আজকাল রূপা আর হিমুকে পাত্তা দিচ্ছে না।
অ্যাভয়েড করেই চলেছে। ফেসবুকে অ্যাক্টিভ থাকলেও রিপ্লাই দেয় না, মাঝেমধ্যে এমনকী মেসেজ সিনও করে না।
মুহিব নামে রূপার একটা জাস্টফ্রেন্ড হয়েছে। হাতে ডিএসআরএল নিয়ে ঘুরে আর রূপার ছবি তোলে। রূপা সেই ছবি ফেসবুকে আপ্লোড দেয়। হিমুর অসহ্য রাগ লাগে। রাগের ঠেলায় মোবাইল আছাড় মারতে গিয়েও মারে না, নতুন মোবাইল কেনার মতো টাকা তাঁর কাছে নাই।
রূপার অ্যাটেনশন পাওয়ার জন্য হিমু আবেগের ভঙ ধরে থাকে। চুরি চামারি করে অন্যের লেখা বিরহের কবিতা নিজের নামে পোস্ট করে। কিছুদিন আইডি ডিঅ্যাক্টিভ করে রাখে।
কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় না। রূপা-মুহিবের ছবিতে ফেসবুক সয়লাব। হিমু আর সহ্য করতে পারে না। মনে মনে ভাবে আত্মহত্যা করবে। ফ্যানের সাথে দড়ি লাগানো শেষ, ঝুলে পড়ার আগমুহূর্তে হিমুর চোখের সামনে ভেসে উঠে কাঁচা-পাকা চুলের পোড়খাওয়া এক মুখ।
নাহ। এত সহজে মরবে না ও।
সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। হিমুরা মরে না, মারে।
কলিংবেলের শব্দে যারপরনাই বিরক্ত হলেন মিসির আলী।
ফেসবুকে একটা ফাটাফাটি পোস্ট করেছেন হিউম্যান সাইকোলজিতে তাহেরী ইফেক্ট নিয়ে । তারপর কমেন্টে ঝগড়া লেগে গেছে।
টানটান উত্তেজনা ।
এই সময় কে এলো?
মিসির আলীর কাছে সব খুলে বললো হিমু।
রূপাকে কীভাবে ফিরে পাবে ও?
মিসির আলী অনেকক্ষণ চিন্তা করে সমাধান বের করলেন।
পানি লাগবে।
ময়ুরাক্ষী নদীর পানি। সেই পানি তাহেরী হুজুরকে দিয়ে পড়িয়ে নিয়ে রূপাকে খাওয়াতে হবে। তবেই ও জাস্টফ্রেন্ড থেকে মুক্ত হয়ে হিমুর কাছে ফিরে আসবে।
কিন্তু ময়ুরাক্ষী নদী কোথায়?
মিসির আলী সেটা জানেন না।
হিমুর স্বপ্নের নদীর লোকেশান মিসির আলী কীভাবে জানবেন?
তবুও তিনি হিমুকে প্রশ্ন করলেন, “আচ্ছা হিমালয়, তুমি যে ময়ুরাক্ষী নদী স্বপ্নে দ্যাখো ওটার পানির রঙ কী? কুচকুচে কালো?”
– না মিসির চাচা, ওটার পানি নীল রঙ।
– ঐ নদীর দুই পাশে তুমি কী দ্যাখো, নদীর দুই পাড় কি অবৈধভাবে দখল হয়ে গেছে?
– আরে নাহ। কী বলেন এইসব? নদীর দুইপাশে সবুজ ঘাস। আমি সেই ভেজা সবুজ ঘাসে পা দিয়ে হেঁটে বেড়াই।
গভীর চিন্তায় ডুবে গেলেন মিসির আলী। এই নদী তো তবে বাংলাদেশে হতে পারে না। কোথায় তবে সেই ময়ুরাক্ষীর তীর? চিন্তায় তার মগজ এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যেই তিনি নীলুর অবয়ব দেখলেন, নীলু চায়ের ফ্লাক্স হাতে দাঁড়িয়ে আছে, মিসির আলীর দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললো, চা খাবেন? ঢেলে দেই?
গভীর ঘুমে ঢলে পড়লেন মিসির আলী।
প্রিয় হিমু,
তোমার সমস্যার সমাধান হয়েছে। তোমার ময়ুরাক্ষী নদীর অবস্থান আমি জানি।
নদীটি সূদুর উগান্ডায়।
ওয়াসার পচা পানি খেয়ে খেয়ে রূপার মনে একটা প্রলেপ পড়েছে। উগান্ডার পানি দিয়ে জলচিকিৎসা না করালে এই প্রলেপ যাবে না।
তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব উগান্ডা থেকে পানি আনার ব্যবস্থা করবে।
অবশ্য উগান্ডার ভিসা পাওয়া খুবই কঠিন। বিজ্ঞানী কিংবা স্কলারশিপ কোটায় ভিসা পাবা না। কিছুদিন আগে দেখেছ নিশ্চয়ই, সাস্টের ছাত্ররা প্রতিযোগিতা জিতেও ভিসা পেলনা অথচ কর্মকর্তারা ঠিকই ভিসা পেয়ে গেলো। কাজেই তোমাকে অবশ্যই একজন কর্মকর্তা হতে হবে।
জানি কাজটা কঠিন। কিন্তু আমি জানি, তুমি পারবে।
ইতি
তোমার মিসির চাচা
হিমু দিনরাত প্রচুর পড়ালেখা করে ওয়াসাতে চাকরি নিলো।
তারপর উগান্ডাতে পানি বিষয়ক প্রশিক্ষণের জন্য চলে গেলো। সেখানে আছে তার ময়ুরাক্ষীর তীর!!সেই জল দিয়ে সে ফেরত পাবে তার রূপাকে।
আহা!! আবেগে তার চোখে জল চলে আসলো।
এদিকে হিমুদের উগান্ডা যাত্রা নিয়ে পত্র-পত্রিকায় তুমুল সমালোচনা আর হাসি তামাশা শুরু হলো। হিমু অবাক হয়ে ভাবলো, পরিবেশটা সুন্দর না? সে কি কাউকে গালি দিয়েছে?
সমালোচনা প্রেমিকদের থামিয়ে রাখতে পারে না। হিমুকেও পারেনি। হিমু এখন উগান্ডায়।
সে কি পারবে ময়ুরাক্ষীর জল দিয়ে রূপাকে জাস্টফ্রেন্ড এর কাছে থেকে ফিরিয়ে আনতে? নাকি রূপার হাতের পাঁচটি নীলপদ্ম তার আগেই শেষ হয়ে যাবে?
উত্তরটা তোলা থাকুক পরের কোনো গল্পের জন্য । আপাতত হিমু ভালোমতো ট্রেনিং করুক। আর আনরোমান্টিক, ক্ষ্যাপা, বেরসিক বাংলাদেশী মিডিয়া আর ফেসবুক সমাজ হিমুর এই উগান্ডা যাত্রা নিয়ে যত খুশি ট্রল করতে থাকুক।
তাতে হিমু, রূপা কিংবা উগান্ডার কিছুই যায় আসে না।