নাসিরুদ্দিন হোজ্জার কয়েকটি গল্প

নাসিরুদ্দিন হোজ্জার কয়েকটি গল্প

সবাইকে সন্তুষ্ট করা যায় না
ছেলেসহ গ্রামের দিকে যাচ্ছে নাসিরুদ্দিন হোজ্জা। ছেলেটা বসেছিল গাধার পিঠে। পথে দুজন মহিলার সঙ্গে তাদের দেখা হলো। তাদের একজন অন্যজনকে বলছে:

‘আজকালকার ছেলেদের অবস্থা দেখো! বুড়ো বাবা হাঁটছে আর ছেলেটা আরামে গাধার পিঠে চড়েছে। আশ্চর্য!’

‘বাবা’, বলে উঠল ছেলেটা, ‘আমার বদলে তুমিই চড়ো, কেমন? কই, এসো, ঝামেলা করো না। তুমিই গাধার পিঠে চড়ো!’

তারপর রাস্তা ধরে এগিয়ে চলল ওরা। গাধার পিঠে খোজা, ছেলেটা হাঁটছে। কিছুক্ষণ বাদে দুজন খুঁড়িয়ে চলা বয়স্ক লোকের সঙ্গে দেখা হলো।

‘আরে, বুড়ো মিয়া!’ বলল ওরা, ‘তোমার হাড়গোড় তো এমনিতেই বুড়িয়ে খটখটে হয়ে গেছে। এক পা কবরে চলে গেছে তোমার। কিন্তু এই ছোকরা, ওর তোমার মতো বুড়িয়ে যাওয়ার দরকার কী? ওকে চড়তে দাও!’

ওরা বিদায় হলে ছেলেকে গাধার পিঠে নিজের পাশে তুলে নিল হোজ্জা। কড়া রোদের ভেতর এগিয়ে চলল ওরা। এবার রাস্তার পাশে বসে গল্পগুজবে মত্ত একদল লোকের সামনে হাজির হলো।

‘কী নিষ্ঠুর! আহা, বেচারা পশুটা। এটা বড্ড বাড়াবাড়ি। দুজন চেপে বসেছে! জানোয়ারটা মরবে তো। লোকটার দিকে তাকাও, এ যে দেখছি খোজা!’

‘উফ্, খোদার কসম,’ বলল হোজ্জা। গাধার পিঠ থেকে নেমে দুজনই গাধাটাকে সামনে রেখে পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করল। কিন্তু পরক্ষণেই রাস্তার পাশে দাঁড়ানো দুজন লোকের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল ওদের।

‘হায় আল্লাহ, বুদ্ধুগুলোকে একবার দেখো! গাধাটা যাচ্ছে আগে, পিঠের ওপর কোনো বোঝা ছাড়াই লাফাতে লাফাতে চলেছে ওটা, আর ঘামে ভিজে ধুলোয় আচ্ছন্ন হয়ে পেছন পেছন চলেছে ওরা। দুনিয়ায় যে কত বেকুব আছে!’ অবশেষে ছেলের দিকে ফিরে খোজা বলল, ‘শোনো! মানুষের জিভের ধার থেকে যে রেহাই পেয়েছে, তাকে সাবাস দিই! তোমার কাজে খুশি নয়, এমন লোক সবসময়ই পাবে। তো স্রেফ আল্লাহকে খুশি করতেই কাজ করো।’

পেছন ফিরে গাধার পিঠে
একদিন হোজ্জা এবং তার ছাত্ররা পড়ার জন্য যাচ্ছিল। গাধার পিঠে পেছন ফিরে বসেছিল খোজা। ‘হোজ্জা,’ ওকে প্রশ্ন করল ওরা, ‘কী কারণে ওভাবে বসে আছেন? ব্যাপারটা অস্বস্তিকর না?

‘আমি অন্যভাবে বসলে,’ জবাব দিল সে, ‘তোমরা তো সবাই আমার পেছনে পড়ে যাবে, তাহলে মুখোমুখি থাকতে পারব না। এভাবে চড়াই শ্রেয়।’

আমরা এখানে উঠছি না?

এক রাতে এক চোর হোজ্জার বাড়িতে ঢুকে সব জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে গেল। লোকটা বিদায় নিতেই হোজ্জা হাতের কাছে পাওয়া প্রথম জিনিসটা নিয়েই— ঘটনাক্রমে সেটা ছিল একটা ছাঁকনি— অনুসরণ করল তাকে। চোরের পিছু পিছু তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করল। বিস্মিত চোর বলল, ‘আমার বাড়িতে আপনি কী করছেন?’

‘তুমি আমাদের সব জিনিস এখানে নিয়ে এলে— ভাবলাম আমরা বুঝি এখানেই এসে উঠব।’

যারা জানে তারা অন্যদের বলুক
একদিন গুরু নাসিরুদ্দিন হোজ্জা এক মসজিদের মিম্বার থেকে ভাষণ দিচ্ছিল। ‘হে ইমানদারগণ, তোমরা কি জানো, আমি তোমাদের উদ্দেশে কী বলতে যাচ্ছি?’

শ্রোতারা জবাব দিল, ‘না।’

তো হোজ্জা তখন ঘোষণা দিল, ‘যারা আমি কী বলতে যাচ্ছি, তার সম্পর্কে এতটুকু ধারণা রাখে না, তাদের সামনে কিছু বলার কোনো ইচ্ছাই আমার নেই।’ বলে মিম্বার থেকে নেমে মসজিদ ছেড়ে বেরিয়ে গেল সে।

লোকজন বিব্রত বোধ করল। আরেকদিন তাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে এল ওরা। সেদিন মিম্বরে উঠে একই প্রশ্ন করল সে। কিন্তু এবার সবাই উত্তর দিল, ‘আমরা জানি।’

‘বেশ, আমি কী বলতে যাচ্ছিলাম, সেটা যখন তোমরা আগে থেকেই জেনে গেছ, আমি আর তোমাদের সময় নষ্ট করব না।’ আবার মসজিদ থেকে বের হয়ে গেল সে। সবাই তো রীতিমতো হতভম্ব।

‘এর পরের বার যখন সে আসবে, আমরা বলব, আমাদের কেউ কেউ জানি আর কেউ কেউ জানি না।’

তাই সই, আরেকদিন মিম্বারে দাঁড়িয়ে সেই প্রশ্ন করল হোজ্জা।

বামদিকে যারা ছিল তারা বলল, ‘আমরা জানি।’

আর যারা ডানপাশে ছিল তারা বলল, ‘আমরা জানি না।’

‘বেশ তো,’ বলল নাসিরুদ্দিন, ‘আমি কি বলতে চাই যারা জানো, তারা বাকি অর্ধেককে বলে দাও!’ তার পর মসজিদ থেকে বিদায় হয়ে গেল সে।

অবিশ্বাস্য হিসাব
এক রমজানে নাসিরুদ্দিন হোজ্জা ভাবল, ‘আমি কেন অন্য সবার মতো রোজা রাখব? একটা গামলা জোগাড় করে রোজ সেটায় একটা করে পাথর রাখব। তিরিশটা পাথর জমলে ভোজের ব্যবস্থা করব!’

কিন্তু কয়েক দিন পেরুনোর পর মেয়ে তার মতলব টের পেয়ে একমুঠি পাথর রেখে দিল ওই গামলায়! কয়েক দিন পর কয়েকজন লোক জানতে চাইল, ‘হোজ্জা, আজ রমজান মাসের কত তারিখ?’

‘একটু অপেক্ষা করো, বলছি,’ বলে ঘরে ঢুকে গামলা খালি করে পাথরগুলো গুনতে শুরু করল। একশ বিশটা পাথর দেখে আপনমনে ভাবল, ‘সত্যি কথা বললে নির্ঘাত আমাকে পাগল ঠাওরাবে ওরা।’ ওদের কাছে ফিরে এসে বলল, ‘আজ রমজানের চুয়াল্লিশ তারিখ।’

‘হায় হোজ্জা, কী বলছ তুমি? রমজান মাসে তো মাত্র তিরিশ দিন!’

‘তাই, কিন্তু আমি তো কমিয়েই বলেছি! গামলার হিসাব ধরলে তো আজ রমজানের একশ বিশ তারিখ হয়!’

নাসিরুদ্দিন আর জোব্বা
সকাল ৮টা। দোতলায় ছিলেন নাসিরুদ্দিন। নিচে রান্নাঘরে ছিল তার স্ত্রী।

‘তোমার নাশতা হয়ে গেছে!’ বলে হাঁক ছাড়ল তার স্ত্রী। মিনিট দুই পর হলঘর থেকে জোরালো আওয়াজ শোনা গেল।

ধুপধাপ!

‘হায় খোদা! কিসের আওয়াজ?’ জানতে চাইল সে।

থালা ফেলে হলঘরের দিকে ছুটল। সিঁড়ির একেবারের পায়ের কাছে চিত্পটান হয়ে আছে নাসিরুদ্দিন।

‘অত জোরে কিসের শব্দ হলো?’ জানতে চাইল তার স্ত্রী। ‘তুমি ঠিক আছো তো, নাসিরুদ্দিন?’

‘হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি, বিবি,’ জবাব দিল নাসিরুদ্দিন। ‘আমার জোব্বাটা সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছিল আরকি।’

‘কিন্তু জোব্বা তো অমন শব্দ করে না!’ বলল তার স্ত্রী। ‘জোরালো ধুপধাপ শব্দ পেলাম!’

‘ইয়ে… মানে কিনা,’ বলল নাসিরুদ্দিন, ‘তখন জোব্বাটার ভেতর আমি ছিলাম।’

নাসিরুদ্দিন আর মাংস
কসাইয়ের দোকান থেকে তিন কিলো মাংস কিনে বাড়ি ফিরে স্ত্রীর হাতে তুলে দিল নাসিরুদ্দিন। তার পর কাজে চলে গেল সে।

তার স্ত্রী নিমেষে বাইরে গিয়ে বান্ধবীদের ডেকে নিয়ে এল। ‘আজ আমার সঙ্গে দুপুরের খাবার খাবে এসো!’ বলল সে। সেদিন বিকালে নাসিরুদ্দিন বাড়ি ফিরে এলে টেবিলে এক টুকরো রুটি আর পেঁয়াজ তুলে দিল তার স্ত্রী।

‘কিন্তু সকালে তোমার হাতে যে মাংস দিলাম, তার কী হলো?’ জানতে চাইল নাসিরুদ্দিন।

‘বিড়াল খেয়ে নিয়েছে,’ জানাল তার স্ত্রী।

চট করে বাইরে গিয়ে একটা পাল্লা নিয়ে এল নাসিরুদ্দিন। বিড়ালটাকে তুলে পাল্লায় বসিয়ে দিল। কাঁটায় কাঁটায় তিন কিলো ওজন দেখাল ওটা।

‘বড় তাজ্জবের ব্যাপার,’ বলল সে। ‘বিড়ালের ওজন তিন কিলো হলে মাংস গেল কোথায়। আর এটা যদি মাংস হয় তো বিড়াল গেল কোথায়?’

নাসিরুদ্দিন আর ভিখিরি
একদিন শোবার ঘরের মেঝেতে পানি জমে রয়েছে দেখল নাসিরুদ্দিন। চোখ তুলে মাথার ওপর তাকিয়ে বলে উঠল, ‘হায় আল্লাহ, ছাদে ফুটো দেখতে পাচ্ছি। মেরামত করতে হয়।’

মই বেয়ে উপরে উঠে কাজে লেগে গেল সে।

এক গরিব ভিক্ষুক হাজির হলো।

‘নাসিরুদ্দিন!’ হাঁক ছাড়ল সে।

‘কী চাও?’ জানতে চাইল নাসিরুদ্দিন।

‘নিচে নেমে এসো, তারপর বলছি!’

খুশি হতে পারল না নাসিরুদ্দিন, তবু নিচে নেমে এল সে। ভিখেরির কথা শুনল।

‘এবার বলো,’ জানতে চাইল নাসিরুদ্দিন। ‘কী দরকার?’

‘আমি গরিব মানুষ। আমাকে কিছু টাকা দিতে পারো?’

‘আমার সাথে এসো!’ বলল নাসিরুদ্দিন।

মই বেয়ে আবার উঠতে শুরু করল সে। ওকে অনুসরণ করল ভিখিরি। দুজনই ছাদে ওঠার পর নাসিরুদ্দিন ভিখিরির দিকে ফিরে বলল, ‘হবে না!’

নাসিরুদ্দিন আর পণ্ডিত
একটা জটিল সমস্যা নিয়ে আলাপ করবে বলে নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে সময় ঠিক করল এক পণ্ডিত।

‘আগামীকাল দুপুর ১২টায় তোমার বাড়িতে আসছি আমি,’ বলল সে।

পরদিন নাসিরুদ্দিনের বাড়িতে এসে কড়া নাড়ল সে। কেউ সাড়া দিল না। ফের কড়া নাড়ল সে। তবুও কোনো সাড়া মিলল না। জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে কাউকে দেখতে পেল না সে।

দারুণ ক্ষেপে গেল পণ্ডিত। এক টুকরো চক নিয়ে দরজার গায়ে বড় বড় হরফে গাধা লিখে রাখল সে।

পরে বাড়ি ফিরে লেখাটা দেখল নাসিরুদ্দিন। সঙ্গে সঙ্গে পণ্ডিতের বাড়ির দিকে ছুট দিল সে।

‘আমি খুবই দুঃখিত,’ বলল সে। ‘তোমার আসার কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। দরজায় তোমার নাম লেখা দেখেই না মনে পড়ল!’

নাসিরুদ্দিন আর হারানো চাবি
একদিন সন্ধ্যায় নাসিরুদ্দিনের পড়শি ঘরে ফেরার সময় দেখে বাঁধাকপির ক্ষেতে হামাগুড়ি দিচ্ছে নাসিরুদ্দিন।

‘করছ কী, নাসিরুদ্দিন?’ জানতে চাইল সে।

‘চাবি খুঁজছি,’ উত্তর দিল নাসিরুদ্দিন।

‘আমি সাহায্য করছি তোমাকে,’ বলে চাবির খোঁজে লেগে গেল সেও। সে রাতে পূর্ণিমা ছিল। তো ভালোভাবেই সব দেখা যাচ্ছিল। বাঁধাকপি আর পেঁয়াজের ক্ষেতে খোঁজ চালাল ওরা। গাজরের ক্ষেতেও খুঁজল, কিন্তু চাবির দেখা মিলল না।

‘ঠিক কোথায় হারিয়েছিলে চাবিটা?’ জানতে চাইল লোকটা।

‘আমার ঘরে,’ জবাব দিল নাসিরুদ্দিন।

‘তাহলে ক্ষেতে খুঁজছ কী কারণে?’

‘কারণ বাড়ির ভেতরের চেয়ে এখানে আলো অনেক বেশি,’ উত্তর দিল নাসিরুদ্দিন।

নাসিরুদ্দিন আর ভালুক শিকার
একদিন সুলতান নাসিরুদ্দিনকে তার সঙ্গে ভালুক শিকারে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানালেন।

ভালুককে ভীষণ ভয় পেত নাসিরুদ্দিন। কিন্তু সুলতানকে ‘না’ বলার জোর ছিল না তার।

‘শুকরিয়া,’ বিনয়ের সাথে জবাব দিল সে। ‘কাল ঠিক ভোরেই প্রাসাদে হাজির হয়ে যাব।’

তারপর পাঁচদিন আর ধারেকাছে থাকল না নাসিরুদ্দিন। তারপর গ্রামে ফিরে এলে পড়শি জানতে চাইল, ‘তো কেমন হলো ভালুক শিকার?’

‘দুর্দান্ত!’ জবাব দিল নাসিরুদ্দিন।

‘কতগুলো ভালুক দেখেছ?’ জানতে চাইল পড়শি।

‘একটাও না!’ উত্তর নাসিরুদ্দিনের।

‘তাহলে ভালুক শিকার দুর্দান্ত বললে কেন?’

মুচকি হেসে নাসিরুদ্দিন বলল, ‘কারণ সুলতান যখন তোমাকে ভালুক শিকারের দাওয়াত করে আর ভালুককে তুমি ভয় পাও, তখন ভালুকের দেখা না পাওয়াটা দুর্দান্ত ব্যাপার না!’

নাসিরুদ্দিন আর কাক
একদিন নাসিরুদ্দিন এক টুকরো সাবান কিনে এনে স্ত্রীকে দিল।

‘এই যে সাবান, বিবি। আমার শার্টটা ধুয়ে দেবে?’

বাগানে গিয়ে শার্টটা ধুতে শুরু করল তার স্ত্রী। হঠাত্ বিরাট একটা কাক উড়ে এসে সাবানটা মুখে নিয়ে সটকে পড়ল। নাসিরুদ্দিনের স্ত্রী মুখ তুলে তাকিয়ে একটা গাছের ডালে বসে থাকতে দেখল ওটাকে। রাগে চিত্কার করে উঠল সে। তার কণ্ঠস্বর শুনে ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে এল নাসিরুদ্দিন।

‘তুমি ঠিক আছো তো, বিবি?’ জানতে চাইল সে।

‘ওই কাকটা সাবান নিয়ে গেছে!’ বলল তার স্ত্রী।

কাকটার দিকে এক নজর তাকিয়ে মুচকি হাসল নাসিরুদ্দিন। ‘আমার শার্টের রঙটা একবার দেখো, তারপর ওই পাাখির রঙের দিকে খেয়াল করো!’ স্ত্রীকে বলল সে। ‘নির্ঘাত আমার চেয়ে সাবানটা ওরই বেশি দরকার!’

নাসিরুদ্দিন আর জাদুঘরের গাইড
একদিন কয়েকজন পর্যটকের সঙ্গে জাদুঘরে গেল নাসিরুদ্দিন। জাদুঘরের গাইড একটা পাত্র দেখিয়ে বলল, ‘এই পাত্রটা পাঁচ হাজার বছর আগের।’

‘মাফ করবে,’ বলে উঠল নাসিরুদ্দিন, ‘আমার মনে হয় এটা পাঁচ হাজার চার বছর আগের।’

পর্যটকরা বিস্মিত হলেও খানিক ক্ষিপ্ত হলো গাইড। সে তাদের আরেকটা কামরায় নিয়ে কিছু স্বর্ণমুদ্রা দেখাল।

‘এই মুদ্রাগুলো তিন হাজার বছর আগের,’ জানাল সে।

‘তিন হাজার চার বছর আগের,’ বলল নাসিরুদ্দিন।

এবার দারুণ ক্ষেপে উঠল গাইড। ‘তুমি ঠিক সময়টা জানলে কীভাবে?’ জানতে চাইল সে।

মৃদু হেসে নাসিরুদ্দিন জবাব দিল, ‘খুবই সোজা। আমি চার বছর আগে যখন এখানে এসেছিলাম তখন তুমি বলেছিলে মুদ্রাগুলো তিন হাজার বছর আগের!’

নাসিরুদ্দিন ও কাঠুরে
একদিন নাসিরুদ্দিন বনে কাজ করে এমন বন্ধুকে গিয়ে বলল, ‘আমি কাঠুরে হতে চাই।’

‘কিন্তু কাঠুরেদের তো তরুণ আর শক্তিশালী হতে হয়,’ বলল তার বন্ধু।

‘একবার পরখ করেই দেখো না!’ বলল নাসিরুদ্দিন।

‘বেশ,’ বলল বন্ধুটি। ‘ওই মাঠে পাঁচশ গাছ আছে। ওগুলো কেটে ফেলো।’

তিনদিন পর ফিরে এল নাসিরুদ্দিন।

‘কয়টা গাছ কাটলে?’ জানতে চাইল তার বন্ধু।

‘সব,’ জানাল নাসিরুদ্দিন।

সত্যিই তাই। একটা গাছও অবশিষ্ট ছিল না ওই মাঠে। অবাক মানল ওর বন্ধুটি।

এত দ্রুত গাছ কাটা শিখলে কোথায়?’ জানতে চাইল সে।

‘সাহারা মরুভূমিতে,’ বলল নাসিরুদ্দিন।

‘কিন্তু সাহারা মরুভূমিতে কোনো গাছই নেই,’ বলল ওর বন্ধু।

‘এখন কোনো গাছ নেই!’ জবাব দিল নাসিরুদ্দিন।

নাসিরুদ্দিন আর পাথর
নাসিরুদ্দিনের বন্ধুর অভাব ছিল না। ওদের কেউ কেউ প্রবীণ আবার অনেকে তরুণ। একদিন তাদের সে বলল, ‘বয়স্করা অল্পবয়সীদের তুলনায় বেশি বুদ্ধি রাখে।’

‘ঠিক কথা,’ জবাব দিল ওর বয়স্ক বন্ধুরা। ‘কিন্তু তরুণরা বুড়োদের চেয়ে শক্তিশালী,’ বলল তরুণ বন্ধুদের একজন।

‘আমি মানি না,’ বলল নাসিরুদ্দিন। ‘আমি এখনো তরুণ বয়সের মতোই শক্তিমান আছি।’

‘সেটা কীভাবে হয়?’ বন্ধুরা জানতে চাইল। ‘দয়া করে বুঝিয়ে বলো, নাসিরুদ্দিন!’

‘বেশ,’ বলল সে, ‘ওই বিরাট পাথরটা দেখতে পাচ্ছো?’

পাথরটার দিকে তাকাল সবাই।

‘আমার বয়স যখন কম ছিল, চেষ্টা করেও ওটা নাড়াতে পারিনি,’ খোলাসা করল নাসিরুদ্দিন। ‘এখন আমার বয়স হয়েছে কিন্তু এখনো ওটাকে নাড়াতে পারি না!

গল্পের বিষয়:
হাস্যরস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত