KFC তে বসে মুরগির হাড় চিবুচ্ছি। এমন সময় মা ফোন করে বললেন, “কিরে, তোর না আজ ব্যাবসার কাজে থাইল্যান্ড যাওয়ার কথা, এখন কোথায়”?
-মা, এইতো আসছি কিছুক্ষণের মধ্যেই।
আর কিছুক্ষণ পরই আমার ফ্লাইট, এখান থেকে বাসায় যেতে হবে। তারপর ফ্যামিলির সাথে ইয়ারপোর্টে যাবো।
KFC থেকে বেরিয়ে আমার Gyxer মটোরসাইকেল স্টার্ট দিলাম বাসায় যাওয়ার জন্য। এই বাইকটা নতুন কিনলাম, আগে ছিলো Pulser150। এক বাইক কয়দিন চালাতে ভালো লাগে? তাই Gyxer কিনে Pulser টা পাড়ার এক ছোটভাইকে দিয়ে দিলাম।
বাসায় পৌছতে খুব একটা সময় লাগলোনা। গিয়ে দেখি সবাই রেডি হয়ে আছে আমাকে ইয়ারপোর্টে এগিয়ে দিয়ে আসার জন্য।
ছোটভাইকে আমার প্রাইভেট Mitsubishi টা বের করতে বললাম, সে বললো এটার নাকি ইঞ্জিন ডাউন হয়ে গেছে।
-তো, বিএমডাব্লিউটা কর।
সে চাবি নিয়ে আমার প্রাইভেটকার বিএমডাব্লিউ বের করলো।
গাড়ির মধ্যে বসে আছি, সাথে আছে মা আর ছোট বোন, গাড়ি চালাচ্ছে ছোটভাই।
এলাকা পার হওয়ার আগেই রাস্তায় এক পুলিশ সার্জেন্ট গাড়ি থামাতে বললো। সামনের জানালার কাছে এসে চেঁচিয়ে বললো
-রাস্তাটা কি আপনার বাপের, এতো জোরে গাড়ি চালাচ্ছেন?
-না, রাস্তাটা আমার বাপের না, আমার ভাইয়ের। (ছোটভাই পিছনের সিটে ইশারা করে আমাকে দেখালো)
সার্জেন্ট আমাকে দেখে থতমত খেয়ে গেলো, বললো, “আরে, স্যার আপনি? আরে যান যান”।
ছোটভাই আগের মতো গাড়ি চালাতে লাগলো।
আসলে রাস্তাটার নাম ‘ইফতেখার রোড’, আমি এই এলাকার সবচেয়ে ধনী ও প্রভাবশালী হওয়ায় রাস্তাটা আমার নামে করা হয়েছে। আমার ক্ষমতার জন্য পুলিশ থেকে শুরু করে কাউন্সিলর সহ সব বড় লিডার আমাকে সম্মান করে।
আস্তে আস্তে ইয়ারপোর্টের কাছাকাছি চলে এসেছি। এমন সময় সবার উদ্দেশ্যে বললাম, কার কি লাগবে বলে ফেলো?
-আমার একটা ডায়মন্ডের নেকলেস লাগবে। (ছোট বোন বলল)
-সমস্যা নেই, যতো লাখ টাকা লাগুক আমি নিয়ে আসবো, ছোটবোনের আবদার বলে কথা।
ছোটভাইকে বললাম, এবার তুই বল কি চাস?
সে বললো, “আমার তেমন কিছু লাগবেনা, শুধু একটা মোবাইল চাই, যেটাতে থাকবে ১০জিবি প্লাস রেম, ৫০ জিবি প্লাস রম, থাকবে ৩০ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা উভয় দিকে। ইন্টারনেট স্পিড থাকবে ১০০জিবিপিএস”
আমি বললাম, “এরকম মোবাইল দুনিয়ায় আছে কিনা সন্দেহ, থাকলে নিয়ে আসবো “।
সবশেষে মাকে বললাম, ‘মা, তোমার কিছু লাগবে কি না?’
-না বাবা, তুই ঠিকমতো দেশে ফিরে এলেই চলবে, আমার কিছু লাগবেনা।
-না না, এটা কি করে হয়? কোটিপতির মা হয়ে তুমি এটা কি বলছো? আচ্ছা, আমিই না হয় দেখেশুনে তোমার জন্য একটি সোনার হার নিয়ে আসবো, ঠিক আছে?
যথাসময়ে ইয়ারপোর্টে এসে পৌঁছলাম। সবাইকে বিদার দিয়ে বিমানে উঠে বসলাম। কিছুক্ষণ পর বিমান চালু হবে। তার আগে একটি সেল্ফি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিলাম, ক্যাপশনে লিখলাম, “ব্যাবসার কাজে থাইল্যান্ড যাচ্ছি, কেমন লাগছে বন্ধুরা?”
সাথে সাথে তাতে লাইক, কমেন্টের বন্যা শুরু হলো। মেয়েরা কমেন্ট করতেছে, ‘কোথায় যাচ্ছো বাবু’, ‘wow, sweet বাবু’, ‘tomke sundor lagca’ ইত্যাদি। আর ছেলেরা বলছে, “আপনি চলে যাচ্ছেন ভাই, ততোদিন এলাকা কে সামলাবে? ”
কিছু সময় পর মেয়েলি গলায় কিছু ইংলিশ শব্দ কানে ভাসলো। মনে হয় বিমান স্টার্ট দিবে, বলতে না বলতে বিমান চালু করার শব্দ শোনা গেলো। শরীরটা একটু ঝাকি খেলো, বিমান স্টার্ট দেয়ার সময় একটু ঝাকি খায় এটা আমি জানি।
কিন্তু এই ঝাকি তো দেখি আর থামছেই না, অতিরিক্ত ঝাকির চোটে ঘুম ভেঙ্গে গেলো! ঘুম ভেঙ্গে দেখি গৃহস্থের গোয়ালঘরে খড়ের গাদার মধ্যে শোয়ে আছি, মালিকই এতোক্ষণ ধরে আমার শরীর ধরে ঝাকি দিচ্ছেন, ঘুম থেকে তুলার জন্য। ঘুম ভাঙ্গার পর মালিক হুঙ্কার দিয়ে বলে উঠলেন, “এই ইফতেখার, কামলার ঘরের কামলা, এতো সময় লাগে ঘুম ভাঙতে? তাড়াতাড়ি গরু নিয়ে মাঠে যা”।
তড়িঘড়ি করে ঘুম থেকে উঠে পুকুরের ময়লা পানিতে মুখ ধুয়ে মালিকের বৌয়ের বেড়ে দেয়া বাসি খাবার খেয়ে গরু নিয়ে মাঠে গেলাম!
#রম্যগল্প
#রাখালের_স্বপ্ন
#আহমেদ_ইফতেখার