শহরের একটি হাই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ে রোহন । নতুন ভর্তি হয়েছে । গ্রামের স্কুলেই পড়েছে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত । থাকতো মামা বাড়িতে । দিদিমার কাছে । দিদিমা হঠাৎ মারা গেলেন । তাই শহরে বাবা মায়ের কাছে আগমন ।
হাই স্কুলে প্রধাণ শিক্ষক নেই । একজন শিক্ষক দায়িত্বে আছেন । নিয়মকানুন শিথিল । ক্লাশ হয় অনিয়মিত । বিদ্যালয়ের চারিদিকে প্রাচীর নেই । স্কুল থেকে পালিয়ে যায় অনেকেই । তার জন্য শাস্তিও নেই ।
নতুন স্কুলে অনেক বন্ধু জুটলো রোহনের । কিন্তু পড়াশোনার পরিবেশ দেখে মনটা বিষন্ন । হঠাৎ একদিন রব উঠলো স্কুলে নতুন প্রধাণশিক্ষক আসবেন । ঘটলোও তাই । দু একদিন পরেই ধুতি পাঞ্জাবি পরিহিত সৌম্যদর্শন এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক বিদ্যালয়ের প্রধাণশিক্ষক হয়ে যোগদান করলেন । প্রথম দর্শনেই সকল ছাত্রছাত্রী শিক্ষককর্মচারীর মন জয় করলেন তিনি । বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ফিরে এলো দু এক দিনেই । সমস্ত ক্লাশ ঠিকমতো হয় । স্কুল সময়মতো বসে । ছেলেরা আর স্কুল থেকে পালিয়ে যায় না । প্রধাণ শিক্ষক ঘুরে ঘুরে গোটা স্কুল প্রদক্ষিন করতে থাকেন । দেখেন সময়ের কাজ সময়ে এবং যেখানকার কাজ সেখানে হচ্ছে কি না ।
রোহন যখন সপ্তম শ্রেনীতে, প্রধাণ শিক্ষক প্রথম তার ক্লাশে এলেন । ইংরাজি বিষয়ের শিক্ষক হিসাবে । কি স্পষ্ট উচ্চারণ । কতো সুন্দর সাবলীলভাবে তিনি ইংরাজি বিষয়টি পড়ালেন । ইংরাজি বিষয়ে অনেকেরই ভীতি ছিলো । কিন্তু সেদিন প্রধাণশিক্ষকের ক্লাশে কি জাদু ছিলো যে অনেকেরই ইংরাজিভীতি কেটে গেলো ।
পরের পিরিয়ডে তিনি ক্লাশের সকলকে লাইব্রেরিতে নিয়ে গেলেন । সেখানে অনেক ছবি সহ সুন্দর সুন্দর ইংরাজি গল্পের বই ছিলো । ক্লাশের সকলকে এরকম বই দিলেন তিনি । বড়ো বড়ো হরফে লেখা । সুন্দর সুন্দর গল্প । সকলেই খু্ব খুশি হয়ে গল্পগুলি পড়তে লাগলো । প্রধাণ শিক্ষক বললেন লাইব্রেরিতে এরকম অনেক বই আছে । প্রয়োজনে আরো বই কেনা হবে। ছাত্রেরা বইগুলি বাড়ি নিয়ে যেতে পারবে । একটি বই পড়া হলে সেটি জমা দিয়ে অন্য বই নিতে পারবে ।
যে ইংরাজি ভাষাকে রোহন এবং তার বন্ধুরা যমের মতো ভয় করতো, এক নিমেষে সেই ভয় উবে গিয়ে ইংরাজি ভাষাকে ভালোবাসতে শুরু করলো তারা । গোগ্রাসে কিছু বই পড়লো । বাড়ি নিয়ে আসলো একটি করে বই । এবং এরকমটা চলতে থাকলো । ধীরে ধীরে শুধু ভালোবাসায় নয়, জ্ঞানের দিক থেকেও তারা ইংরেজি ভাষায় বেশ পটু হয়ে উঠলো ।
সেদিন টিফিন পিরিয়ডে অরুণ বলছিলো, “জানিস রোহন, একটি বিষয় সহজ বা কঠিন হয়ে যায় যে শিক্ষক সেই বিষয়টি পড়াচ্ছেন তিনি রাগী বা সরল তার ওপর ভিত্তি করে ।”
রোহন সায় দেয়, “ঠিক বলেছিস ! যে স্যারকে ভয় করি, তাঁর বিষয়টা শেখা হয় না । কিছু জিজ্ঞেস করতে ভয় হয় ।”
বিক্রম বলে, “আমারও সেই কথা । হেড স্যার আমাদের ভালোবসেন । তাই তাঁর পড়ানো বিষয়টাকেও আমরা ভালোবাসি । যা ভালোবাসি, তা কঠিন হতেই পারে না ।”
ভোলা ফোড়ন কাটলো, “ইস, সব স্যার কেন হেড স্যারের মতো হয় না !”
ঢং ঢং করে টিফিন শেষের ঘন্টা বেজে উঠলো । রোহন বলে উঠলো, “চল চল দৌড় লাগা । এখন হেড স্যারের ইংরাজি ক্লাশ।”