হাসপাতাল যাওয়ার জন্য ইমাম সাহেব বাসে উঠলেন।
সিট খালি পেয়ে বসে পড়লেন একসিটে।
আশপাশের সিটগুলোতে প্যান্টশার্ট পরা কয়েকজন লোক বসে আছেন।
সম্ভবত সবাই সরকারী চাকরীজীবি।
দেশের অবস্থা নিয়ে আলোচনা করছেন তারা।
বিভিন্নজনে বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলছেন।
ইমাম সাহেব কিছু না বলে খুব মনযোগ দিয়ে তাদের কথাবার্তা শুনছেন।
যেন তিনি নিশ্চুপ শ্রোতা।
কথা না বলার আরেকটা কারন হল,
তিনি অসুস্থ মানুষ।
কথা বলতে স্বস্থিবোধ করছেন না তেমন।
পাশের এক প্যান্টশার্ট পরা ভদ্রলোক
বললেন, হুজুর আমরা সবাই কথা বলছি,
আপনি কিছু বলছেন না যে।
হুজুর বললেন, জনাব আমি অসুস্থ,
কথা বলার ফিলিংস্টা তেমন নাই এখন।
তাছাড়া আপনারা শিক্ষিত মানুষ,
এখানে কথা না বলে শুনে যাওয়াই
আমার জন্য শ্রেয়।
এমনিই পাশের একলোক
অট্রহাসি দিয়ে বলে উঠল,
আরে হুজুররা আমাদের
সাথে কেমনে কথা বলবেন!
এরা দেশের অবস্থা
কি-ই বা জানবেন!
জানেন না,
মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত??
সাথে সাথে প্যান্টশার্ট পরা সবাই হা হা করে
হাসতে লাগল।
হুজুর কিছুটা ইতঃস্ততায় পড়ে গেলেন।
তারপর ভাবলেন,
এসব শিক্ষিতদেরকে একটু শিক্ষা দেওয়া
দরকার।
এমনি হুজুর ভদ্রলোকদের উদ্দেশ্য বললেন-
-কেমন আছেন আপনারা??
-আমরা ভাল আছি হুজুর, কিন্তু কথা ঘুরানোর জন্য আপনি
এখন অন্য প্রসঙ্গ আনছেন।
(বলে সবাই আবার হাসতে লাগল)
–অন্য প্রসঙ্গ মানে, আমি তো আপনাদের হাল হাক্বিক্বত জিজ্ঞেস করছি!
– হুজুর, আমরা ভাল করেই বুঝছি,আপনি কথা ঘুরানোর
জন্যই আমাদের ভাল মন্দ জিজ্ঞেস করছেন।
(বলে আবার হাসি)
-না ভায়েরা কথা ঘুরানোর জন্য নয়, আমাদের নিয়ম
হল, অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার আগে তার
শারিরীক হালত জেনে নেই।
দেখে নেই, আমার সাথে কথা বলার জন্য তার
শারিরীক অবস্থা ঠিক আছে কি না??
আচ্ছা যাক বাদ দেন এসব, আপনাদের কথাই এবার আসা
যাক।
কী যেন বলছিলেন??
–বলেছি, মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত,(আবার অট্রহাসি)
–ও আচ্ছা, তাই নাকি??
তা কেমনে বুঝলেন মোল্লার
দৌড় মসজিদ পর্যন্ত?
–কারন, আপনারা শুধু মসজিদ নিয়া আছেন, কেমনে নামায
রোজা করবেন এটাই আপনাদের দিন রাতের ফিকির।
দুনিয়ার কোন খবর নেই।
–তাই যদি হয় তাহলে আমাদের দৌড় হল সারা পৃথিবী ব্যাপী!
আর আপনাদের দৌড় হল টয়লেট পর্যন্ত।
(ভদ্রলোকরা পুরাই টাসকি খেল, সবগুলো নীরব)
–হুজুর কি বলেন এসব??
–হ্যা,যদি মসজিদ নিয়ে পড়ে থাকার কারনে আমাদের
দৌড় মসজিদ পর্যন্ত হয়; তাহলে আপনাদের দৌড় টয়লেট পর্যন্তই!!
ভদ্রলোকেরা হুজুরের কথা শুনে সবাই একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করছে।
কিছুক্ষণ নীরব থেকে বলল।
–হুজুর, প্রমান করেন কেমনে আমাদের দৌড়
টয়লেট পর্যন্ত!!
আর আপনাদের দৌড় পৃথিবী
ব্যাপী!!
(ভদ্রলোকদের এমন কথা শুনে ড্রাইভার গাড়ী থামিয়ে হাসতে লাগল)
হুজুর বললেন,
–ঠিক আছে, মসজিদ শব্দের অর্থ কী? একটু বলেন আপনারা।
–যেখানে গিয়ে লোকেরা নামায আদায় করেন সেটাই মসজিদ হুজুর।
–আরে এটাতো মসজিদের পারিভাষিক সংজ্ঞা।
শাব্দিক অর্থটা বলেন।
“মসজিদ”কোন বাবের মাসদার এটাও বলেন।
–আমরা পারি না হুজুর।
–ঠিক আছে, কোন সিগাহ এটা বলেন।
–আমরা পারিনা হুজুর
–মসজিদ কোন সিগাহ এটাই জানেননা; আবার বলছেন মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত!!
যেন মিষ্টি জীবনে না খেয়ে মিষ্টি
কত টক বলে ঘোষনা দিচ্ছেন!!
যাক, শুনেন “মাসজিদ” শব্দটি আস সুজূদু মাসদার থেকে
উদগত ইসমে যরফের একবচন জ্ঞাপক শব্দ।
এর অর্থ; সেজদা করার জায়গা।
অর্থাৎ যেখানে আল্লাহর
জন্য সেজদা করা হয় শাব্দিকভাবে সে জায়গাটাকেই মসজিদ বলে।
এখন সেজদা করার জন্য
“জায়গা পবিত্র হওয়া” শর্ত।
অপরদিকে নবীজি বলেছেন,
আমার উম্মতের
জন্য সমস্ত জগৎকে মসজিদ স্বরূপ বানানো হয়েছে, অর্থাৎ নবীজির হাদিসানুযায়ী
পৃথিবীর প্রতিটি পবিত্র
জায়গাকেই মসজিদ বা সেজদা করার জায়গা বলা হয়।
অর্থাৎ মসজিদে যেভাবে নামায আদায় করা যায় তেমনিভাবে সংসদেও নামায আদায় করা
যায়,আদালতেও নামায আদায় করা যায়, অফিস ইনস্টিটিউসনেও সেজদা বা নামায আদায় করা যায়।
কারন, সংসদ, আদালত, অফিস সবগুলোই পবিত্র।
আর অপবিত্র হলো টয়লেট।
সুতরাং মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত মানে মোল্লার দৌড় সংসদ, আদালত, অফিস, ইনস্টিটিউশন সহ
সমস্ত পৃথিবী পর্যন্ত!!
আর আপনাদের দৌড় টয়লেট পর্যন্ত।
বুঝলেন এবার??
–কিন্তু এটা আমরা মানি না হুজুর,
আমাদেরকে ভাল করে বুঝান আমাদের দৌড় টয়লেট পর্যন্ত কেমনে??
নাহলে আপনার খবর আছে।
–ও আচ্ছা ঠিক আছে, আরো বলছি। চিন্তা করবেন না একদম।
আচ্ছা, আপনারা তো চাকরী করেন,
তাই না??
–জ্বী, হুজুর আমরা চাকরী করি।
–বড় অংকের বেতন পান মাসে মাসে, ঠিক??
–জ্বী, ঠিকই পাই।
–ভাল, খুব ভাল।
তা আপনারা যে এত টাকা কামাই করেন এসব কিসের জন্য??
–আরে হুজুর আমরার পেট আছেনা?
আমাদের খাওয়া দাওয়া করা লাগে না বুঝি??চাকরী করে এত টাকা কামাই
না করলে পেট বাঁচামু কেমনে??
— হ্যা ঠিকই,
তারমানে আপনারা পেটের জন্য চাকরী
করছেন??
–ধরেন এটাই।
–তারমানে আপনাদের আসল চিন্তা হলো টাকা কামাই করে পেটকে সন্তুষ্ট রাখা,
ভাল করে পেট ভরে
খাওয়া; সর্বশেষ, সেই পেটকে ক্লিয়ার করতে রাতের বেলা টয়লেটে গিয়ে যুদ্ধ করা।
তারমানে আপনাদের এই চাকরী বাকরি করার আসল টার্গেটই হল সর্বশেষে টয়লেটে যাওয়া।
সুতারাং আপনাদের দৌড়তো টয়লেট পর্যন্তই।
তাহলে মানছেন না কেন??