শারিফা= কি কর তুমি
আমি= কিছু না
শারিফা= লাঞ্চ করেছ??
আমি= হুম, তুমি??
শারিফা= হুম, জানো! বালুচরের কাশফুল গুলো অনেক বড় বড় হয়েছে। তোমার সাথে খুব খুবঘুরতে ইচ্ছা করছে।
আমি= আমি খুবি দুঃখিত, তোমার সাথে না থাকতে পারার জন্য
শারিফা= ভাবিকে বলেছি আমার সাথে যাওয়ার জন্য, কিন্তু ভাবি এতো শয়তান, ভাবিকে কোন ভাবেই রাজি করাতে পারলাম না।
আমি= হঠাৎ এতো ঘুরতে মন চাইল?
শারিফা= আমি তো লাড্ডুম, এই কারণে খালি ঘুরি।
আমি = আরে লাড্ডু তো খায়, ঘুরে না।
শারিফা= আরে লাড্ডু না লাড্ডুম।
আমি= আরে লাড্ডুও খায় ডুম ও খায়
শারিফা= এতো প্যাঁচাও কেন?
আমি = আরে লাড্ডুম না পেঁচাইলে ঘুরবে কিভাবে
শারিফা= হুম, তুমি লাড্ডূম প্যাঁচাও, আর আমি ঘুরি।
আমি= হুম, ঘুড়িও ঘুরে, তবে আকাশে, ঘুড়ি ঘুরাইতে নাটাই লাগে।
শারিফা= ওরে আল্লাহ এই শয়তান টার হাত থেকে আমাকে বাচাও। খালি জিলাপির মত প্যাঁচায়।
আমি = জিলাপি খাবে??
শারিফা= নাহ দরকার নাই, নুডলস এর কথা বলে তুমি আমাকে বিছার ফটো দিয়েছ, জিলাপির কথা বলে কিসের ফটো দাও আল্লাহ ই জানে। তোমার কোন ভরসা নাই, আমি রিস্ক নিতে চাইনা।
আমি= ওকে, বাদ দাও, মনে কর…
শারিফা= আমি কোন কিছু মনে করতে পারবো না।
আমি= ওকে, মনে কর তোমার বান্ধবি পারভিন
শারিফা= ওকে, মনে করলাম।
আমি= মনে কর পারভিন ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড এর বেয়ার গ্রিল এর মত কাটা চামিচ দিয়ে বড় একটা বিছা ধরল, বিছাটা কাটা চামিচের আগায় নড়াচড়া করছে, তারপর পারভিন একটা কামড় দিল, অর্ধেক মাটিতে পরে লাফাচ্ছে আর বাকি অর্ধেক পারভিনের মুখের ভিতর নড়াচড়া করছে, পারভিন আরেকটা কামড় দিল এইবার বিছার পেটের যত গসাগু আর লসাগু আছে সব পারভিনের ঠোঁটে এসে লাগলো, পারভিন জিব্বা দিয়া ঠোঁট চেটে পরিষ্কার করল।
শারিফা= ইছ, ছি ছি, ইয়াক। কি শয়তান রে!!
আমি= এতো সুন্দর খাবার দৃশ্য ইমেজিন করতে কেমন লাগল তোমার??
শারিফা= কালকে তোমাকে পাই, পরে বুঝাবো কেমন লাগছে। শয়তান খাওয়ার সময় এই কথা মনে পরলে আমার খাওয়া রফাদফা হয়ে যাবে।
আমি= আচ্ছা শীতকাল তো এসেই পরেছে। শীত কালে তোমার কি করতে ভালো লাগে?
শারিফা= হুম, শীতকালে খাইতে ভালো লাগে, ঘুমাতে ভালো লাগে, কুয়াশা দেখতে ভালো, কুয়াশার সকালে হাটতে ভালো লাগে। তোমার হাত ধরে শীতের সকালে ঘন কুয়াশার মধ্যে হাটা আমার খুব ইচ্ছা।
আমি= হুম, শীতের মধ্যে আমারে মারার প্ল্যান।
শারিফা= একটা মাইর দিব শয়তান
আমি= আরে নাহ দুষ্টামি করলাম, কুয়াশার মধ্যে হাঁটতে আমারও খুব ভালো লাগে। এখন রাখি, কালকে কিন্তু কলেজে আসবা।
পরের দিন আমি আর শারিফা তিতুমির কলেজের সামনে থেকে বাসে উঠি, উদ্দেশ্য হাতিরঝিল। কিন্তু কিছু দূর যেতেই বাসে কোন একটা প্রবলেম হওয়ার কারণে বাসের হেল্পার আমাদেরকে অর্ধেক ভাড়া ফেরত দিয়ে মাঝ পথে নামিয়ে দেয়। আমরা একটা রিক্সা নিয়ে গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হতে থাকি। কিছুক্ষন পর একটা সিগন্যালে গিয়ে রিক্সা থামে, আমার হাতের ডান পাশে একটা গাড়ি এসে থামে, গাড়িতে ফুটফুটে চাদের মত সুন্দর একটা শিশু কপালে কালো ফোঁটা দেয়া, আমাদের দিকে তাকিয়ে খিলখিলি করে হাসতে থাকে শারিফাও প্রত্যুত্তরে মিষ্টি হাসি দেও ওর দেখা দেখি আমি হাসতে থাকি। এভাবে অনেকক্ষণ চলতে থাকে।গাড়ি আবার চলতে শুরু করে, বাচ্চাটা আমাদেরকে টাটা দেয়, আমরাও হাত নাড়িয়ে টাটা দেই। কিছুক্ষন পর শারিফা আমাকে বলে= তোমারও এমন একটা কিউট মেয়ে হবে
আমি= খাইসেরে!! কি বল তুমি, যাক তাও ভালো। তুমি মহাম্মদুল্লাহর মত নাম রাখ নাই।
শারিফা= মহাম্মদুল্লাহ কে??
আমি= আমার এক ফ্রেন্ড, ও আর ওর গার্ল ফ্রেন্ড মিলে বাচ্চাকাচ্চার নামও ঠিক করে ফেলছে। বাচ্চাকাচ্চা এক হালি নিবে নাকি দুই হালি নাকি ফুটবল টিম বানাবে তাও ফাইনাল করে ফেলছে।
শারিফা= ছি! এই ভাবে বলে না। সবাই সুন্দর একটা সংসারের স্বপ্ন দেখে।
আমি= হুম, পরে যখন দুই হালি বাচ্চা এক সাথে ইয়ে করব, সংসারের সৌন্দর্যে পুরা এলাকা আলোকিত হয়ে যাবে।
শারিফা= এই ওর সংসার, ওর বাচ্চাকাচ্চা তোমার কি?
আমি= আমার আবার কি। সবাই যদি ফুটবল টিম বানানের চিন্তা করে তো ফুটবল খেলা দেখবে কারা
শারিফা= ও আল্লাহ এই বান্দরের হাত থেকে আমাকে বাচাও। এই তুমি চুপ কর, তোমার কথা শুনে আমার মাথা ব্যাথা করছে।
সন্ধ্যা বেলা বাসায় এসে ফেইসবুকে একটা গল্প পোস্ট করি, গল্পের টাইটেল “বিএফ মানে বেস্টফ্রেন্ড”। গল্পের মুল চরিত্রের নাম ছিল“মেঘবালিকা” নামের একটা মেয়ে, অনেকেই আমাকে বলেছে গল্পটা অনেক রিয়েল রিয়েল লাগে। আর মরার উপর খাড়ার ঘা হল সেই গল্পে মেঘবালিকা নামের একটা মেয়ের কমেন্ট। এইবার তো সবাই ভাবছে কাহিনী কিছু একটা হচ্ছে
এশারের পর শারিফাকে ম্যাসেজ দেই, কিন্তু ম্যাসেজের উত্তর আমার এক্সপেকটেশন অনুযায়ী ছিল না, কেমন জানি ম্যাসেজের উত্তর গুলো ছোট ছোট হচ্ছিল, হুম, না, এই টাইপের শব্দ গুলো দিয়েই কথা শেষ। ভাবলাম শারিফা হয়ত আমাকে এভয়েড করার চেষ্টা করছে। মানুষ সব কিছু সহ্য করতে পারে কিন্তু প্রিয় মানুষের এড়িয়ে চলা কেওই সহ্য করতে পারেনা। আমিও পারিনি তাই আমি সাথে সাথে ওকে বায় বলে ফেইসবুক থেকে লগ-আউট দেই।
শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম শারিফা কেন আমাকে এভয়েড করার চেষ্টা করছে, কি হয়েছে শারিফার?? শারিফা কি আমার সাথে কথা বলতে চায় না?? মেয়েদের মন বোঝা বড়ই কঠিন কাজ। নাকি অন্য কিছু হয়েছে?? কোন কারণে শারিফার মন খারাপ নাতো??? যদি ওর মন খারাপ থাকে তাহলে আমার উচিৎ ওকে ইমোশনাল সাপোর্ট করা, ওর পাশে থাকা, ওকে একা ফেলে যাওয়া মোটেও উচিৎ হবে না। আমি আবার ফেইসবুকে লগইন করি শারিফা তখনও লাইনে ছিল। আমি শারিফাকে ম্যাসেজ করি= তোমার কি মন খারাপ?? bye
শারিফা= হুম
আমি= কি কারণে মন খারাপ? bye
শারিফা= আরেকবার bye বললে ইচ্ছা মত মাইর দিমু।
আমি= ওকে, কি কারণে তোমার মন খারাপ সেটা বল
শারিফা= জানিনা
আমি= তোমার মন খারাপ আর তুমি জানো না, কি কারণে তোমার মন খারাপ। নাকি বলতে চাও না।
শারিফা= আসলে আজকে আমার সারা দিন হালকা জর ছিল, কিন্তু কেও আমাকে জিজ্ঞেস করে নাই। তাই মন খারাপ
আমি= তুমি কি এখনও ছোট আছ যে সবাই তোমাকে এসে জিজ্ঞেস করবে তোমার কি জর হয়েছে নাকি? আমার মনে হয় না এটা তোমার মন খারাপ হওয়ার রিজন।
শারিফা= সত্যি, এই কারনেই আমার মন খারাপ
আমি= তুমি আমাকে বলতে চাচ্ছ না। ওকে, কোন সমস্যা নাই। ডিনার করেছ??
শারিফা= হুম, তুমি করেছ??
আমি= হুম।
শারিফা= আচ্ছা মেঘবালিকা কে??
আমি= আরে মেঘবালিকা তো এমনেতেই একটা নাম দিয়েছি।
শারিফা= ও,
আমি= তোমার তো জর আছে, এখন ঘুমাও।
পরের দিন শারিফা ফেইসবুকে একটা কবিতা পোস্ট করে-
মুক্ত করে দিলাম তরে……… যেতে পারিস অনেক দূরে
ভালবাসি এই কথা টি……… বলব না আর তরে
ভাল যদি থাকিস তবে……… ফিরে আসিস নারে
কবিতা টা পড়ার পরে আমার একটু খটকা লাগলো। শারিফার মন খারাপের কারণ কি আমি?? ও কি আমার উপরে রাগ করল নাকি। কবিতা টা আরও অনেকের নজরেও পরেছে, সবার মনেই একটা প্রশ্ন, শারিফার কি হল?? ও এমন কবিতা কেন পোস্ট করল? এদের মধ্যে একজন হল আমার ফ্রেন্ড, সমাজের বিশিষ্ট লাভ গুরু হালিম । ও আমাকে ফেইসবুকে নক করে= কিরে, শারিফার কি হল??
আমি= কিছুই তো হয় নাই
হালিম = তো ফেইসবুকে এমন কবিতা পোস্ট করল কেন?
আমি= জানিনারে দোস্ত, আমারে তো কিছু বলে নাই।
হালিম = শোন, রাগ অভিমান জীবনেরই একটা অংশ। ভালবাসা ছাড়া জীবন টা ফাকা একটা দেহ। তাই যা বলি মন দিয়া শোন।
শুরু হয়েছে লাভ এডভাইস দেয়া
আমি= হুম, বল তুই আমি শুনি
হালিম = নিজেকে তার মাঝে মিলায়া ফেল আর তাকেও তোর মাঝে মিলায়া ফেল। ভালোবাসা মানে তার খেয়াল রাখা। বুজলি।
আমি= হুম, বুজ্জি, এগুলা ফেইসবুকে আমি আগেও পড়ছি। তারপর কি?
হালিম = ভালবাসা মানে তাকে কাদিয়ে নিজেও কেদে ফেলা।
আমি=ওরে আল্লাহ, এই কারনেই তুই একটারে কান্দাইয়া আরেকটারে ধরছ
হালিম = জীবন টাকে কঠিন নয় বরং সহজ করে তুল। সিদ্ধান্ত নিতে ভয় করিস না , ভয় কে জয় করতে শেখ। কারণ এক দিন হয়ত তোর মনের ভয় কেটে যাবে কিন্তু সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ থাকবে না।
আমি= ভাই তরে তোর সমস্ত গার্লফ্রেন্ডের দোহায় লাগে এইবার থাম। নয়ত আমি হার্ট এটাক করমু।
হালিম = ওকে , যা শারিফাকে বুঝা।
সন্ধ্যার পর শারিফা আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে জিজ্ঞেস করে মেঘবালিকা কে।
আমি= আমার এক ফ্রেন্ডের ফেইক আইডি।
শারিফা= অনেক গুলা ছবিও আছে, ওগুলা কার??
আমি= একজন ইন্ডিয়ান মডেল।
শারিফা= ও…
আমি= এতক্ষণে বুঝতে পারছি, তোমার মন খারাপ কেন??
শারিফা= কি??
আমি= তুমি ভাবছ, মেঘবালিকা আইডির মেয়ের সাথে আমার কিছু একটা চলছে।
শারিফা=হুম, সত্যি, আমার অনেক কান্না পায়, আমি ছাদে গিয়ে কাঁদতে থাকি আর এক হাতে চোখ মুছতে থাকি যেন কেও না দেখে। আর এখন কি করতে মন চাচ্ছে জানো??
আমি= কি??
শারিফা= মন চাইতাছে তোমারে ইচ্ছামত মাইর দেই।
আমি= পারলে মাইর দেও
শারিফা= দিমুইতো, কালকে ক্লাসে আসো, পরে দেখ কি করি?
আমি= ও তোমার ঐ কবিতা পড়ে আমিও একটা কবিতা লেখেছি।
শারিফা= কি কবিতা??
বেঁধে রাখো চুলে… যেতে চাই না দূরে
ভালবাসি এই কথাটি… বলবে বারে বারে
যতই থাকি দূরে… আসব আমি ফিরে
রাগে অভিমানে… থাকবো তোমার পাশে
শারিফা= তুমি কার পাশে থাকবা?
আমি= তোমার পাশে, UNTIL THE REST OF MY LIFE
শারিফা= সত্যি
আমি= ওয়াদা রইল। কি আর কিছু চাই?
শারিফা= না, আমার আর কিছুই চাইনা, শুধু তুমি আমার পাশে থাকলেই হল। তুমি আমার পাশে থাকলে আমি যেকোনো কঠিন পথ পারি দিতে পারবো। আমি আর কিছু চাইনা। না শরৎ এর কাশফুল, না শীতের ঘন কুয়াশা।
আমি= সত্যি
শারিফা= হুম
আমি= ও শারিফা, একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছি,
শারিফা= কি কথা
আমি= রাগ করবে নাতো
শারিফা= নাহ, আমি রাগ করবো না
আমি= নাহ, তুমি রাগ করবে
শারিফা= সত্যি আমি রাগ করবো না
আমি= বিশ্বাস করি না
শারিফা= এখন বলবা নাকি মাইর খাইবা
আমি= এইযে তুমি রাগ করতাছ
শারিফা= ওরে আল্লাহ, এই ছেলেটা তো ভারী বাঁদর… ওকে সব কিছু বাদ,আমি রাগ করবো না। প্লিজ এইবার বল
আমি= ওকে, বলছি
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।।
।
।
।
।
।
।
।
।
। HAPPY BIRTH DAY TOO YOU