আমি এবং হুমায়ূন আহমেদ !

আমি এবং হুমায়ূন আহমেদ !

আমার সামনে বসে আছে একটা লোক। লোকটা প্রায় ১০ মিনিট ধরে আমার সামনে বসে আছে।লোকটার চেহারা ভীষণ গম্ভীর।চোখে চশমা।চুলে পাক ধরেছে।মুখে বয়সের ছাপ।লোকটার বয়স কত হতে পারে?ষাট হতে পারে।ভদ্রলোক অনেকক্ষন ধরে চুপ করে বসে আছেন কিছু বলছেন না।ভদ্রলোককে আমার কাছে সুবিধার মনে হচ্ছে না।ভদ্রলোকের নাম কি? নাম এখনো জানি না।তাকে জিজ্ঞেস করি নি।লোকটার চেহারা যা রাগী জিজ্ঞেস করলে যদি ধমক দেয়।তার থেকে জিজ্ঞেস না করাই ভালো।থাকি চুপ করে।
ভদ্রলোক এবার আমার দিকে তাকালেন।ধমকের সুরে বললেন,এ্যাই গাধা!
–জ্বী জনাব,,আমাকে বলছেন?
–আমার সামনে কি তুই ছাড়া অন্য কেউ আছে?
–জ্বী না,,জনাব।আমি ভেবেছিলাম আপনি কোনো কোনো গাধাকে ডাকছেন।আসলে জনাব আমাদের এখানে কোনো গাধা নেই।
–তোকে এত ভাবতে কে বলেছে?
–কেউ না জনাব।
–বেশি ভাবাভাবি করবি না।বেশি ভাবাভাবি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।জানিস আমার এক বন্ধু বেশি ভাবাভাবি করে সর্দি লাগিয়ে ফেলেছিল।
–আগে জানতাম না জনাব এখন জানলাম।

ভদ্রলোক কি পাগল নাকি?বেশি ভাবলে যে কারও সরবদি লাগে আগে জানতাম না।কী অদ্ভুত ব্যাপার!!
–কি এত ভাবছিস?বললাম না বেশি ভাবাভাবি করবি না।কথা কি কানে যায় না?
–জ্বী জনাব আর করব না।
–কি কখন থেকে জনাব জনাব করছিস?
–তাহলে কি ডাকব জনাব?
–স্যার ডাকবি,বুঝলি।
–বুঝলাম জনাব!!

আমার ইচ্ছা করছে ভদ্রলোকের সামনে থেকে উঠে চলে যাই।ভদ্রলোক খুবই বিরক্তকর।আমি কিছুক্ষণ আগেও হুমায়ূন আহমেদের “নন্দিত নরকে”উপন্যাস টা পড়ছিলাম।চমৎকার উপন্যাস।প্রায় শেষ করে ফেলেছিলাম।কোথা হতে এই আপদটা এসে যে জুটল।এখন উঠে যেতে ইচ্ছা করলেও যেতে পারব না।ভদ্রলোক এসেছেন বাবার কাছে।বাবার কাছে আসার হেতুটা এখনও জানি না।এনাকে আগে কখনও বাবার কাছে আসতে দেখিনি।ভদ্রতার খাতিরে বসে বসে বকবকানি শুনতে হবে।অসহ্য!!
–এ্যাই রামগাধা!!
বুঝলাম না ভদ্রলোক কাকে গাধা,,রামগাধা ডাকছেন।এখানে তো আমি আর উনি ছাড়া কোনো গাধা বা রামগাধা নেই।পাগল নাকি!!
–স্যার,আপনার ভুল হচ্ছে এখানে গাধা বা রামগাধা বলে কেউ নেই।
–তোর চেয়ে বড় রামগাধা আর কে আছে?
ও ভদ্রলোক এতক্ষণ আমাকে গাধা,,রামগাধা ডাকছিল।বুঝতেই পারিনি।আমাকে রামগাধা বলার কারনটা ধরতে পারলাম না,আমি কি রামগাধার মতো?
আমি একটু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম,স্যার,আমাকে রামগাধা বলার হেতুটা কি জানতে পারি?
–আমি কখন থেকে বসে আছি আর আমাকে এক কাপ চাও দিলি না,,তো তোকে রামগাধা বলব না তো আইনস্টাইনের পিএ বলব।
আমি ভদ্রলোকের কথায় একটু লজ্জ্বা পেলাম।ঠিকি তো ভদ্রলোক কখন থেকে বসে আছেন আর তাকে এক কাপ চাও দিলাম না।আমি আসলেই একটা রামগাধা!
–স্যার,আপনি একটু বসুন,,,আমি চা নিয়ে আসি।
–যা নিয়ে আয়।আর শোন চায়ে চিনি দিবি না,আমার ডায়াবেটিকস কিনা!!
–ঠিক আছে,স্যার।

আমি চা নিয়ে ঘরে ঢুকলাম।আমি চায়ের কাপ ভদ্রলোকের দিকে এগিয়ে দিলাম।ভদ্রলোক চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে ওয়াক ওয়াক করে ফেলে দিলেন।
–এ্যাই রামগাধা!!চায়ে তুই কি দিয়েছিস?লবন দিয়ে চায়ে তিতা বানিয়ে ফেলেছিস!
–আমার কি দোষ!!!আপনিই তো বললেন চায়ে চিনি দিবি না।
–চিনি না দিতে বলেছি,,তোকে লবন দিতে বলেছি??
–আমি ভেবেছিলাম আপনি চায়ে চিনি খান না লবন খান।
–গাধা,,,গাধা,,,কখনও শুনেছিস চায়ে মানুষ লবন দেয়।
আমি মাথা নিচু করে রইলাম।ভদ্রলোক এবার আমার দিকে তেড়ে আসলেন।চোখ লাল করে বললেন,তোকে রামগাধা বললেও গাধা জাতিকে অপমান করা হবে।ব্যাটা বদমায়েশ কোথাকার!আমি একজন বিখ্যাত ব্যাক্তি,আর তুই আমাকে মারতে চাচ্ছিস,আমি তোকে পুলিশে দেব।
ভদ্রলোক কিসের বিখ্যাত কিছুই বুঝলাম না।
আমি ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলাম,আপনার নাম কি স্যার?
ভদ্রলোক রাগী সুরে বললেন,আমার নাম হুমায়ূন।
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম,,
–ও,এজন্যই তো আপনাকে চেনা চেনা লাগছে।আপনি তো খুব বিখ্যাত ব্যাক্তি।মোঘল সাম্রাজ্যের ২য় বাদশা।বাবুরের ছেলে হুমায়ূন।আপনার সাথে আমার দেখা হয়েছে কত বড় সৌভাগ্য আমার!
–আমি বুঝতে পারছি না যে তুই আসলেই বোকা নাকি অভিনয় করছিস!!
–অভিনয় করব কেন স্যার।আমি তো অভিনেতা না।
–এ্যাই ব্যাটা গাধা,সম্রাট হুমায়ূন কি এখনও বেঁচে আছে,,এটা তো কোনো সুস্থ পাগলও বলবে না।
–ও আপনি তাহলে সম্রাট হুমায়ূন নন।আমি মুখে একটা হতাশ ভাব এনে বললাম।
–তুই তো পাগল!!!সম্রাট হুমায়ূন এখানে আসবে কোত্থেকে?ঐ ব্যাটা তো কয়েক”শ বছর আগে মরে ভূত হয়ে গেছে।
–তাহলে আপনি কিরকম বিখ্যাত?
–আরে রামছাগল আমি লেখক হুমায়ূন আহমেদ।
–উনি আবার কে?
ভদ্রলেক এবার সত্যি সত্যি ভীষন রেগে গেলেন।বললেন,আমি হিমু সিরিজের লেখক হুমায়ূন অাহমেদ।

আমার মনে হলো আমার কানের কাছ দিয়ে ঠান্ডা বাতাস বয়ে গেল।আমি ঘামতে শুরু করেছি।আমি কি ঠিক শুনছি?হুমায়ূন আহমেদ আমার সামনে দাড়িঁয়ে।আমি কোনো রকম তোতলাতো তোতলাতে বললাম,স-স-স-স-স-ত্যি,আপনি হু হু হু হু মায়ূন আ আ হমেদ।
–দেখ!!এখন আবার তোতলাচ্ছে কেমন!!তুই আসলে একটা ব্যাকটেরিয়া!!নিম্নস্তরের প্রানী!!আমি নিশ্চিত তুই মানুষ না।
আমি কিছু বলতে যাচ্ছিলাম ওনি আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঠান্ডা হয়ে যাওয়া চা টা আমার মাথায় ঢেলে দিয়ে বের হয়ে গেলেন।

আমি বেক্কেলের মতো দাড়িঁয়ে আছি।নিজেকে এখন ব্যাকটেরিয়ার চেয়েও নিম্নস্তরের প্রাণী মনে হচ্ছে।

আমার মনে হচ্ছে বাসার লাইটাও আমার দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যেরর সুরে বলছে,ব্যাটা রামগাধা ব্যাকটেরিয়ার ভাগ্য দেখেছিস!হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে এতক্ষণ সময় কাটিয়ে ফেলেছে।ঐ ব্যাটা রামছাগল,তুই হুমায়ূন আহমেদের কয়টা বই পড়ছস,আমরা তার প্রায় সব বই শেষ করে ফেলেছি,আমরা দেখা করতে পারলাম না,আর তুই ব্যাটা একটা রামগাধা দেখা করে ফেলেছিস,,একেই বলে কপাল!!

আমি অবাক হয়ে লাইটের দিকে তাকিয়ে আছি।ব্যাটা বলে কি!!! ও নাকি হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে!!

নিজেকে নিজে এখন থাপড়াতে ইচ্ছা করছে।কাছে গ্লাসে পানি ছিল,পানি নিয়ে নিজের উপর ঢেলে দিলাম।আহ্!! কী ঠান্ডা পানি!!

হঠাৎ কিছু একটা ঠান্ডা পানির অনুভবে ঘুম ভেঙে গেল!একি আমি ওদিকে স্বপ্ন দেখছিলাম আর এদিকে কাজ সেরে ফেলেছি।বিছানা সব ভাসিয়ে দিয়েছি,,এজন্যই তো ঠান্ডা ঠান্ডা কি অনুভব করছিলাম।এখন যদি আমার রুমে এসে কেউ এসব দেখে তাহলে তো মান সম্মানের ১৪টা বেজে যাবে।হায় আল্লাহ আমার মান সম্মান রক্ষা কর।এত বড় ছেলে এসব কি করছে ছিঃ ছি:!!

খোদা হাফেজ পরে দেখা হবে,,এখন কোনো রকমে মান সম্মান বাঁচাই আগে

গল্পের বিষয়:
হাস্যরস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত