এক ব্যক্তি মুরগীর দোকানদারের কাছে যবেহকৃত একটি মুরগী নিয়ে এসে বলল, ভাই এটা কেটে কুটরো টুকরো করে দিন।
দোকানদার বলল, ঠিক আছে ১০ মিনিটের মধ্যে আপনি ফিরে আসুন, দেখবেন সব প্রস্তুত। মুরগী রেখে লোকটি অন্য কাজে গেল।
এর মধ্যে দোকানদারের কাছে এলাকার কাজী (বিচারপতী) সাহেব এসে হাজির।
কাজী: আমাকে একটি মুরগী দাও।
দোকানদার: জনাব আমার কাছে এখন কোন মুরগী নেই। সব শেষ হয়ে গেছে।
কাজী: তুমি যেটা কাটছো সেটাই দিয়ে দাও।
দোকানদার: না, এটা তো উমুক লোক দিয়ে গেছে। একটু পরে সে চাইবে।
কাজী: এটাই দিয়ে দাও। সে ফিরে আসলে বলবে তোমার মুরগী উড়ে চলে গেছে।
দোকানদার: হতভম্ভ! বলেন কি? সে তো যবেহকৃত মুরগী আমাকে দিয়ে গেছে? উড়ে গেছে একথা কিভাবে বলতে পারি?
কাজী: শোন, আমি যা বলছি, তুমি তাই বলবে। বেশী ঝামেলা করলে, বলবে তুমি কেস কর, কাজীর কাছে যাও। পরে আমি দেখে নিব।
এবার লোকটি এসে দোকনদারকে বলল, ভাই আমার মুরগীটি দিন।
দোকানদার: ভাই তোমার মুরগী তো উড়ে গেছে।
মুরগী ওয়ালা: বল কি তুমি? তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? যবেহকৃত মুরগী আমি তোমাকে দিয়ে গেলাম, আর তুমি বলছ উড়ে গেছে?!
এ নিয়ে দুজনের মাঝে ভিষণ ঝগড়া হল। শেষ পর্যন্ত দোকানদার বলল, চলো আমরা কাজীর কাছে যাই। তিনি আমাদের সঠিক বিচার করে দিবেন।
একথা বলে দুজন কাজীর কাছে যাওয়া শুরু করল। তারা রাস্তায় দেখতে পেল দুজন লোক মারামারি করছে। একজন মুসলিম, আরেকজন ইহূদী।
দোকানদার দু’জনের মারামারি ঠেকাতে গেল। কিন্তু ঘটনাক্রমে ইহূদীর চোখে সে আঙ্গল ঢুকিয়ে দিল। ফলে তার একচোখ নষ্ট হয়ে গেল।
এবার উপস্থিত লোকেরা তাকে পাকড়াও করে ফেলল। এখন তার বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগ।
কোর্টের কাছাকাছি পৌঁছে দোকানদার তাদের হাত থেকে ছুটে পালিয়ে গেল। আর ধরার জন্য লোকেরা তার পিছনে ছুটতে লাগল।
ছুটতে ছুটতে সে একটি মসজিদে ঢুকে পড়ল। তারপর সেখান থেকে মসজিদে মিনারার উপর উঠে গেল। লোকেরা যখন তাকে ধরে ফেলব এমন অবস্থা,
তখন সে মিনারা থেকে নীচে লাফ দিয়ে পড়ল। কিন্তু নীচে ছিল জনৈক বৃদ্ধ। গিয়ে পড়ল তার উপর। ফলে বৃদ্ধ মারা গেল।
এবার দোকানদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ হল ৩টি।
(১) মুরগী আত্মসাত
(২) ইহূদীর চোখ নষ্ট করা।
(৩) মানুষ হত্যা।
সবাই মিলে তাকে নিয়ে গেল কাজীর কাছে।
কাজী সবশুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। চিন্তা করতে লাগল কি করা যায়।
বলল, তোমরা একটা একটা করে কেস নিয়ে আস।
প্রথমে মুরগী ওয়ালা।
কাজী: কি অভিযোগ তোমার দোকানদারের বিরুদ্ধে?
: সে আমার মুরগী আত্মসাত করেছে। আমি তাকে যবেহকৃত মুরগী দিয়েছি। অথচ সে বলছে, মুরগী নাকি উড়ে পালিয়ে গেছে। এটা কিভাবে হতে পারে?
কাজী: তুমি কি আল্লাহকে বিশ্বাস করো?
: হ্যাঁ, অবশ্যই আল্লাহকে বিশ্বাস করি।
কাজী: আল্লাহ গলিত হাড়-হাড্ডিকে জীবিত করার ক্ষমতা রাখেন, এটা বিশ্বাস করো?
: হ্যাঁ, বিশ্বাস করি।
কাজী: হয়তো তোমার মুরগী আল্লাহর কুদরতে উড়ে চলে গেছে।
অতএব তোমার বিচার শেষ।
দ্বিতীয় অভিযোগকারীকে নিয়ে আসো।
ইহূদী এসে অভিযোগ করল, দোকানদার আমার চোখ নষ্ট করেছে। আমি বিচার চাই।
কাজী অনেকক্ষণ চিন্তা করার পর বলল, দেখো ইসলামী আইন অনুযায়ী কাফেরের ক্ষেত্রে মুসলিমকে অর্ধেক দিয়ত (রক্তপণ) দিতে হয়।
এখন আমরা তোমার দ্বিতীয় চোখটি নষ্ট করব। যাতে তুমি তার একটি চোখ নষ্ট করতে পার।
ইহূদী বলল: থাক আমার বিচার লাগবে না। আমি দাবী ছেড়ে দিলাম।
কাজী বললেন, তৃতীয় অভিযোগকারীকে নিয়ে আস।
বৃদ্ধের ছেলে বলল, দোকানদার আমার পিতাকে হত্যা করেছে। সে মিনারার উপর থেকে আমার পিতার উপর লাফ দিয়ে পেড়ছে।
ফলে তিনি মারা গেছেন। আমি এর বিচার চাই।
কাজী: ঠিক আছে, তোমরা এই ছেলেটিকে মিনারার উপর নিয়ে যাও। তুমি উপর থেকে দোকানদারের উপর লাফ দিয়ে পড়বে। ফলে সে মারা যাবে।
তোমার বিচার শেষ।
ছেলেটি বলল, দোকানদার যদি ডানে বা বামে সরে যায়, তবে তো আমি নিজেই মারা যাব।
কাজী: সেটা আমার সমস্যা নয়। তোমার পিতা কেন ডানে বা বামে সরে গেল না?
ছেলেটি বলল, আমার বিচার দরকার নেই।
কোন দেশে যদি এরকম কাজী/বিচারক থাকে, তাহলে ঐ দেশের অবস্থা কেমন হবে? আর বিচারক যদি এমন হয়, তবে বিচার চাইবেন কার কাছে?