খতেগঞ্জের এক জমিদার, তাঁর বড় সখ, গোপাল ভাঁড়ের মত তার সভাতেও এমনই একটি ভাঁড় রাখেন। কিন্তু মনে মত ভাঁড় আর তিনি পান না। একদিন গোপালকে ডেকে বললেন, বাপু গোপাল। তুমিই একটা লোক আমায় বাজিয়ে দেখে দাও- যেন মোটামটি তোমার মত হয়। গোপাল রাজী হয়ে বললে, তা বেশ। এ কাজের জন্য ঢ্যাড়া দিয়ে দিন, আমি তার মধ্যে থেকে উচিত লোক বাছাই করে দেব। বিজ্ঞপ্তি শুনে ভাঁড়ের কাজের জন্য উমেদার হয়ে অনেকেই এল। গোপাল তাদের অনেককে পরীক্ষা করতে লাগল কিন্তু কেউই পারল না। গোপালের ধাঁধার ঠিকমত জবাব না দিতে পে কেউ কেউ বাতিল হয়ে অনেকেই আবার গোপালের নাম শুনেই বে ইজ্জতির ভয়ে আগেই পিছুটান দিল। থাকল বাকী মাত্র দুজন।
গোপাল কী বাবা? পারবে মোসায়েবী করতে?
১ম লোক নিশ্চয় পারবো। পারবো না মানে?
গোপাল কি করে বুঝলে যে পারবে?
১ম লোক এর আর বোঝাবুঝি কি? জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ না জানি কোনটা? সামান্য মোসাহেবি কাজটা আর পারবো না। না পারার কোন মানেই বুঝতে পারছি না বা এর কোন হেতুই আমার মাথায় ঢুকছে না। গোপাল কি জানি বাপু, আমার কিন্তু সন্দেহ হচ্ছে, তুমি বোধ হয় পারবে না। তোমার কি মনে হয়?
১ম লোক বলেন কি মশায়। আপনি পরীক্ষা করে দেখুন না- পারি কিনা। যদি না পারি চলে যাব।
গোপাল পরীক্ষা তো হয়েগেল বাপু। মোসাহেব একমাত্র কাজ হলো, সব কথাতেই সায় দেওয়া। তুমি সেই কথাটাই জানো না। তোমার দ্বারা কাজ চলবে না। অতএব, তুমি বিদায় নিতে পারো। এবার তোমাকে আমাদের প্রয়োজন নাই। প্রথম উমেদারটিকে বিদেয় দিয়ে দ্বিতীয় উমেদারকে ঘরে ডাকল গোপাল। তবে সঙ্গে চললো এইরকম প্রশ্নোত্তর- গোপাল কি হে বাপু পারবে?
২য় লোক, আজ্ঞে, আপনার কি মনে হয়? পারবো কি পারবো না। গোপাল আমার তো মনে বাপু, তুমিও পে উঠবে না।
২য় লোক। তাইতো। আমারও কেমন ভয় হচ্ছে হয়তো পেরে উঠবো না। না আমি পেরে উঠব না বটে! গোপাল কিন্তু আবার এই ভাবছি পারবেই বা কেন?
২য় লোক আজ্ঞে ঠিক। আমিও ওই কথাই ভাবছি, কেনই পারবো না? গোপাল তবে শিখতে কিছু সময় লাগতে পারে বটে। তুমি শিখে নেবে কি?
২য় রোক তা আর লাগবে না? না শিখলে কোন কাজটা পারা যায় বলুন। আপনি কথাটা বিলক্ষণ ধরেছেন। গোপাল হ্যা তুমি বেশ পারবে, মনে হচ্ছে। আমার মনে হয় তুমি পারবে।
২য় লোক আজ্ঞে নিশ্চয়। আমার মনে হচ্ছে বেশ পারবো আমি। গোপাল তবে, কখনো কখনো ভুল চুক হতে পারে অবশ্য।
২য় লোক তা হতে পারি বইকি। ভুল কার না হয় বলুন? সকলেরই হয়। গোপাল মানুষেরই অল্প বিস্তর ভুল থাকে…….’
২য় লোক তা আর বলতে বিলক্ষণ বিলক্ষণ। অল্প বিস্তর ভুল আছে বলেই মানুষ দেবতা নয়। আর দেবতারাই বা কমটা কিসে? তেনাদেরও ভুল ভ্রান্তি ঘটে কখনও কখনও । গোপাল খুশি হয়ে মুখে হাসি নিয়ে তার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললে, তুমি এখনই একজন পাকা মোসাহেব, বৎস। এ কথায় আর আমার একতিল সন্দেহ নেই। গোপালের সুপারিশে এই দ্বিতীয় লোকটিকেই বহাল করলেন জমিদার বাবু। কিছুদিন যেতে না যেতেই তিনি বুঝলেন ঠিক লোককেই গোপাল এনে বসিয়েছে তাঁর সভায়।
গল্পের বিষয়:
হাস্যরস