বিয়ে করার পর থেকে বউয়ের কড়া নজরদারিতে আছি। ফেসবুকে বেশি সময় থাকা যাবে না। অপরচিত কোনো মেয়ে ফ্রেন্ডলিস্টে থাকতে পারবে না। পরিচিত হোক আর অপরিচিত হোক মেয়েদের ম্যাসেজের রিপ্লাই দেওয়া একদম নিষেধ।
.
ফ্রেন্ডলিস্টে কয়েকটা হুরের মতো সুন্দরী মেয়ে ছিল। তাঁরা যখন শাড়ি পরে ছবি আপলোড করত, মনে হত তাদের কাছে বলিউডের কারিনা ক্যাটরিনাও ফেল। কিন্তু বউকে খুশি করতে গিয়ে মনে প্রচণ্ড দুঃখ নিয়ে তাদেরকেও আনফ্রেন্ড করলাম। দু’একজন ‘বউ পেয়ে আমাদের ভুলে গেলা’ টাইপের ম্যাসেজ দিলেও রিপ্লাই দেওয়ার সাহস হয়নি।
.
শুক্রবার ছুটির দিন হওয়াতে শুয়ে শুয়ে একটু ফেসবুকিং করছিলাম। বউ রান্নাঘরে রান্না করার ফাঁকে ফাঁকে কয়েকবার এসে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখে গেছে আমি কি করছি। হঠাৎ রান্নাঘর থেকে বউ চিৎকার দিয়ে ডাকতে লাগলো। চিৎকার শুনে ভাবলাম মনে হয় হাত কেটে গেছে। মোবাইল ফেলে দৌড়ে রান্নাঘরে গিয়ে দেখি বউ স্বাভাবিক ভাবেই রান্না করছে। আমি কিছুটা রাগ করে বললাম,
-কী হলো, এত জোরে কেন ডাকছ?
-শুয়ে শুয়ে কী করছো?
-কী করবো আর! ছুটির দিন তাই একটু ফেসবুকিং করছি।
-আমি এই গরমের মধ্যে রান্না করছি আর তুমি শুয়ে শুয়ে ফেসবুকিং করছো!
-ঠিক আছে যাও। তুমি ফেসবুকিং করো আমি রান্না করি।
-থাক রান্না করতে হবে না। বরং তুমি মোবাইল নিয়ে এসে এখানে বসে ফেসবুকিং করো। আমি বার বার ওখানে গিয়ে তোমাকে পাহারা দিতে পারবো না।
বউয়ের কথা শুনে আমার বিরক্তির সীমা থাকল না। ইচ্ছে করছিল দশ তালা বিল্ডিং থেকে লাফ দিতে। কিন্তু বউটাকে এত তাড়াতাড়ি বিধবা করতে ইচ্ছে করল না। তাই চুপচাপ গরমের মধ্যে বসেই ফেসবুকিং করতে লাগলাম।
-শোন তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।
-হুম বলো।
-আমি কিছুদিনের জন্য আমাদের বাড়িতে যাবো।
বউয়ের কথা শুনে মূহুর্তে আমার সব বিরক্তি হাওয়ায় উড়ে গেলো। যাক তাহলে কিছুদিন স্বাধীন থাকা যাবে।
-বলো কী তুমি! কবে যাচ্ছো?
-আমি আমাদের বাড়িতে যাওয়ার কথা শুনে তুমি এত খুশি হলে কেন?
-কই আমি খুশি হলাম! আমারত কষ্ট হচ্ছে তোমাকে ছাড়া থাকবো কি করে।
-কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই৷ তুমি আমি দুজন এক সাথে যাবো।
-আরে না না, আমার অনেক কাজের চাপ আছে। আমি কিছুতেই যেতে পারব না। বরং তুমি গিয়ে ঘুরে আসো।
-ঠিক আছে তোমাকে যেতে হবে না।
দুইদিন পর বউ তাঁর বাপের বাড়িতে চলে যাওয়ার পর মনে হলো বহুকাল পর কোনো জেলখানা থেকে মুক্তি পেয়েছি। যাক কয়েকদিন অন্তত শান্তিতে থাকা যাবে। আর ইচ্ছেমতো শাড়ি পরা মেয়েগুলোর সাথে কথা বলতে পারবো। এটা ভাবতেও শরীরের মধ্যে কেমন একটা ফিলিংস চলে আসে।
.
আমার এক পুরনো মেয়ে ফ্রেন্ডকে ম্যাসেজ দিলাম, কি গো আছো কেমন? সে রিপ্লাই দিলো, বউ পেয়েত ভালোই আছো। এখন আমাদের খবর নেওয়া কী প্রয়োজন? রিপ্লাই দেখে বুঝলাম এটার সাথে সুবিধা হবে না। তো আরেকজনকে ম্যাসেজ দিলাম সেও দেখি একইরকম রিপ্লাই দিলো। ওদের কথা শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেলো। মনে হচ্ছে শালার দুনিয়ার সব মেয়েই স্বার্থপর।
তো মন খারাপ কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থাকলাম। হঠাৎ মোবাইলে নোটিফিকেশনের শব্দ শুনে দেখি একটা মেয়ে আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট আসছে। শাড়ি পরা, গোলগাল চেহারা, কপালে কালো টিপ। প্রোফাইল পিকচারটা দেখতে এককথায় অসাধারণ। আহা! এই যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। কোনো কিছু না ভেবেই একসেপ্ট করে ফেললাম। প্রথম ভাবলাম আমি ম্যাসেজ দিবো৷ পরে ভাবলাম না আমি আগে ম্যাসেজ দিলে ভাববে ছেছড়া টাইপের লোক।
কিছুক্ষণ পরে মেয়েটিই ম্যাসেজ দিয়েছে।
-hi
-hlw
-আপনিত দেখতে খুব হ্যান্ডসাম।
-আপনিও খুব সুন্দর। আর শাড়ি পরা মেয়েদের আমার খুব ভালো লাগে।
-বলেন কী!
-সত্যি বলছি। শাড়ি পরা মেয়েরা যেন একেকটা পরী।
-থাক আর পাম্প দিতে হবে না।
-একটা কথা জিজ্ঞেস করা যাবে?
-একটা কেন! আপনার যত খুশি জিজ্ঞেস করুন।
-আপনি রিলেশনশিপে আছেন?
-না গো সে ভাগ্য এখনো হয়নি।
-কি যে বলেন! আপনার মতো সুন্দরী মেয়ে কী আজকাল সিঙ্গেল পাওয়া যায়?
-আপনার মতো করে কেউ আজও আমায় দেখেনি। তাই হয়ত আজও সিঙ্গেল রয়ে গেলাম।
এত সুন্দরী মেয়ে সিঙ্গেল এটা শুনে আমার আনন্দের সীমা থাকলো না। মনে হচ্ছিল সেই ১৬ বছর বয়সের মতো আবার নতুন করে কারো প্রেমে পড়েছি।
-তো আপনিও কী সিঙ্গেল?
-জ্বি জ্বি আমিও এখনো সিঙ্গেল। সৃষ্টিকর্তা আপনার জন্যই আজও আমাকে সিঙ্গেল রেখেছে।
-কিন্তু আপনার আইডিতে দেখলাম ‘in married ‘
-আর বলবেন না। মেয়েদের থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এটা দিয়ে রাখলাম। সবাই যেন বুঝতে পারে আমি সিঙ্গেল।
-বাহ্! আপনিত দেখি খুব বুদ্ধিমান।
-এই আপনাদের দোয়ায় অল্প একটু আরকি।
.
মেয়েটির সাথে আমার কথা চলতে থাকলো। নাম্বারও আদানপ্রদান হলো। একদিন পর মেয়েটিকে আমি প্রপোজ করলাম। মেয়েটি আমার প্রপোজ একসেপ্ট করো নিলো। সব যেন স্বপ্নের মতো হচ্ছিল। স্বপ্ন হোক আর যাই হোক। যা করতে হবে দ্রুত করতে হবে। বউ এসে গেলে আর কিছুই করতে পারবো না।
আমি তাকে ফোন দিলাম,
-জান কী করছো?
-তোমাকে মিস করছি বাবু।
-এভাবে বলো না জান। খুব লাগে আমার।
-কোথায় লাগে বাবু?
-একেবারে কলিজায়।
-আহারে! আমার বাবুটা।
-জান শোনো কাল আমি তোমার সাথে দেখা করতে।
-এত তাড়াহুড়া কিসের বাবু? আমাদের দেখা হবে কথা হবে। অন্য কিছুও হবে।
– না না জান। তুমি ব্যাপারটা বুঝতেছ না। আমি কালই তোমার সাথে দেখা করতে চাই। যা হওয়ার কালই হবে।
-ঠিক আছে বাবু। তোমার যখন এত তাড়া তাহলে কালই দেখা করি।
-জান তুমি নীল শাড়ি পরে এসো। আমি নীল পাঞ্জাবি পরে আসবো।
-আমারত নীল শাড়ি নেই বাবু।
-আচ্ছা নীল পরতে হবে না। অন্য কালার হলেও চলবে। কিন্তু শাড়ি পরে আসবে।
-আচ্ছা বাবু।
পরের দিন সেজেগুজে নির্দিষ্ট জায়গায় অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর ওর নাম্বার থেকে ফোন আসলো।
-জান কোথায় তুমি?
-এইত বাবু তোমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছি।
ওর গলার সুর কেমন চেঞ্জ মনে হলো। ভাবলাম হয়ত নার্ভাস ফিল করছে। কিন্তু পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখি আমার বউ দাঁড়িয়ে আছে। বউয়ের সাথে প্রোফাইল পিকচারের গোলগাল চেহারার মেয়েটি দাঁড়িয়ে মুখ টিপেটিপে হাসছে। তাদের দেখে আমার পুরো শরীর অবশ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। কলিজাটা যেন কেউ ছিঁড়ে নিয়ে গেলো। কাঁপা কাঁপা গলায় বউকে বললাম, তুমি এখানে কী করছো? বউ রাগে কটমট করতে করতে আমার পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে বলল, প্রথম দেখায় আমি বুঝতে পেরেছি তোমারযে ঢিলা ক্যারেক্টার। হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে বলল, আজ থেকে তোমার মোবাইল ফেসবুক সব ইউজ করা বন্ধ।
.
পরে জানতে পারলাম সব আমার বউয়ের প্ল্যান ছিল। আর গোলগাল চেহারার মেয়েটি ছিল তাঁর দূরসম্পর্কের কাজিন।