আমার এলাকার এক ভাই আছেন,যিনি শীতকালে পানি ছোঁয়াকেও পাপ মনে করেন। শীতকাল এলে তিনি ভুলে যান,গোসল কাকে বলে। তিনি বোধহয় পুরোটা শীতকাল আকাশের দিকে তাকিয়ে বলেন,’আল্লাহ! গোসলের তায়ামুম নেই? এত এত নিয়ম আছে,গোসলের তায়ামুম নেই ক্যান? কেউ আমাকে বোঝেনা।’
শীত এলে উনাকে প্রায়ই কসমেটিক্স দোকানে দেখা যায়। প্রতি সপ্তাহে তাকে পারফিউম কিনতে হয়। কোনো কোনো পারফিউম এক সপ্তাহ যায়না। সেদিন এই মোখলেস ভাইয়ের সাথে দেখা হতেই বললাম,
-ভাই! এবার নাকি শৈত্যপ্রবাহ হবে শুনলাম।
-আমাকে কেউ যদি বলে,আমি তোকে মেরে ফেলবো। তাও বোধহয় এত ভয় পাইতামনা। মানুষের ইমোশন নিয়ে মজা করিসনা।
-গোসল বুঝি মানুষের ইমোশন?
-জানিনা।
-গতবছর টানা কয়দিন গোসল করেননি?
-৭৪ দিন।
-ভাই এক কাজ করেন। এবার আপনি ১০০ দিন গোসল না করার একটা রেকর্ড করে ফেলেন। আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো আফ্রিকা মহাদেশ ছাড়া অন্য কোনো মহাদেশের কোনো লোক এই রেকর্ড করতে পারছে কিনা। যদি না পারেন,তাহলে আপনার নাম গিনেজ বুক অফ ওয়াল্ড রেকর্ডসে ঠাঁই পাবে। আজকে থেকেই গোসল করা বন্ধ কইরা দেন।
-আমি কি তোর মতো গাধা নাকি? গত তেরোদিন গোসল করিনি। 😎
দুই সপ্তাহ গোসল না করে,কেউ কিভাবে এত গর্ব সহকারে গোসল না করার কথা বলে,কে জানে!
আমার আরেক ভাই আছেন। ওয়াসিম ভাই। বিদেশ থেকে এসেই তিনি পাত্রী খুঁজছেন। জুলাই থেকে এই পর্যন্ত কম না হলেও একশ মেয়ে দেখে ফেলছেন। উনি এত খুঁতবাজ যে মেয়ের হাতের নখ বড় কেনো,সেই খুঁতেও মেয়ে বাদ দিয়েছেন। হঠাৎ করে সেদিন হাসিহাসি মুখে বললো,একটা মেয়ে পছন্দ হইছে। কথাবার্তা আগাচ্ছে। জানুয়ারিতে বিয়ে। আমি জিজ্ঞেস করলাম,
-এতো এতোদিন মেয়ে পছন্দ হয়নি। হঠাৎ শীত আসতেই কেনো পছন্দ হলো?
-আরে গাধা। শীতে সুয়েটার,জ্যাকেট ছাড়া থাকা সম্ভব,কিন্তু বিবাহযোগ্য পুরুষের ‘বৌ’ ছাড়া থাকা অসম্ভব।
আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে বললাম,আমি যেন আজ রাতে ঘুমানোর পর ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার বয়স তেইশ হয়ে গেছে। 🐸
কিছুদিন আগে ঢাকায় যাবার পর ভাইয়া একটা সানগ্লাস গিফট করেছিল। গত ঈদে আমার এক মামার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে আমাকে একটা শার্ট গিফট করেছিল। কুরবানির ঈদে টিউশনির টাকায় একটা প্যান্ট কিনেছিলাম। প্রাক্তন ইয়ে একটা ইয়ারফোন আর পারফিউম গিফট করেছিল। গত শুক্রবারে মসজিদে যাবার পর আমার জুতা জোড়া চুরি হয়ে গেছিল। আমিও আসার সময় কোনো এক ভদ্রলোকের জুতা পরে চলে আসছিলাম।
শার্ট,প্যান্ট,জুতা পরে; সানগ্লাস কলারে লাগিয়ে,ইয়ারফোন গলায় পেঁচিয়ে,পারফিউম পুরো শরীরে মেখে বাবার পকেট থেকে একশ টাকার একটা নোট সরিয়ে কলেজে আসলাম। কলেজে বিভিন্ন ফুলের গাছ আছে। দারোয়ানকে ফাঁকি দিয়ে একটা বড়সড় গোলাপ নিয়ে বেরিয়ে এলাম। ফরিদকে খুঁজলাম। সে নেই। না থাক! প্রপোজ করতে কাউকে লাগে নাকি! মেয়ে খুঁজতে শুরু করলাম। উহু,ফর্সা না। আমাদের কলেজে বিলাইমার্কা মেয়ে বেশী। একজনকে পাওয়া গেলো। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ এবং আগাগোড়া সুন্দরী বলা যায়। গোলাপটা লুকিয়ে বললাম,এই! এদিকে আসো।
-জ্বী ভাইয়া।
-থ্যাংকিউ।
-থ্যাংকিউ কেনো? ভাইয়া ডাকার জন্য! তুমি আমাকে ভাই ডাকছো। কতই ভালোলাগছে! তোমার বাবার সম্পত্তির ভাগ দিবা,এটা ভেবেও ভালোলাগছে।
-সরি।
-হু। বয়ফ্রেন্ডের নাম কি?
-সরি ভাইয়া।
-ভাইয়া? আর কানেও কম শোনো নাকি?
-না।
-ওইটা নেই?
-কোনটা?
-ইয়ে আর কি!
-ইয়েটা কি?
-বাবু।
-মানে?
-ন্যাকামি করছো? তোমার বয়ফ্রেন্ডের নাম কি?
-আস্তাগফিরুল্লাহ,আমি ওসব করিনা। আমি ভালো মেয়ে।
-ভালো মেয়েই তো খুঁজছিলাম।
-কেনো?
-আমার ইয়ুটিউব চ্যানেলের জন্য নায়িকা লাগবে।
-ও আল্লাহ! তাই!
-হ্যাঁ। তুমি রাজী?
-হ্যাঁ।
-ফুলটা ধরো। আই লাভিউ। এবার তুমি আমাকে আই লাভিউ টু বলো..
-মানে?
-সিনেমাতে ঢুকতে হলে পরিচালকদের সাথে ইয়ে করতে হয়,আমিতো জাস্ট প্রেম করতে বলছি।
-ছিঃ ছিঃ এই সমাজে আমি মুখ দেখাবো কেমনে!
-মানে? (ভক্সোদ হয়ে গেলুম)
-আপনি আমার সাথে ফান করছেন। 🙁 আমি এরকম মেয়ে না। আমি প্রেম-ভালোবাসা করিনা।
-এসব কি!
-শয়তান তুই আমার দেহ-মন কিছুই পাবিনা।
-ফুলটা দে বইন। অন্য কাউকে প্রপোজ করা যাবে। -_-
অতঃপর এই শীতেও আমি জিএফহীনতায় ভূগবো।
বাসায় আসার পর আব্বু অগ্নী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
-আমার পকেট থেকে একশ টাকা কে নিছে?
-আমি কি জানি!
-শওকত দেখেছে,তুই নিছিস। তোর ভাত বন্ধ।
-কি অদ্ভুত! বিরোধীদল যা বলবে,সেটাই তুমি বিশ্বাস করবা? তুমি জানোনা এসব ষড়যন্ত্র,চক্রান্ত? কেউ কেউ চায়না আমি এই ফ্যামিলিতে থাকি,খাই। এরা তোমার কানে ‘ছুঃ মান্তার ছুঃ,কালী কুত্তার গু’ বলে মন্ত্র পড়ে। সেই তাদের কথায় কান দিয়ে তুমি আমায় ভাত বন্ধকরনাল স্পিচ দিচ্ছো? এই মুখ আমি কাকে দেখাবো। এখনই আমি আত্মহত্যা করবো।
এই বলে রুমে ঢুকে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে শুয়ে পড়লাম। তারা চিন্তা করুক,আমি ঘুমাই। তাছাড়া বাবার হোটেলের বাবুর্চি আর ম্যানেজার (আম্মুর) সাথে আমার সম্পর্ক বিশেষ ভালো। আব্বুর ভাত বন্ধকরনাল স্পিচ কোনো কাজের।