বলদের মতো চারটা পা:
গোপালের তখন বয়স হয়েছে। চোখে ভালো দেখতে পারে না।
– রাজা কৃষ্ণচন্দ্র বললেন, কী গোপাল, গতকাল আসনি কেন?
– আজ্ঞে চোখে সমস্যা হয়েছে। সবকিছু দুটো দেখি। কাল এসেছিলাম। এসে দেখি দুটো দরবার। কোনটায় ঢুকব, ভাবতে ভাবতেই…।
– এ তো তোমার জন্য ভালোই হলো। তুমি বড়লোক হয়ে গেলে। আগে দেখতে তোমার একটা বলদ, এখন দেখবে দুটো বলদ।
– ঠিকই বলেছেন মহারাজ। আগে দেখতাম আপনার দুটো পা, এখন দেখছি চারটা পা…ঠিক আমার বলদের মতোই!
প্রতিটি সমস্যাই আবর্জনার মতো:
এক কৃষকের একটা গাধা ছিল। গাধাটা একদিন অগভীর কুয়ায় পড়লো। কিন্তু কুয়াটার গভীরতা গাধার উচ্চতা থেকে বেশি হওয়াতে অবলা প্রাণীটি উঠে আসতে পারছিল না। গাধার ত্রাহি চিৎকারে কৃষক এবং আশপাশের মানুষ ছুটে আসল। কিন্তু ওরাও বুঝে উঠতে পারল না কী করবে।
ঘণ্টাখানেক নানাভাবে চেষ্টা করার পরও যখন গাধাকে উপরে তুলে আনা গেল না, কৃষক তখন চিন্তা করল, কুয়াটা আগে থেকেই বিপজ্জনক। বেশ কয়েকটি বাচ্চা কুয়াতে পড়ে বারবার আহত হয়েছে। কুয়াটা এমনিতেই ভরাট করতে হবে, তার উপর গাধাটা অনেক বুড়ো এবং দুর্বল হয়ে গেছে। তাই কৃষক সিদ্ধান্ত নিল গাধাসহ কুয়াটি ভরাট করে ফেলবে।
কৃষক সবাইকে ডাক দিয়ে হেল্প করতে বলল। সবাই হাতে বেলচা এবং কোদাল নিয়ে পাশ থেকে মাটি কেটে কুয়াতে ফেলতে লাগল। কিছু মাটির দলা গিয়ে গাধাটির উপরেও পড়ল। ওদের মাটি ফেলা দেখে গাধাটি বুঝতে পারল কি ঘটতে চলেছে, প্রাণী টি ভয়ে-দুঃখে নিরবে কাঁদতে লাগল।
কিছুক্ষণ মাটি ফেলার পরে সবাই হঠাৎ চমকে গেল, কারণ গাধাটি অদ্ভুত একটা কাণ্ড করে বসেছে। সবাই যখন গাধার উপরে মাটি ফেলছে, গাধাটি তখন গা-ঝাড়া দিয়ে মাটি নিচে ফেলে দিচ্ছে এবং এক-পা, এক-পা করে ভরাট হওয়া জায়গাতে অবস্থান নিচ্ছে। সবাই এবার দ্রুত গাধার উপরে মাটি ফেলতে শুরু করল, গাধাটিও তত দ্রুত মাটি গায়ের ওপর থেকে ঝেড়ে ফেলে ভরাট হওয়া জায়গাতে এসে দাঁড়ায়।
এভাবে কিছুক্ষণ মাটি ফেলার পর সবাই অবাক হয়ে লক্ষ্য করল কুয়াটি প্রায় ভর্তি হয়ে গেছে, অবশেষে গাধা কুয়া থেকে বেরিয়ে আসলো।
…জীবনে চলার পথে এমন অসংখ্য কুয়াতে আপনি পড়বেন, যা থেকে উঠে আসার মতো সক্ষমতা হয়তো আপনার থাকবে না। আশপাশের মানুষগুলো আপনাকে টেনে তোলার পরিবর্তে আপনাকে আরো ডুবিয়ে দিতে চাইবে।
কিন্তু এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আপনাকে ওই গাধা টির মতই গা-থেকে আবর্জনাগুলো একটু একটু করে ঝাড়া দিয়ে ফেলতে হবে যতক্ষণ না ওই আবর্জনাতে কুয়াটা পূর্ণ হয়ে যায়। যখনই সমস্যা এসে আপনার শরীর এবং মনের উপরে চেপে বসবে, প্রতিবার একটু একটু করে ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিবেন। তারপর মাথা উঁচু করে একটু আগে ঝেড়ে ফেলে দেওয়া সমস্যার উপরে গিয়ে দাঁড়াবেন।
প্রতিটি সমস্যা-ই আবর্জনার মতো। আপনি থেমে থাকলে আবর্জনার পাহাড় এসে আপনাকে জীবন্ত কবর দিয়ে দেবে। তাই কখনোই হাল ছাড়বেন না। থেমে থাকবেন না।
শিয়াল ও মুরগির গল্প:
সে অনেক অনেক আগের কথা, এক বনে অনেক মুরগি থাকত। কিন্তু তারা নিজেরা সারাক্ষণ মারামারি করত। বনের রাজা অনেক ভেবে-চিন্তে মুরগিদের নিরাপত্তার জন্য কিছু শিয়াল নিয়োগ দিলেন। সেই থেকে গঠিত হলো নতুন এক বাহিনী। মুরগি রক্ষা বাহিনী।
আঁকা: আসিফুর রহমানবাহিনী অ্যাকশনে নেমে গেল কিন্তু সাধারণ মুরগির মৃত্যু কমল না। একদিন বনের রাজা মুরগি রক্ষা বাহিনীর প্রধানকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ব্যাপার কী, এত মুরগি মারা যাচ্ছে কেন?’ বাহিনীর প্রধান বললেন, ‘মুরগিগুলা খুব বদমাইশ! একটাকে ধরে জিজ্ঞেস করলাম এত যে মারামারি করো, অস্ত্র পাও কই? তারপর গভীর রাতে তারে নিয়া অস্ত্র উদ্ধারে গেলাম কিন্তু আগে থেকেই ওত পেতে থাকা কিছু মরগি আমাদের আক্রমণ করল! আমরাও আক্রমণ করলাম, ব্যস কানা মুরগিটা স্পট ডেড!’
তার পরও সাধারণ মুরগির মৃত্যু কমল না। বিষয়টি নিয়ে বনের রাজা মুরগি রক্ষা বাহিনীর প্রধানকে জিজ্ঞেস করলে তিনি একই ব্যাখ্যা দিয়ে চললেন। সাধারণ মুরগিদের মধ্যে গুঞ্জন উঠল, শিয়াল নিজেই মুরগি খাওয়া শুরু করেছে! কিন্তু বনের রাজা ভাবলেন, তা কী করে হয়!
একদিন দিনে-দুপুরে একদল শিয়াল কয়েকটা মুরগি ধরে নিয়ে গেল। সে দিনই মুরগি গুলোর মৃতদেহ পাওয়া গেল বনের পাশের এক ডোবায়। সবাই নিশ্চিত হলো শিয়াল নিজেই মুরগি খাওয়া শুরু করেছে! সেই থেকে ‘শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেওয়া’ প্রবাদটি প্রচলিত হলো বনে।