দূর্নীতিবাজ বউ

দূর্নীতিবাজ বউ

—মা খুব ক্ষুদা পাইছে খেতে দাও।
—আজ থেকে তোর কোন খাবার নেই।
–কেনো মা কী করছি।
—বিয়ে না করলে আর কোন খাবার হবে না তোর।
—কী বলো এসব মা।তোমাকে না বলছি বিয়ে টিয়ে আমার টানে না।আমি যেমন আছি তেমনই ভাল।
—তুই বিয়ে করবি না তো।
–না মা এখন করতে পারবো না।
>কথাটা শেষ না করতেই মা রাগ করে উঠে গেলো।আমি মাহিন বড় একটা কম্পানিতে জব করি।

প্রতিদিন বিয়ে বিয়ে করে মাথা খারাপ করে দেয়।ভাল লাগে এসব।এমনিতেই ক্ষুদা লাগছে ভাত না খেলে আমার মাথা ঠিক থাকে না।

এর মধ্যে শুধু বিয়ে বিয়ে করে।
.
কিছুক্ষন পরে,,,
–এই নে খা এগুলো? (নিপা)
[আমার বোন]
—শসা কেন,ভাত কই ভাত খাবো।
–মা বলেছে বিয়ে না করলো ভাত বন্ধ।
—এইসব যুক্তি তুই মা কে দিছিস না।
—আমি দিবো কোন দুঃখে,মা নিজেই বলেছে সব।
–ঐ তুই কী আমার মা”র পেটের বোন,নাকি আমার শত্রু, তুইও এমন করছিস।যা ভাত নিয়াই।
–পারবো না।মা”র নিষেধ আছে।
–ঐ যা মারে ডাক।
–মা,মা,ওমা ভাইয়া তোমারে ডাকে।
–কী বলবি বল। ( মা)
—বিয়ে না করলে হয় না। (আমি)
–না হয় না,আমি বুড়ো হয়ে গেছি কবে না জানি চলে যায়।
—কী বলছো এসব মা।
—ঠিকই বলছি, মরার আগে একটু নাতিপুতির মুখটা দেখে যাওয়ার সুযোগ দে।
—ওকে মা আমি বিয়েতে রাজি।তবুও তুমি এমন বাজে কথা বলো না।
—সত্যি বাবা তুই রাজি।
—হ্যাঁ মা আমি রাজি।এবার আমার ভাত দাও।
—নিপা যা তো তোর ভাই কে ভাত দে। আর বাবা মাহিন কালই আমরা মেয়ে দেখতে যাবো।
—কালই যেতে হবে।
—হুমম,,কালই,,শুভ কাজে দেরি করতে হয় না।
>কথাটা বলেই মা চলে গেলো।আমার মা আর বোন তো খুব খুশী।যাইহোক এবার পেট পুরে আগে ভাত খেয়েনি।
.
শাহীন কে ফোন করলাম,যদি কোন সামাধান দিতে পারে।শাহীন আমার ছোট বেলার বন্ধু।বিপদে পড়লেই ওকেই সব বলি,

আর ও আমাকে হেল্প করে।
—দোস্ত তুই কই? (আমি)
—আমি ঝিনাইদহর বাইরে, ঢাকাতে আছি একটা কাজে।কেন কোন দরকার? (শাহীন)
—আসলে মা তো আবার বিয়া দিয়ে নিয়ে উঠে পরে লাগছে,একটা উপায় বলে দে কী করব।
—কী করবি আবার,বিয়ে করে নে,বয়স তো আর কম হলো না।
>ও কথাটা শেষ করতে না করতেই আমি ফোন কেটে দিলাম।আমি আছি আমার জ্বালায়, আর ও মজা নিচ্ছে।ফাজিল কুনহানের একটা।
.
>এখন আমি মেয়ের বাসায় বসে আছি,সাথে মা,আর বোনটাও আছে,আর মেয়ের বাবা মা।

মেয়ের বাবা আমাকে এমন ভাবে দেখছে মনে হচ্ছে আমি কোন ভিনগ্রহের প্রানী।
কিছুক্ষনের মধ্যেই মেয়ে ইয়া বড় ঘোমটা দিয়ে চলে আসলো,হাতে সরবতের গ্লাস।যাক বাবা বাচা গেলো যে না গরম

পড়ছে মেয়েটার বেশ ভালই বুদ্ধি আছে।আমার কষ্টটা একটু বুঝেছে।
.
আমার মা মেয়েটা কে কিছু প্রশ্ন করল-
—তোমার নাম কী?
–আমার নাম জান্নাতুল ফেরদৌস।
—কিসে পড় তুমি?
—অনার্স ২য় বর্ষে।
>এভাবে আরো কিছু প্রশ্ন করার পর,আমাকে আর জান্নাত কে গোপন করে পাঠানো হলো নিজেদের মধ্যে কথা বলতে।
.
জান্নাত আর আমি এখন একরুমে।আমার ভীষন লজ্জা পাচ্ছে, কী করব বুঝতেছি না থুক্কু বলবো।

আর মেয়েটা তো এখনো ঘোমটা দিয়েই আছে।কী লজ্জাবতি মেয়ে।এমনিতেই আমার এসব বিয়ে টিয়ে টানে না।

সিঙ্গেল থাকার মজাই অন্যরকম।মেয়েটার সাথে আমিই প্রথম কথা বলা শুরু করলাম-
–আপনার নাম টা অনেক সুন্দর।
–জান্নাত ছোট্র করে উত্তর দিলো ধন্যবাদ।
–আমাকে কী আপনার পছন্দ হয়েছে।
>কথাটা শেষ না হতেই জান্নাত ঘোমটা সরিয়ে এসে আমার কলার চেপে ধরে বলল-
–আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।
[আমি মনে মনে ভাবছি এই মেয়ে তো কিছুক্ষন আগে লজ্জাবতী ছিলো,হঠাৎ করে এমন রাগকুমারী হইলো কিভাবে]
–আমিও তোতলাতে তোতলাতে বললাম আমিও বিয়ে করব না।এবার তো কলার টা ছাড়ুন।
>>জান্নাত আমার কলার ছেড়ে দিয়ে বলল-
—তাহলে আমাকে দেখতে এসেছেন কেনো।
—আমি তো আমার মায়ের জোড়াজুড়ি তে দেখতে এসেছি।এসব বিয়ে টিয়ে আমার দ্বারা হবে না।আপনি বিয়ে করবেন না কেনো?
–দেখুন আমার বয়ফ্রেন্ড আছে,আমি তাকেই বিয়ে করব।
–তাহলে চলুন দুজনে গিয়ে বলি আমরা কেউ কাউকে পছন্দ করিনি।
–একদম না।বেশী পন্ডিতি করবেন না। –তাহলে?
–গিয়ে বলব আমরা দুজনে দুজন কে পছন্দ করি।
—কিছুইতো বুঝতেছি না,একটু বুঝিয়ে বলুন তো।
—এই কথাটা বললে আমার মা বাবা আমাকে আর সন্দেহ করবে না,আর আমার বিয়ের রাতে পালিয়ে যেতে সুবিধা হবে।
—কী বুদ্ধি আপনার।আপনার পায়ের একটু ধুলো নিতে পারি।
–দেখুন বেশী বেশী করবেন না।চলুন এবার।
—একটা কথা বলতাম আপনি রাগ না করলে।
–বলুন কী বলবেন।
—আপনি না অনেক কিউটি।
–মাইর খাবার শখ হইছে নাকি।
–না,না,চলুন চলুন।
>দুজনেই হাসি মুখে গিয়ে বললাম আমরা বিয়ে করতে রাজি।এই কথা শুনে দুজনের পরিবারই ভীষন খুশী হলো।

তারপর দুই পরিবার মিলে বিয়ের তারিখ ঠিক করল।আমি তো শুধু মনে মনে হাসছি,কি যে আনন্দ লাগতেছে আমার।

এই বিয়েটা যখনই ভেঙে যাবে তখন আর মা আমাকে বিয়ের জন্য আর জোড়াজুড়ি করতে পারবে না,এই কথা ভাবতেই আমার যে কত মজা লাগছে।
.
বিয়ের দিন….
.
>আমি মুখে রুমাল দিয়ে বসে আছি।কি ভাবছেন লজ্জা করছে,আরে সেটা না মেয়েটা যে এতক্ষনে পগার পার সেটা ভেবেই হাসি পাচ্ছে,

লোকজন যাতে দেখতে না পাই তাই মুখে রুমাল দিয়ে মিটিমিটি হাসছি।
অবশেষে কাজি সাহেব আসলেন বিয়ে পড়াতে, আমি তো কাজি সাহেব বলার সাথে মনের সুখে নাচতে নাচতে কবুল বলে দিলাম তিন বার।

এবার সবাই মেয়ের কাছে যাচ্ছে।যাও যাও গিয়ে দেখবে মেয়ে উধাও,কি হবে এবার সবার সেটা দেখারই অপেক্ষায় আছি।
.
এর কিছুক্ষন পর কাজী সাহেব সহ সকলে মিলে চলে আসল।কিন্তু সবার তো হাসি হাসি মুখ, ব্যাপার টা কী।

কাজী সাহেব আমার সামনে এসে বসে পড়লেন,তারপর মোনাজাত ধরলেন,এবার তো আমার সন্দেহ হচ্ছে,বিয়ে টা করলাম কাকে।

মোনাজাত ধরে আছি আর মনে মনে বলছি আল্লাহ রক্ষা করো,কার সাথে বিয়া দিলা।

আমার তো কাঁদতে মন চাই।আমার জীবনটা তামা তামা হইয়া গেলো মনে হয়।
কাকে বিয়ে করছি সেটাই এখন আমার মাথায় ঘুড়ছে।
.
>এখন আমি বাসর ঘরে ঢুকবো,কিন্তু ঢুকতে মন চাইছে না,মন টা ভীষন খারাপ।এমনিতেই বিয়ে করব না,

তার উপরে বিয়ে করলাম তাও কাকে সেটা আমি নিজেই জানি না।তবে অনেকবার চেষ্টা করেছি মেয়েটা কে দেখার,

আসার সময় গাড়ীতেও অনেকবার দেখার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি তার ইয়া বড় ঘোমটার কারনে।
.
অবশেষে বাসার ঘরে ঢুকলাম,বাসর ঘরে ঢুকতেই মেয়েটা খাট থেকে নিচে নেমে এসে সালাম করল।আমি ভাল মন্দ না বলেই বলতে লাগলাম-
—এই যে আপনার ঘোমটা টা সরালে আপনাকে একটু দেখতাম।
—নিজের বউ কে দেখবেন, নিজেই ঘোমটা তুলে দেখুন। (মেয়েটা)
—আমি পারব না,আপনি তুলুন।তবে মেয়েটার কন্ঠটা কেমন চেনা চেনা লাগছে।
—আপনি না তুললে আমিও সরাবো না।
>নিজের মধ্যে বিরক্ত নিয়েই আমি চোখ বন্ধ করে ঘোমটা সরালাম।
—ওমা একি,জান্নাত তুমি?
—কেনো অন্য কাউকে আশা করেছেন বুঝি।
—তোমার না পালানোর কথা ছিলো।
—কার সাথে পালাবো?
—কেনো তোমা বিএফ।
—ধূর,ঐসব মিথ্যা কথা।আপনি বিয়ে করবেন না এটা আপনার মা আগেই বলেছিলো,

তাই এমন প্ল্যানিং করেছে আপনার মা,সব কিছু আপনার মা-ই আমাকে শিখিয়ে দিয়েছিলো।আর আপনাকেও

আমার পছন্দ হয়েছিলো তাই আর না করিনি।
>আমি জান্নাতের কথায় হাসব নাকি কাঁদব বুঝলাম না।মায়ের উপর ভীষন রাগ হচ্ছে।আমি জান্নাত কে বললাম-
—দেখো আমার সাথে দূর্নীতি করে বিয়ে করেছো।
—তো কী,তাহলে আমি তোমার দূর্নীতিবাজ বউ।
—না,না,না,আমি বিয়ে করব না।
—বিয়ে তো হয়ে গেছে,এখন পালাবে কোথায়।
>কথাটা বলেই জান্নাত আমাকে জড়িয়ে ধরল।
–জান্নাত ছাড়ো,নিজেকে সামলানো কষ্ট হয়ে যাবে।
–সামলাতে বলছে কে,জড়িয়ে ধরলেই তো হয়।
>আমিও আর পারলাম না নিজেকে সামলাতে,জান্নাত কে পরম আদরে জড়িয়ে ধরলাম,আর কপালে

আলতো করে চুমু একে দিয়ে বললাম-আমার দূর্নীতিবাজ বউ কে ভীষন ভালবাসি।
.
শুরু হলো নতুন জীবনের সূচনা,নতুন করে দুজনের একসাথে পথচলা।
.

গল্পের বিষয়:
হাস্যরস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত