবেচনা করে,আমি ইশিতার দেওয়া ভালোবাসার প্রস্তাব প্রত্যাখান করি। যাইহোক,আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে আমি আমার ভাড়া বাসায় পৌছে গেলাম।

গল্পের বিষয়:
হাস্যরস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত