কলেজ থেকে বাসায় ফেরার পথে গলির মধ্যে দিয়ে একটা
মেয়েকে হেটে যেতে দেখলাম।মেয়ে সেটা বড় কথা
নয় সুন্দ্রী কিনা তা দেখার মেয়েটির পিছন পিছন জোরে
হাটতে শুরু করে দিলাম।
কিন্তু তারপরও হেটে মেয়েটির সমান ধরতে পারলাম না,আর
মেয়েটিও পিছনে তাকালো না।
একপর্যায়ে আমি আমার বাসার সামনে এসে পড়লাম।
কিন্তু তবুও সে পিছন ফিরে তাকালো না।বড্ড আফসোস হতে
লাগলো মনের ভিতর।ভাবলাম তার পিছন পিছন আরো দূর যাই,তাকে
দেখতেই হবে।যেহুতূ বাসার সামনে এসে পড়ছি,তাই আর
এগোতে পারলাম না যদি কেউ উল্টাপাল্টা কিছু ভাবে।আশেপাশে
ভদ্র বলে আমার যথেষ্ট সম্মান আছে।
কিন্তু হঠাৎ একটা মোটরসাইকেলের হর্ন পেয়ে মেয়েটি
পিছনে তাকালো।আমি অপলক দৃষ্টিতে তার দিকে চেয়ে
থাকলাম।মেয়েতো নয় একটা স্বর্গের পরী।আমি ‘থ’ হয়ে
দাড়িয়ে থাকলাম।এমন সুন্দরী মেয়ে তো এই গলিতে আগে
দেখিনী।বড় ধরনের একটা ক্রাশ খেলাম।
হঠাৎ পিছন থেকে আম্মুর ডাক শুনতে পেলাম।
-কিরে ওখানে দাড়িয়ে কি করিস?বাসার ভিতরে আই -আম্মু
-কইই কিছুনাতো,দাড়াও আসতেছি -(থতমত খেয়ে আমি বললাম)
মেয়েটির কথা ভাবতে ভাবতে বাসায় প্রবেশ করলাম!
প্রায় সময়ই তাকে দেখার জন্য কখনো মোড়ে,কখনো তার
বাসার দিকে উকি মারতাম.!কয়েক দিনের মধ্যেই গয়েন্দাগিরির
মাধ্যমে তার সমস্থবিষয়ে পিএইচডি ড্রিগ্রি অর্জন করলাম।মানে
কিসে পড়ে,ফ্যামিলেতে কে কে আছে এসব তথ্য।
তারা আমাদের গলির নতুন ভাড়াটিয়া,গত একমাস হলো এখানে বাসা
নিছে কিন্তু মেয়েটা হোস্টেলে ছিলো বলে ফ্যামিলীর
সাথে আসতে পারেনাই।কয়েকদিন হলো সে এ বাসায় প্রথম
আসছে আর প্রথমেই তার উপর আমার নজর পড়ছে।সুতরাং তার
সাথে কিভাবে প্রেম করা যায় এ নিয়ে ভাবতে থাকলাম।কিন্তু এবার
আর বন্ধুদের সাহায্য নিবো না,আমাকেই সবকিছু করতে হবে।যদি
তারা আবার আমার সাথে ২ নম্বরী করে।
কিন্তু কিভাবে যে তার কাছে মনের কথাটা বলবো,সরাসরি তার
সাথে কথা বলতে পারবোনা কারন খুব লাজুক তো আমি।আবার
কাউকে দিয়ে তাকে কিছু বলতে পারবোনা,যদি কেলেংকারী
ঘটে যাই।তাই শেষ পর্যন্ত পুরান
ফর্মালিটিটাই কাজে লাগাতে হবে,মানে চিঠির আশ্রয় নিতে হবে।
আর চিঠি কিভাবে তার কাছে পোষ্ট করব তাও ঠিক করে
ফেললিম।দুপুর বেলা যখন তার আব্বু-আম্মু অফিসে থাকবে
তখনই তাদের বাসার দরজার সামনে চিঠিটা রেখে আসব।তো
রাতে খেয়ে দেয়ে চিঠি লেখা আরম্ভ করে দিলাম।চিঠি লেখা
শেষ করে একটা সুন্দর খামে রেখে ঘুমাতে গেলাম।
পরেরদিন সকালে উঠে দুপুরের জন্য অপেক্ষা করতে
লাগলাম।সকাল ৯টার সময় দেখতে পেলাম আমার ভবিষ্যৎ শ্বশুড় –
শ্বাশুড়ি অফিসের দিকে রওনা দিলো।
বেলা ঠিক ১২ টা,তখন চিঠিটা নিয়ে বাসা থেকে বের হলাম।এসময়ে
আশপাশে তেমন কেউ না,প্রায় জনমানবহীন।
আমি আশপাশ পরিস্তিতি বিবেচনা করে তার বাসার সামনে এসে
পড়লাম কিন্তু সেই এক ভয় কাজ করছে।হার্টবিটের ধুকধুকানি
বেড়েই চলছে।কিন্তু ভয় পেলে যে চলবে না, চিঠিটা দিতেই
হবে।
তো তাদের দরজাতে কলিং বেল দিয়ে ,চিঠিটা রেখেই ভৌ দৌড়
দিয়ে দেওয়ালের পিছনে লুকাইলাম।তারপর লুকিয়ে দেখতে
লাগলাম কি হয়,হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ পেলাম।তারপর আমি
দেওয়ালের আড়াল থেকে চলে আসলাম।
আর ভাবতেছিলাম চিঠি পড়ে প্রেমে পড়বে তো।
এভাবে ৪ দিন একই টাইমে একই কায়দায় চিঠি রেখে আসলাম।প্রথম
চারদিন চিঠিতে আমার নামটা দিইনাই।৫ম দিনে চিঠিতে আমার নামটা প্রকাশ
করলাম।
তো সেইদিন বিকালে মোড়ের উপর বসে ছিলাম,তারপর
জেরিন (মেয়েটা) আমার দিকে তাকিয়ে একটা ক্লোজআপ হাসি
দিয়ে চলে গেল।
এর মানেই বুঝে গেলাম জেরিনও আমার প্রেমে পড়ে
গেছে।
…
৬ষ্ঠ দিনে আমার ফোন নাম্বার চিঠিতে লিখে দিলাম ।
রাত ১১টার দিকে আননোন নম্বর থেকে ফোন এলো,আমি
বুঝতে পারলাম ওইটা জেরিনেরই নাম্বার।তাই কলটা কেটে দিয়ে
আমি নিজেই কল দিলাম।ফোনটা রিসিভ করা মাত্রই মেয়ের কন্ঠ,,
(তবে কন্ঠটা তেমন মধুর না,তবে সুন্দ্রী মেয়েদের কন্ঠ
এরকম হতেই পারে। আর না হয় পড়তে পড়তে কন্ঠটা একটু
ফেটে গেছে)
-হ্যালো (জেরিন)
-হ্যালো(আমি)
-আপনি আমার জন্য এত সুন্দর করে চিঠি লিখছেন?
-চিঠি তো ছোট বিষয় ,আপনার জন্য মহাকাব্য লিখে ফেলতে পারি।
-হিহিহি.আপনার মত এত হ্যান্ডসাম ছেলে যে আমার মত এরকম
মেয়ের সাথে প্রেম করবে তা আমি ভাবতেই পারিনি।
(কোনো মেয়ের মুখ থেকে নিজের প্রশংসা শুনতে ভালোই লাগে)
-ধুর কি যে বলেন।
-আচ্ছা আমাকে এখন থেকে তুমি করে বলবা।
************
এভাবে প্রথম দিন একটানা ৫৮ মিনিট কথা বললাম।
সেদিন তার কথা ভাবতে ভাবতে রাতে প্রায় ঘুমই হলোনা।
এভাবে কয়েকদিন ফোনে প্রচুর কথা হতো।তবে তার সাথে
সামনা সামনি কোনো কথাই হয়নাই।রাস্তায় দেখা হলেই শুধু
হেসে হেসেই চলে যাই।
তো একদিন বললাম চল আমরা কাল দেখা করি।
-হ্যা, কোথায় করবেন?
-অমুক পার্কে কাল বিকাল ৩টাই আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করব।
পরেরদিন বিকালে সেইরকম সেজেগুজে দোকান থেকে
ফুল কিনে ৩টার আগেই পার্কে এসে উপস্থিত হলাম। ।কিন্তু
জেরিন এখনো আসে নাই।প্রায় ৩০ মিনিট ওয়েট করার পরে
দেখি তাদের বাড়ির কাজের মেয়ে জরিনা আসতেছে।
ভাবলাম হয়তো জেরিন একা একা আসলে সন্দেহ করবে তাই
জরিনাকে নিয়ে আসছে।কিন্তু পিছনে জেরিনকে দেখলাম না।
শুধু জরিনাই আমার দিকে আসতেছে .(মনে মনে ভাবলাম
জেরিনের আবার কিছু হলো নাতো)
-তোমার জেরিন আপা কই? (আমি)
-আফারে কি করবা ।(জরিনা)
-কি করবো মানে? আর তুই আমারে তুমি করে বলতেছিস ক্যা?
-কিহ কইলা, এতদিন আমার লগে প্রেম করলা, ফোনে কথা বললা,
চিঠি দিলা আর এখন কিসব কও।
-হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিস ।তোর মাথা ঠিক আছে? আমার কি পাগলা
কুত্তায় কামড়াইতেছে যে তোর লগে পিরীত করমু।
-ওই দ্যাখ এই নম্বরটা কার ?তোর না?
,
তার ফোনের দিকে তাকায়ে
-হ ,আমারই তো।
-এই চিঠিগুলা তোর না?
-হ,এগুলা তো আমি জেরিনরে দিছলাম,শুধু জেরিনের জন্য।তুই
পাইলি ক্যামনে?
-মানে,এই চিঠিগুলান পাইয়্যা জেরীন আপারে দেখানোর পর
আপা তো কঈলো এটা আমার জন্য লিখছে।চিঠির প্রথমে নাকি
আমার নাম লেখা আছে।
-চিঠিগুলা দে,তোর নাম কই লেখা আছে দেখি।
আমি প্রথম চিঠিটা দেখে হতভম্ব খেয়ে গেলাম।
প্রথম চিঠিতে লিখছি ‘প্রিয় জরি’।(জেরিনকে শর্টকাট করে জেরি
রাখছি।কিন্তু লেখার মিসটেকে হয়ে গেছে জরি। আর জরিনাকে
সবাই জরি বলে ডাকে)
কিন্তু পরের চিঠিগুলোতে জেরিই লিখছি ,দুর্ভাগ্যক্রমে প্রথম
চিঠিটার নামটাই পড়ছে শুধু। সুতরাং তারা ভাবছে জরিনাকেই ভালোবাসি।
আমি জরিনার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে কান্নার সুরে বললাম ,
-দ্যাখো আমি তোমারে ভালোবাসিনা, ভুল করে এসব হয়েগেসে।
-ভুলটুল আমি কিচ্ছু বুঝিনা।
প্রেম আমার সাথেই করা লাগবে, নয়তো তোর খবর আছে।
আমি যেই দৌড় দিতে গেলাম,
জরিনা আমার শার্টের কলারটা টেনেধরলো।
অতঃপর……..