‘গরীবের গার্লফ্রেন্ড’ নামে একটা ফেইক আইডি খুললাম। আইডি খুলেই আমার লেখা গল্পের পরিচিত এক কপিবাজকে মেসেজ দিলাম….
–উফফফফ ভাইয়া আপনার লেখা গুলো জোস। জাস্ট ওয়াও…আমি বলে বোঝাতে পারবনা কত্ত ভালো লাগে।
 ভাবছিলাম মেসেজ সিন করবে না। ওমা সাথে সাথেই মেসেজ সিন। বলল….
 -একটু বেশি বেশিই বলছেননা?
 –আরে না, আমি মোটেও বেশি বলছিনা। বরং আপনার সম্পর্কে যা বলছি তা এক্কেবারেইই কম হয়ে গেলো।
 -তাই নাকি?
 –জি ভাইয়া, জানেন আমি রোজ আপনার গল্প পড়ি। আর একা একাই হাসি, কেমনে পারেন এত সুন্দর করে লিখতে?
 -সেটা জানিনা, তবে লিখি। কেমন হয় জানিনা।
মনে মনে বললাম হারামজাদা কপি মারাস আবার বড় বড় কথা। পটানোর জন্য বললাম…..
 –আমি আপনার গল্প পড়েই আপনার প্রেমে পরে গেছি। জানেন কত ছেলে আমার জন্য পাগল আর আমি আপনাকে সবসময় ভাবি।
 -ঢপ মারছেন?
 –কাউকে পছন্দেরর কথা বলা যদি ঢপ হয়ে থাকে, হ্যাঁ তাহলে আমি ঢপ মারছি। জানেন আমি আব্বু আম্মুর আদরের রাজকন্যা। তারা বলে আমি নাকি খুব লাকি।
-কিভাবে?
 –আমার হাজবেন্ড নাকি রাজপুত্রের মতন হবে। কিন্তু আমি চাই আপনার মতন কাউকে। যে আমাকে হাসাবে, মন খারাপ থাকলে মন ভালো করে দিবে।
-আপনি অনেক মিষ্টি।
 –(বেচারা লাইনে আইছে) আমার মাও তাই বলে।
-আপনার একটা পিক দিবেন?
 লও ঠ্যালা..এহন পিক কেমনে দিব। নিজেকে সামলিয়ে বললাম….
–এত তাড়াতাড়ি সব দিব?
 -দিতে অসুবিধে বুঝি?
 –তা না, কয়েকদিন পর দেই?
 -আচ্ছা।
তারপর অফলাইন চলে আসলাম। ভাবছি কিভাবে কপিবাজকে শায়েস্তা করা যায়। প্রেমে ফালামু তারপর ছ্যাঁকা খাওয়ামু। পরেরদিন মেসেজ দিলাম…..
–কেমন আছোগো?
 -এইতো আলহামদুলিল্লাহ্। তুমি?
 –ভালো, তোমায় সবসময় খুব মিস করি। জানিনা কেনো এমন হয়।
-সত্যি মিস করো?
 –মিথ্যে মনে হয়? তাহলে আর কি বলার। কারো যদি বিশ্বাস নাহয় কিচ্ছু করার নাই। ভালো থাকবেন।
-আরে আরে রেগে যাচ্ছেন কেনো?
 –রাগবো কেন, আমার রাগ নাই হুউউ…
-আচ্ছা বাবা সরি, বিশ্বাস করলাম তুমি মিস করো।
 –হুম, জানেন কেউ আমাকে অবিশ্বাস করলে প্রচণ্ড খারাপ লাগে।
 -সরি বললাম তো, এই যে কানে ধরলাম আর এমন হবেনা।
 –ইটস ওকে, এবারের মতন মাফ করলাম।
-আজকে তোমার পিক দিবা?
 –পিক ছাড়া কিছু বোঝেননা নাকি?
-যার কথা এত সুন্দর না জানি দেখতে সে কত সুন্দর।
 –(হারামজাদা রিয়েল পিক দেখলে অজ্ঞান হবি বিলাইর পুত)
-কি হলো দিবেন পিক?
 চট করে মাথায় আইডিয়া এলো। আমার গ্যালারিতে প্রাক্তন প্রেমিকার অনেক গুলো পিক আছে। সেগুলো ইডিট ফিডিট করে দিলাম। বেচারা কপিবাজ দেখেই টাসকি। আবার সাথে সাথে কবিতা পাঠিয়ে দিলো….
“যদি কখনো,
 মেঘবতি হয়ে আমার হৃদয়ে….
 উড়ে আসে ঝড়ো বাতাসে
 আকাশের বুকে ভেসে যাওয়া
 সাদা মেঘ এক রাশি
 তার কাছে গিয়ে
 একটু ভয়ে…
 বলবো ভালোবাসি।”
মনে মনে বললাম ভালোবাসা তর ব্যাকসাইডে দিমু। অন্যেরর লেখা কপি মারাস লজ্জা করেনা। আবার কবিতা মারাও ফহিন্নি। কবিতার কিছু অংশ লিখে ফেবুতে সার্চ দিলাম। এটাও কপি, হালায় করছে কি। কেমনডা লাগে। বললাম….
–বাহহ আপনিতো দারুণ কবিতা লেখেন।
 -হুম এটা মাত্রই লিখলাম। জাস্ট আপনার জন্য।
 –সত্যি?
-হুম তিন সত্যি। আপনি এত সুন্দরি জানা ছিলোনা।
 -উহহহহ লজ্জা লাগে।
 -আহারে আমার লজ্জাবতীটা।
এদিকে আমার প্রচণ্ড হাসি পাচ্ছে। প্রাক্তনকে সবসময় গালি দিতাম আজকে সেলুট করতে ইচ্ছে করছে। ওর ছবি দিয়েই আজকে কপিবাজ পটালাম। আরো অনেক গুলো পিক ছিলো সেগুলো দিলাম। কপিবাজ পুরাই পাগল। প্রতিদিন আমাকে নিয়ে কবিতা লেখে। লেখে বললে ভুল হবে, কপি করে। এভাবে প্রতিদিন আমাদের ধুমছে চ্যাটিং হয়। এখন সে পটে গেছে। এদিকে প্রাক্তনের থাকা সব ছবি দেওয়া শেষ। এদিকে কপিবাজ রোজ ছবি চায়। প্রাক্তনেরর আইডিতে গিয়ে প্রোপিক, কভার ফটো, যত পিকচার আছে সব গ্যালারিতে সেভ করলাম। যাক এগুলো হলেই চলবে। একদিন হুট করে কপিবাজ আমামায় বলল….
–আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমার ঐ মায়া ভরা চোখের প্রেমে পরেছি। আমাকে দিবেকি একটু ভালোবাসার অধিকার।
 আবেগে কাইন্দালাইছি কখন জানিনা। অবশেষে কপিবাজ আমার জন্য পাগল। আমিও বললাম…..
-সেই প্রথম থেকেই তোমায় ভালোবাসি। তোমার লেখার প্রেমে পরেছি। ভালোবাসি বলব বলব করে আর বলা হয়নি। ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি…..
 –আই লাভ ইউ বেবি। উম্মম্মম্মম্মম্মম্মাহহহহহহ….
হারামজাদা প্রেম শুরু হতে না হতেই চুম্মাইতে শুরু করছে। বুঝলাম ওর ক্যারেক্টার লেস। বললাম….
 -বাবু খাইছো?
 –হ্যা সোনা তুমি খাইছো..?
-নাগো বেবি, আচ্ছা বায়গো। খেয়ে আসি।
 –আচ্ছা।
 ডাটা অফ করে লুঙ্গী ডান্স শুরু করলাম। যাক অবশেষে পটলো। প্রেম শুরু হলো। আবেগে কপিবাজ কত কিছু বলে ঠিক থাকেনা। সবসময় বাবু, জানু, মনু বলে কথা বলে। বাবু খাইছো, বাবু শুইছো, বাবু মুতছো, ব্লা ব্লা ব্লা….
 নাহ এভাবে করা আর ঠিক না। হালকা পাতলা ফেবুতে যাওয়া অফ করে দিলাম। রিয়েল আইডি দিয়ে দেখি কপিবাজ দুঃখময় আবেগী পোস্ট করছে। আবার ফেইক আইডি লগইন করলাম। মেসেজ দিলাম…..
–বাবু সরি, আমি অসুস্থ ছিলাম।
 -জানো আমার কত কষ্ট হয়।
মনেমনে বললাম তুই যে গল্প কপি করে নিজেরর নামে চালাস আমারো কষ্ট হয়। বলল….
–বাবু তোমার নাম্বার টা দিবা?
 -কেনো?
 –একটু কথা বলবো।
 এহন কি উপায় করি। যাক অবশেষে বুদ্ধি করে নাম্বার দিলাম। আর ভাল্লাগেনা। বেচারা নাম্বার পেয়ে সাথে কল দিলো। রিসিভ করে বললাম…..
 –কেমন আছো বাবু?
-কে আপনি?
 –তোমার বাবুকে ভুলে গেলে?
 -মানে? এই যে মিঃ এটা সাদিয়ার নাম্বার না?
 –বাবু আমিই সাদিয়া।
-ঐ মিয়া কণ্ঠ ছেলে কেন?
 –হারামজাদা মাইনষের গল্প কপি মারাস কেন?
-মানে? সাদিয়া কোথায় বলুন…?
 –বাবু, জানু, সাদিয়া নাই। অকা বাই….
-হ্যালো হ্যালো…..
 –টুটটুট…(কিছু উগান্ডারর ওয়াজ করে ফোন কেটে দিলাম।)
মেসেঞ্জারে কপিবাজ একেরপর এক ফোন দিচ্ছে। আমি কাটছি। এক পর্যায়ে নিজেই ভিডিও কল দিলাম। রিসিভ করতেই বললাম….
–বাবু আমার দাঁড়ি আছে, গোফ আছে। আমায় ভুলে যাও বাবু….
 -মানে কি এসবের?
 –কিছুনা বাবু…
আমি কিছু বলতে যাব দেখলাম অপরপাশে কপিবাজটা আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে গেলো। মনে হয় অজ্ঞান হচ্ছে। তো আই কিত্তাম? ডাটা অফ করে ঘণ্টা খানিক উরাধুড়া নাচলাম। নিজেকে হালকা লাগছে। আবার ডাটা অন করলাম। কপিবাজের আইডিতে গেলাম, টাইমলাইন ছ্যাঁকাময়। ফেইক আইডি ডিএক্টিব করে লম্বা একটা ঘুম দিলাম। আহহহহহ শান্তি।
  








