তাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো একটি পাবলিক টয়লেট এর সামনে।
প্রকৃতি যখন তাদের ঘাড় ধরে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য ডাকছিলো….,
তখন দুজন বাধ্য হয়ে পাবলিক টয়লেট এর লম্বা লাইনে দাড়াতে বাধ্য হয়।
.
হঠাৎ করেই তুলন এর চোখ যায় একটু দূরে দাঁড়ানো মহিলাদের লাইনের দিকে, একটা অসম্ভব সুন্দরী মেয়ে সাদা ড্রেস পড়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে।
তুলন এর কাছে ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগে।সে হা করে ঐ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে।
মেয়েটা হঠাৎ করেই লক্ষ্য করে একটা ছেলে অন্য পাশের লাইন থেকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
.
টয়লেট পর্যন্ত পৌঁছানোর বাকি সময় সারাক্ষন তুলন ঐশীর দিকে তাকিয়ে ছিলো।ঐশীও মাঝে মাঝে তাকিয়ে দেখছিলো।
একবার তো মুচকি হাসি দিয়ে দিলো।ঐ একটা হাসিতে তুলনের যা হবার হয়ে গেল।
.
কাকতালীয় নাহয় ভাগ্যের পরিণতি ঠিক এক সপ্তাহ পরে ঐ পাবলিক টয়লেটের সামনেই আবার দুজনের দেখা হয়।
সেইদিন একে অপরের দিকে তাকানোর সাথে যোগ হয় ঐশীর মুচকি হাসি।
.
ঐদিনের পর তাদের পরিচয় হয়।ঐশী নিয়মিত ঐ পার্কে আসতো তুলনও আসতো ঐশীকে দেখার জন্য।
তাদের কথা হতো, একসাথে আড্ডা দিত।তুলন একসময় বুঝতে পারে সে ঐশীর প্রেমে পড়ে গেছে।
.
যে মেয়ে কথা বললে মনে হয় আনন্দ ঝরাচ্ছে,যার হাসিতে সিগ্ধতা লুটিয়ে পড়ে,যার চোখে নীল সমুদ্র যে কেউ এমন মেয়ের প্রেমে পড়ে যাবে।
আর তুলন সেখানে সাধারন একটা ছেলে।তুলন বুঝতে পারে ঐশীও তার উপর দূর্বল হয়ে পড়েছে।
.
অনেক ভেবেচিন্তে তুলন সিদ্ধান্ত নেয় ঐশীকে প্রপোজ করবে।নির্দিষ্ট দিনে ঐশীকে দেখা করতে বলে,একগুচ্ছ ফুল নিয়ে তুলনও হাজির হয়।
ঐশীর হাতে ফুলগুলো দিয়ে বলে;
.
‘ফুলগুলো তোমার জন্য?’
.
‘ইশ! অনেক সুন্দর,ধন্যবাদ।’
.
‘আমি যদি এই ফুলের থেকেও সুন্দর মেয়েটাকে চাই তাহলে?’
‘বুঝলাম না! ভালো করে বলো?’
.
‘আমি তোমাকে ভালোবাসি।’
.
‘কিহ!!’
.
‘হ্যা আমি তোমাকে ভালোবাসি।জানি না কতদিন তোমার পাশে থাকতে পারবো।
কিন্তু যতদিন তোমার কথা ভেবে আমার এই হৃদয় রক্ত সঞ্চালন করে যাবে ততদিন তোমার হাত ধরে রাখবো।সেই সুযোগ কি আমি পেতে পারি না।’
.
‘হুমম।ভাবার বিষয়।’
.
‘চিন্তা পরে করো।আমার টেনশন হচ্ছে! তাত্তাড়ি বলো?’
ঐশী মুচকি মুচকি হাসছে।এদিকে তুলন এর অবস্তা খারাপ। ভয়ে বোধ হয় ঐ টয়লেট এর দিকে দৌঁড় দেয় নাকি।
.
‘আচ্ছা সুযোগটা দিলাম।’
.
তুলন তো খুশীতে লাফ দিয়ে উঠলো।আনন্দে যেই ঐশীকে জড়িয়ে ধরতে যাবে। ঐশী বললো;
.
‘থামো! থামো!’
তুলন লজ্জা পেয়ে থেমে গেলো।
.
‘লজ্জা পেতে হবে না।দেখছো না এখানে অনেক মানুষ।এখন না পরে!'(কিঞ্চিত লজ্জার সুরে)
ঐশীর কথা তুলন সাহস পেয়ে যায়।হঠাৎ করে জড়িয়ে ধরে ঐশীকে।বুকের মাঝে পরম স্নেহে টেনে নেয়।
.
লোকজন দেখতে পায় একটা ছেলে আর অসম্ভব সুন্দরী একটা মেয়ে পার্কের এত্তো মানুষের মাঝে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আছে।ব্যাপারটা লক্ষ্য করার মতো।
সম্পর্কের এক সপ্তাহ পর।ঐশী বলে;
.
‘তুলন, আমার বান্ধবীরা তোমার সাথে দেখা করতে চাচ্ছে?’
.
‘আচ্ছা ঠিক আছে।কবে কোথায় জানিও দিয়ে আমি চলে আসবো।’
.
‘আজকে বিকেলে।আমাদের প্রিয় রেস্টুরেন্ট এ।পাচঁটার সময় চলে আসবা?’
.
‘আচ্ছা আসবো।’
.
তুলন গিয়ে তো অবাক! ঐশীর ফ্রেন্ড ছিলো দশ জন।তুলন একটু নার্ভাস হয়ে পড়ে।
মনে মনে চিন্তা করে -মেয়েগুলো আজ আমার সাথে কি যে করে।ঐদিকে পকেটেও খুব বেশি টাকা নেই।ঐশী বলে -‘দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো।’
তুলন বসে পড়ে।ঐদিকে ঐশীর এক বান্ধবী ডাক দেয়;
-‘তুলন ভাইয়া কেমন আছেন?’
.
তুলন তার চেয়ারে একটু নড়ে চড়ে বসে।বিপদটা ঘটলো তখুনি।আস্তে করে ‘পুউউত’ শব্দের একটা সুর ওঠে।তুলন কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঐশীর বান্ধবীরা ছিহঃ করে উঠে।
.
‘ছিহ! ভাইয়া এত্তোগুলো মেয়ের সামনে আপনার লজ্জা করলো না।’
.
কথাটা বলেই তারা নাকের সামনে হাত নিয়ে নাড়াতে থাকলো।
তুলন কিছু বলতে যাবে ঐ সময় ঐশী বলে উঠলো;
.
‘ছিহ, তুলন তোমার থেকে আমি এটা আশা করিনি।আমার বান্ধবীদের সামনে আমার মান সম্মান শেষ করে দিলে।’
.
‘ঐশী, আমি করলাম টা কি? আমি তো শুধু…’
.
কথা শেষ করতে দিলো না ঐশি।রাগান্বিত ভাবে বলে উঠলো;
.
‘তোমার সাথে ব্রেক আপ।এরকম নির্লজ্জ ছেলের সাথে কোন ভাবেই রিলেশন রাখা যায় না।এই তোরা চল।’
.
তুলন কিছু বুঝে উঠার আগেই ঐশী তাদের বান্ধবীদের নিয়ে চলে গেল।তুলন ভাবলো কি এমন নির্লজ্জের মতো কাজ করেছে সে?
সে তো শুধু চেয়ারটা একটু টেনে বসেছে আর চেয়ারটা টানার সময় ‘পুউউত’ করে একটা শব্দ হয়েছে, ব্যাস।