“এহহে, মুড়িভর্তায় আবার জিলাপি দিছো ক্যান?” রামিম ইফতারে বসে চেঁচিয়ে উঠলো।
-“এই তুমি বুঝবা না, এটা হচ্ছে নতুন স্টাইলের মুড়িভর্তা। ঝাল ঝাল মুড়ির মধ্যে মিষ্টি মিষ্টি জিলাপি। যেমন আমাদের টক ঝাল মিষ্টি ভালোবাসা। কী বলো?”
-“তাই বলে ঝালমুড়িতে জিলাপি! এটাও আমাকে খেতে হবে?”
চোখমুখ গরম করে বললাম, “তাও শুকরিয়া আদায় করো যে ঝালমুড়িতে নুডুলস দেইনি।”
এবার রামিম চুপসে গেল। ও জানে আমি একা আপার ভীষণ ফ্যান। রমজান মাস এলেই টিভি রেডিও, পত্রিকা ম্যাগাজিনে উনার নুডুলস নিয়ে গবেষণা চলে, সে গবেষণার ফলাফল আমি নিজের বাসায়ও যাচাই করি। ফলাফল তখন বুঝতে পারি যখন আমার রান্না আমি নিজেই মুখে নিতে পারি না, রামিম বেচারাকে সব পেটে সাঁটাতে হয়।
ওদিকে জিলাপিওয়ালা ঝাল-মিষ্টি মুড়ি খেয়ে রামিমের অবস্থা কাহিল। আমাকে বলল, “ঋতু একটু শরবত দাও।”
ওকে শরবত ঢেলে গ্লাস এগিয়ে দিলাম।
রামিম একবার চোখ বড় বড় করে তাকালো, “এ কী! এটা কিসের শরবত? এমন হলুদ ক্যান?”
-“আরেহ! তুমি যা ভাবছো তা না, এটা পাকা আমের শরবত।” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম ফোঁস করে। বেচারার এখন আমার রান্নার উপর থেকে ভরসা উঠে গেছে।
রামিম এক চুমুক শরবত খেয়েই বুঝতে পারলো শরবতে চিনি না, লবণ দেওয়া! অযথা বাক্যব্যয় করা বৃথা বলে চুপচাপ ঢকঢক করে খেয়ে নিল।
পরেরদিনের কথা। রামিমের অফিসের ছুটি হয়ে গেছে। কলিংবেল বাজাচ্ছে। গেট খুলতেই দেখি ও আজ একা আসেনি, সাথে নিয়ে এসেছে একজন অতিথি। ওদের সিনিয়র এক কলিগ। আমাকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে রামিম হেসে বলল, “ঋতু, ইনি আমাদের জামান ভাই। আজকে আমাদের এখানেই ইফতার করবেন। আসতেই চাইছিলো না। জোর করে আনলাম।” জামান ভাই হেসে বললেন, “ভাবি, আপনি নাকি খুব মজার রাঁধেন? রামিমের মুখে শুনে আর লোভ সামলাতে পারিনি। চলে এলাম।” আমি তো মনে মনে দ্বিগুণ খুশি হয়ে গেলাম। যাক রামিম আমার রান্নার মূল্য না বুঝলেও অন্য মানুষগুলো তো বুঝে? মেহমান দেখে আমার উৎসাহ যেন চৌদ্দগুণ বেড়ে গেল। ইফতার বানিয়ে পুরো টেবিল সাজালাম। পোড়া আলুর আলুচপ, নুডুলসের বেগুনি, আমের কাবাব, গরুর মাংসের শরবত, জিলাপিওয়ালা ঝালমুড়ি মাখিয়ে পরিবেশন করলাম।
অতিথি খাবার মুখে দিলেন আর তার মুখের রঙ পরিবর্তিত হতে লাগলো। বলতে লাগলেন, “ভাবি আপনি আসলেই অসাধারণ রাঁধেন। আমার যে কী ভালো লাগছে খেতে!” খুশিতে আমার চোখমুখ ঝলমল করে উঠল। খেয়াল করলাম রামিমের চোখমুখও খুশিতে ঝলমল করছে!
খাওয়ার পর্ব শেষ করে জামান ভাই খুব দ্রুত বাসায় চলে গেলেন। এদিকে রামিমের হাসি আর থামে না। হো হো করে হাসছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, “হাসছো কেন!” রামিম হাসতে হাসতে বলল, “জামান ভাইয়ের সাথে আমার পুরনো শত্রুতা ছিলো। আজ তার শোধ তুললাম!”