ঐ ছেলে…
– হুমম..
– তোমার নাম নিলয় না?
– হুমমম
– অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ো না?
– হুমম..
– বাসা না ঐ মোড়ের দিকে??
– হুমমম
– ঐ শোনো..
– হুমমম
– আমার সাথে বেশি ভাব নিবা না ঠিক আছে?
– হুমম
– আবার হুমম বলছো? দেখছো একটা সুন্দরী মেয়ে তোমার সাথে কথা বলছে,
একটু ভালোভাবে কথা বলবা তা না..মেরে তোমার চশমা ভেঙে দিবো বুঝেছো?
– ওকে…জানু..
– ঐ জানু মানে?? কোন সাহসে আমাকে জানু বললে??
– দেখেন আপু, আমারে কি হাদারাম পাইছেন? আপনার সাথে হুমম হুমম করে কথা বলেছি তাই বলেছেন ভাব নিচ্ছি।
আবার আপু বললে বলবেন কোন কালেকার আপু হন আপনি। তাই জানু বলে ডাকলাম ওকে?
– ওরে বাবা..মাথা ভর্তি চুলে চোখে চশমা পরা হাদারাম ছেলেটা তো দেখি ভালোই কথা জানে।
– হুমমম…বাই আপু/ম্যাম/ জানু..
– ঐ দাড়া..
আমি আর কোনো কথা না বলেই সেখান থেকে চলে আসি। এতক্ষন যার সাথে কথা বললাম সে হল রিমি। পড়ে অনার্স ২য় বর্ষে ।
সারাদিন ছেলেদের দৌড়ের উপরে রাখে। কিন্তু আমি আবার কি করলাম ওর কাছে?
ক্যামপাসে বসে বসে বাদাম খাচ্ছি তখনি এসে উনি বকবক করা শুরু করে দিছে। যা অসহ্য লাগাতে চলে আসলাম।
(পরেরদিন)
– ঐ ছেলে..(রিমি)
– আবার??
– হুমম…খাবা?
– কিস???? (শয়তানের হাসি হেসে)
– ঐ কি বললি…কিস মানে?
– আচ্ছা খেয়ে দেয়ে আপনার কাজ নাই? খালি আমার পিছে পড়ে আছেন। আর কি খাবো হুমম?
– মার খাবা??
– কেনো খাবো?
– ফেসবুকে কি স্ট্যাটাস দিছো হুমম??
– কি স্ট্যাটাস মানে?
– ন্যাকা..জানো না বুঝি?
– নাহ জানিনা…
– তাই…তাহলে এটা কি… “বড় আপুদের প্রেমে পড়ার জন্য যদি কোনো ক্লাস থাকে আমি সেখানকার স্টুডেন্ট”, এসব কি স্ট্যাটাস হুমমম??
– ওহ,,তবে আমার ফোন, আমার আইডি,আমার ইচ্ছে আমি যেমন খুশি তেমন স্ট্যাটাস দিবো। তাতে আপনার কি?
– আমার কি মানে? যদি কোনো বড় আপু এটা দেখে তোমার উপর ক্রাশ খাই তখন কি হবে?
– কি হবে মানে? আর কার কি হবে?
– ওরে এই হাদারাম কে কেউ এক বদনা পানিতে চুবিয়ে মার। আমার হবে বুঝছো?
– হাহাহাহাহা…
– হাসিস কেনো হাদারাম?
– আপনার কি হবে? কেনো হবে?
কথাটি বলে চলে আসতে যাবো তখনি রিমি হালকা চিৎকার করে বললো..
– আমারই তো হবে। কারন, আমি যে তোমাকে ভালোবাসি।
– কিহহহ…? (আমি)
– হুমম
– হাহাহাহা..
– ঐ আবার হাসো কেনো?
– আমি বাসবো না,,গ্রহনও করবো না..কারন, এমন গুন্ডি মেয়েকে আমি চাই না।
– ঐ আমি গুন্ডি?
তখনি রিমির চোখের দিকে তাকালাম। চোখে রাগের আভা ফুটিয়ে তুলে কাধে ঝুলে থাকা ব্যাগ এ কি যেনো খুজতে লাগলো..
আমি ভাব খারাপ তাড়াতাড়ি হেটে চলে আসলাম সেখান থেকে।
আমি খুব ভালো করেই জানি রিমি খুব রাগি ও গুন্ডি টাইপ মেয়ে। যে ছেলে ওকে প্রপোজ করেছে তার নাক এর বদনা উড়িয়ে দিয়েছে এক ঘুসিতে।
কিন্তু ও কেন আমার পিছনে পড়লো? আর কিভাবে জানে আমার স্ট্যাটাস সম্পর্কে? তাহলে কি সে আমার ফ্রেন্ড লিষ্টে আছে? হয়ত তাই হতে পারে।
না হলে তো জানার কথা না।
।।
পরেরদিন ক্যামপাসে বসে বসে গল্প লেখার চেষ্টা করছি। তখনি কোথা থেকে যেনো আমার মাথায় একটু ছোট ইটের টুকরো এসে পড়লো। তখনি..
– ও মাগো..কোন শালা রে? সাহস থাকলে সামনে আয়। (আমি চিৎকার করে বললাম)
– হাহাহাহাহাহা….
হাসির শব্দশুনে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি রিমি হাসছে। তখনি বুঝে গেলাম কাজটা ওরই.. কাছে যেয়ে বললাম..
– ঐ কি প্রবলেম কি তোমার?? (আমি)
– আমি কিন্তু শালা না..
– চুপপ বেয়াদপ,,
– বেয়াদপও না,,জানু বলো..
– ধুররর..
– ঐ শোনো..
(কমোরে হাত পেচিয়ে)
– কি শুনবো…
– স্ট্যাটাস টা ডিলিটা দিবা।
– কোন স্ট্যাটাস?
– ঐ যে ঐ স্ট্যাটাস…
– পারবো না,,আর কেনো?
– কাল রাতে দেখলাম একটা মেয়ে কমেন্ট করে বলেছে, “আমি কিন্তু বড় আপু, চাইলে….”
– হুমম তো??
– ভালোবাসি…
– হুমম..বাই..
এভাবেই চলে যাচ্ছিলো দিনকাল। রিমির গুন্ডামি স্বভাব আর রাগি রাগি চেহারার মায়াতে আমিও ফেসে গেলাম।
মায়াজালে কেন পড়বো না..সুন্দরী মেয়েদের রাগি চেহারাতে যেকোনো ছেলে তাড়াতাড়িই ক্রাশ খাবে।
তাই আমিও আসতে আসতে ওর মায়াজালে টুপ করে ধরা পড়ে গেলাম।
.
– নিলয়..
– হুমম
– একটা গল্প শুনবে?
– নাহ..
– প্লীজ শোনো না..
ক্যান্টিনে বসে বসে ফেসবুকিং করছি। তখনি রিমি এসে আমার সামনের চেয়ারটাতে টুপ করে বসে কথাগুলো বললো..
– আচ্ছা বলো..
– তবে তার আগে শোনো আমি কেনো তোমাকে জ্বালায়..
– হুমম ঠিক..
– তুমি একদম আলাদা..কারো সাথে মিশো না। একা থাকো,,চুপচাপ থাকো..তোমার বোকা বোকা চেহারা..
গোল চোখের চশমা আর মাথা ভর্তি চুলে আমি এক ভালোলাগার মাঝে পড়ে যায়। রোজ তোমাকে ফলো করি,,তোমাকে দেখি,
এর মাঝে কখন যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতে পাইনি..আমি তোমাকে সত্যিই ভালোবাসি।
– হুমম..আমিও বাসি তবে আজ বলবো না কাল তোমাকে স্পেশালি জানাবো..(মনে মনে বললাম)
– এখন গল্পটা শোনো..
– হুমম..
কিছুক্ষণ নিরব থেকে দীর্ঘ একটা নিশ্বাস নিয়ে রিমি বলতে লাগলো..
– জানো নিলয়..আমি জানিনা আমার মা বাবা কে। আমি জানিনা তারা কেমন দেখতে।
আর এটাও জানিনা কেনো আমার সাথে এমন হলো..শুধু জানি আমি এতিম কেউ নেই আমার..
জানি আমি, এক রিকশাওয়ালা কোনো এক রাস্তার পাশে আমাকে কুড়িয়ে পায়।
রাতে উনি রিকশা চালানোর সময় আমার কান্নার আওয়াজ শুনতে পাই। তারপর উনি আমাকে ওনার কাছেই রাখে।
আমি তাদের কাছে মানুষ হয়। অনেক কষ্টে আমি এখানে এসেছি।
তুমি চাইলে আমাকে ভালো নাও বাসতে পারো..কিন্তু আমি আর কোনোদিন তোমাকে জ্বালাবো না।
আমি চাই না কেউ আমার জন্য বিরক্ত ফিল করুক। সবাই তো আর ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
আমার সেই যোগ্যতা হয়ত নেই। ভালো থেকো..।
.
কথাটি বলেই রিমি হনহন করে চলে গেলো। ব্যাগে থাকা রুমালে চোখটা মুছতে মুছতে সে চলে গেলো।
আমিও কখন যে কেদে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি। কিন্তু পাগলিটা তো জানেনা,,ওর রাগি চেহারার মায়াতে যে আমি অনেক আগেই পড়ে আছি।
শুধু ওর হাতে হাত রেখে উঠাটাই বাকি। মুচকি হেসে মনে মনে বললাম..
– আমিও যে তোমাকে ভালোবাসি রিমি। কাল তোমাকে সবই জানাবো…
(পরেরদিন)
শহীদ মিনারের উপর বসে বসে বাদাম খাচ্ছি..দুর থেকে দেখি রিমি আসছে। মুখে লেগে আছে সেই মায়াবী হাসিটা।
যে হাসির প্রেমে আমি ছন্নছাড়া। কাছে যেয়ে বললাম..
– রিমি..
– ওহহ তুমি?? (চমকে উঠে)
– হুমম..
কিছুক্ষন চুপ থেকে বলা শুরু করলাম..
– হয়ত তোমার কাছে এটা ফান মনে হবে। আবার ভাবতে পারো এটা আবার হয় নাকি?
কিন্তু সত্য বলতে আমিও যে তোমার ঐ পাগলামোতে ফেসে গেছি। অনুভব করতে পারি আমি তোমাকে।
তোমার কথা ভাবলে আমার কেনো জানি হৃদস্পন্দন ঢিপ ঢিপ করতে থাকে। এটাকে কে কি বলে জানিনা..তবে আমি বলছি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
– হাহাহাহা….
– হাসির কিছু বললাম..? (আমি)
– ভালোবাসো? হিহিহি..এটা ভালোবাসা না..করুনা। আমার কথাথা শুনে আমাকে করুনা করছো..
-ঠাসসসসস…
কষে রিমির গালে একটা চড় দিলাম। বলে কি মেয়েটা? আমি নাকি করুনা করছি? সেকি বুঝতে পারছে না এটা ভালোবাসা?
– মারলে কেনো আমায়…? (রিমি)
– চুপপ..চলো..
– কোথায়..
– কাজী অফিসে..
– কীহহহ…?
আমি আর কোনো কথা না বলে ওর ডান হাতটা শক্ত করে ধরলাম। সে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
টানতে টানতে ওকে কলেজ থেকে বের হলাম। উদ্দেশ্য কাজী অফিস। সে তখনও আমার দিকে তাকিয়ে আছে পলকহীন ভাবে।
থাকুক তাকিয়ে, আজ বুঝিয়ে দেবো করুনা , না এটা,,শুধুই ভালোবাসা….