গেল বছরের কথা। আমরা ছিলাম চারজন। অন্যের বাড়ির ডাব চুরি করাটা যে খারাপ,সেই ভালো-মন্দ জ্ঞান তখন কাজ করেনি। আর যার ডাব চুরি হবে, সেই লোকটাও বিশেষ সুবিধার ছিল না। আমাদের পাশের গ্রামেই তার বাড়ি।
ঠিক করলাম, সেদিন রাতেই পরিচালিত হবে আমাদের অপারেশন। তখন শীতকাল। রাত ১০টার দিকে দা ও দড়ি নিয়ে যথা স্থানে হাজির হলাম। কিন্তু বাগানটা ছিল রাস্তার পাশে। সেখানে বেশ কয়েকটি দোকান থাকায় তখনো লোকজনের আনাগোনা ছিল। আমরা চারজন আলাদা হয়ে গেলাম।
কথা ছিল, কেউ সুযোগ পেলেই ঢুকে পড়বে। তারা তিনজন আমার আগেই ঢুকে পড়ল। সবশেষে আমি গিয়ে দেখি, বাগানের ভেতর কেউ নেই। নিচুস্বরে একটা ডাক দিতেই তারা বেরিয়ে এল। আসলে আমি ঢোকার সময় ইটের গাঁদির ওপর পাপড়ায় একটা শব্দ হয়েছিল। সে জন্যই তারা ভয়ে লুকিয়েছিল। যাক, সেসব মিটল। কিন্তু সমস্যা হলো, যার গাছে ওঠার কথা ছিল, সে ভয়ে উঠবে না। অগত্যা আমি আর অন্য এক বন্ধু গাছে উঠলাম। সে গাছের মাথায় উঠল আর আমি নিচে। তখনই বিপদ।
একটা ইঁদুর এসে পড়ল আমার বুকের ওপর। ভয় পেলেও নিজেকে সামলে নিলাম। অনেক কায়দা-কসরত করে এক কাঁদি ডাব নিচে নামালাম। পাশেই ছিল বিশাল মাঠ। ডাবগুলোনিয়ে চলে এলাম মাঝমাঠে। ডাবগুলো প্রায় নারকেল হয়ে গিয়েছিল। সেগুলোর খোসা ছাড়ানো হলো। সেটাও খুব সাবধানে। কারণ, জানতাম, রাতের বেলা শব্দ অনেক দূরে যায়। এবার বাড়ি যাওয়ার পালা।
কিন্তু মাঠ থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে আমাদের অনেকগুলো বাড়ি পার হতে হয়। সে সময় আমাদের ওখানে চোরের উৎপাত অনেক বেড়ে গিয়েছিল। তাই সবাই খুব সজাগ থাকত। যা হোক, ঝুঁকিটা নিলাম। প্রায় বাড়ির কাছে এসে গিয়েছি, এমন সময় হঠাৎএকটা দরজা খুলে গেল। ভাবলাম, সর্বনাশ! তীরে এসে না তরি ডোবে৷ কিন্তু লোকটা আবার ভেতরে ঢুকে গেল। শেষ পর্যন্ত আমাদের সেই অভিযান সফল হয়েছিল।