এই যে ভাই কর্নেল সাইফুল সাহেবের বাড়ি আর কতদুর
-এইতো আর ৫ মিনিটের রাস্তা
*
এতো দৌড়ালাম তারপরও নাকি আরো ৫ মিনিট হাটতে হবে । এতো হাটা যায়। আর পা চলছে না ।
৫ মিনিট পর দেখছি একটা পুকুর । পুকুর পাড়ে একটা মেয়ে বসে আছে । এমা এটাও তো পরি । তবে এটা হলুদ পরি না ।
এটা নীল পরি । আহহ কি সুন্দর দেখতে । চোখ ফেরানো যায়না । কি অপরুপ । এইরেএএ মেয়েটা মনে হয় দেখ ফেলল
যে আমি ওর দিকে হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি । আস্তে আস্তে মেয়েটার কাছে গেলাম । কিছু বলছিনা শুধু হা করে হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছি ।
মেয়েটা এবার বিরক্তমাখা মুখ নিয়ে বলল..
-এভাবে হ্যাবলার মতো হা করে তাকিয়ে আছেন কেন..মুখে হাতি ঢুকে যাবে ।
-নিশ্চুপ(মুখটা বন্ধ করলাম)
-কি চাই
-দেখছি
-কি দেখেন
-পরি
-কিহহ
-নীল পরি দেখছি
-ও হ্যালো…আপনার সমস্যা কি…(বলেই মেয়েটা আমার চোখের সামনে তুরি বাজালো) এতোক্ষণে আমার ঘোর কাটলো ।
-আপনি কে
-আমি কে আপনাকে বলতে যাব কেন
-একটা হেল্প করতে পারবেন
-আপনি মহা পাজি আপনাকে হেল্প না করাই ভালো
-প্লিজ একটা হেল্প করেন
-আচ্ছা বলুন
-সাইফুল সাহেবের বাড়ি কোথায়
-কোন সাইফুল
-কর্ণেল সাইফুল মেয়েটা কি যেন ভেবে বলল
-সে তো আরো ২ কিমি দুরে
-কিন্তু একটা লোক তো বলল এখানেই
-এখানে না হয়তে লোক ভুল বলেছে
-ওওহহহ
-২ কিমি দুরে দেখবেন একটা বাজার আছে । সেখানে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দিবে
-আরো ২ কিমি ।
আমিতো শেষ ।
-শেষ না সবে তো শুরু
-কিছু বললেন
-না কিছু বলিনি
-আচ্ছা তাহলে আসি পরি
-বাই…
আরো দুই কিমি হাটতে হবে ভাবলেই গা শিউরে উঠছে । একটা খালি গাড়িও পাচ্ছিনা । নীল পরির কথা ভাবছি ।
এইবার যদি দেখা হয় । তাহলে প্রোপজ করব । এই যা নামটাই তো শোনা হলনা । এসব ভাবতে ভাবতে বাজারে এসে পোছলাম ।
এক লোক কে জিজ্ঞেস করলাম ।
-ভাই কর্ণেল সাইফুলের বাড়ি কোনটা
-তার বাড়ি তো আপনি ছেড়ে এসেছেন দুই কিমি আগে
-কিহহহ
-হ্যা দুই কিমি পিছনে তার বাড়ি
*
ওরে বজ্জাত মাইয়া তোরে একবার হাতের কাছে পাই । তোর পা ভেঙ্গে ফেলমু । আমারে এতদুর ঘুরাইছস এর প্রতিশোধ আমি নিমু ।
তোর কপালে শনি আছে । তোরে বিয়া কইরা নিয়া যামু ।
-ভাই আপনি একটা গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারবেন
-আচ্ছা দাড়ান দেখতেছি ।
-এরপর লোকটা একটা সিএনজি নিয়ে আসলো..লোকটা চালক কে বলে দিল যে বাড়ির গেইটে নামাইয়া দিতে ।
তারপর চলে আসলাম । কত চড়াই উৎরাই পার হয়ে শেষ পর্যন্ত আমি খালার বাড়িতে পৌছলাম । কলিং বেল বাজালাম । একটু পর দড়জা খুলে দিল খালা
-কে তুমি বাবা
-কি বলো খালা ..আমাকে চিনতে পারোনি
-না তো বাবা । কে তুমি
-খালা আমি সাগর
-সরি বাবা…মনে হয় ভুল করে এই বাসাতে এসেছো…রং নাম্বার
-ধেৎ খালা ইয়ার্কি রাখো তো আমাকে কিছু খেতে দাও । নাহলে আমি শেষ ।
-এতো দিন পর আমাদের কথা মনে পড়লো আমিতো ভাবলাম ভুল করে চলে এসেছিস । আচ্ছা ভিতরে আয় ।
*ভিতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম । খুব ক্ষুধা লেগেছে । খালা একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে । আমি খাচ্ছি আর উত্তর দিচ্চি ।
-কিরে এতদিন পর কি মনে করে আসলি
-কতদিন তোমাদের দেখিনা তাই চলে আসলাম ।
-আমাকে বলে আসতে পারতি
-তোমাদের সারপ্রাইজ দিবো বলে বলিনি
-কিন্তু আমিতো জানি যে তুই আসছিস
-কিহহহ…কিভাবে
-তোর আম্মু বলেছে
-ধেৎ..আম্মু আমার সব প্লান শেষ করে দিলো
-তুই নাকি আরো ২ ঘন্টা আগে তোর আম্মুকে বলেছিস যে আর ৫ মিনিটের রাস্তা । তাহলে এতক্ষন লাগলো কেন
-আর বলোনা ওই নীল পরি….(মুখ ফসক বেরিয়ে গেছে)
-নীল পরি মানে । ওই এই নীল পরিটা আবার কে
-নীল পরি মানে হলো একটা ফাজিল মাইয়া । যে আমাকে ৪ কিমি রাস্তা ঘুরাইছে । ওরে যদি একবার পাই তাহলে ওর বারোটা বাজাইয়া দিমু ।
-মাইয়া টারে আমাকে একবার দেখাইয়া দিস তো আমিও ওরে সাইজ করমু ।
-আচ্ছা খালা নীলা কই
-ওর কথা আর বলিসনা । সারাদিন টো টো করে ঘুরে বেড়ায় ।
খাওয়া দাওয়া করে একটা লম্বা ঘুম দিলাম । কলিংবেল এর আওয়াজে ঘুম ভাংলো । খালা দড়জা খুলতে বলল । দরজা খুলে আমিতো অবাক । আরে এটা তো ওই মেয়ে ।
-এই বজ্জাত মেয়ে আজ তোরে পাইছি তোর খবর আছে ।
-আপনি কে? আর এখানে কি করতেছেন
-আমি কে মানে আমি এই বাড়ির জামাই ।
-কি উল্টাপাল্টা কথা বলতেছেন…আর এভাবে তুই তুকারি করতেছেন কেন
-ওরে আমার লাঠসাহেবের মেয়েরে তোরে কি আপনি করে বলতে হবে । তোর মতো হ্রামি মাইয়েরে এর থেকে নিচু ভাষায় কথা বলা উচিৎ ।
-ওই হারামজাদা আমারে চিনস
-খালা ও খালা..ওই হ্রামি মাইয়ারে পাইছি….কাজী ডাকো এখনি বিয়া করমু
-কোন মাইয়া
-এই যে ওই ফাজিল মাইয়া
-আরে এতো নীলা
হায় আল্লাহ সব শেষ । ভেবেছিলাম খালাতো বউরে পটামু । আমার আশা আর পূরণ হইলোনা ।
-হাই আমি সাগর
-আমি নীল পরি (বলেই একটা হাসি দিয়ে ভিতরে গেলে)
পাগল করা হাসি দিলোরে । পাগল হইয়া যামু । বিকালে খালা নীলারে বলল আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতে । অনেক কথা হলো তার সাথে । অনেক ফ্রি হয়ে গেলাম ।
-বউ কথা বলোনা কেন ।
-ওই কে তোর বউ
-কে আবার তুই
-আমি তোর খালাতো বোন
-হু তুই আমার খালাতো বউ
-কি বললি তুই দাড়া
-বউ বলেই দিলাম দৌড় । ইশশ ও তো পড়ে গেল । এখন কি হবে । কাছে গেলাম । ইশশরে পা কেটে গেছে ।
-খুব ব্যথা লাগছে
-কাদতেছে
-কাদেনা সোনা । বলেই কোলে নিলাম । আহারে মেয়েটার কি মায়াবি চোখ । পাগল করে দেয় । নীল ড্রেসে পাগলি টাকে নীল পরির মতো লাগছে ।
ভাবতেছি কালকে প্রোপজ করমু । তবে এইবার প্রেমের প্রস্তাব দিমুna । আগে দুইবার প্রেম করতে চাইয়া ফাইসা গেছি । এইবার ডাইরেক্ট বিয়া করতে চাইমু । আমরা ছোট থেকেই তুই করে কথা বলি । রাতে একসাথে বসে গল্প করছি ।
-কিরে এত সুন্দর হইলি কবে
-যাহহ কি বলিস । তোর লজ্জা শরম কিচ্ছু নাই । আচ্ছা সাগর তোর জিএফ কেমন আছে ।
-ধেৎ কিসের জিএফ এখনো প্রোপজ করতে পারলাম না । আবার জিএফ । তোর বিএফ কেমন আছে ।
-আমারো নাই
আহহ কি খুশি খুশি লাগতেছে । মনে হয় খুশিতে উইরা যামু ।
-ওই তোরে একটা কথা বলি
-হুমম বল
-উইল ইউ ম্যারি মি
-তোর মতো গাধাকে
-কিহহ আমি গাধা
-হু তুই একটা গাধা…নিজের চেহারা আয়নাতে দেখছিস । বান্দর একটা ।
-কি আমি বান্দর । জানিস তোর জন্য আমি কতগুলো প্রোপজ রিজেক্ট করেছি । এসএসসি পরিক্ষার সময় একটা প্রোপজ রিজেক্ট করেছি ।
বাসে আসার সময় তো একটা মেয়ে একেবারে ফিদা হয়ে গেছে । আমাকে ছারা নাকি বাচবেনা অনেক বুঝিয়ে তাকে বিদেয় করেছি ।
-ওই তুই কি মিথ্যার বই পড়িস নাকি । এতো মিথ্যা ক্যামনে বলিস ।
-তোর জন্য বলি তোকে ভালবাসি তাই বলি ।
-সত্যিই তুই আমাকে ভালবাসিস ।
-৩ সত্যি
-তাহলে আই লাভ ইউ
-আই লাভ ইউ টু
আল্লাহরে এতদিন পর আমি সাকসেস হয়েছি । আমার খুশি কে দেখে । আমার তো ডান্স করতে ইচ্ছে করতেছে ।
*
-খামোশ
*
ওরে বাবারে খালু আইলো কোথা থেকে । খালুকে আমি যমের মতো ভয় করি । হাতে একটা বন্দুক নিয়ে দড়জায় দারিয়ে আছে ।
-ওই নীলা তুই ওর কি বললি
-কই বাবা আমিতো কিছুই বলিনি
-আমি সব শুনেছি তুই ওরে বিয়া করেতে চেয়েছিস । ওরে আই লাভ ইউ বলেছিস ।
-না বাবা তুমি যে কি বলনা । আমি কেন ওই ক্ষেত মার্কা পোলারে বিয়া করমু । আমি আই লাভ ইউ মুভির কথা বলছিলাম ।
ও আমার আল্লাহরে এই মাইয়া দেখি পাল্টি খাইসে । এখন আর আমাকে কেউ বাচাতে পারবেনা ।
-তোর এতো বড় সাহস তুই আমার মাইয়ারে বিয়ে করতে চাস । আজকে তোরে আমি গুলি করে মারবো ।
-খালু ভুল করে বলে ফেলসি । আমাকে মাফ করে দাও ।
-বাবা ওর কোনো মাফ নেই । ওরে গুলি করে দাও
-ওই হ্রামি তুই যদি একবার আমাদের বাড়িতে যাস । তাহলে তোরে খাইয়া ফালামু ।
-বাবা দেখছো তোমার সামনে আমারে হুমকি দিতেছে । ওকে তুমি শেস করে দাও ।
-খালু আমাকে ছেড়ে দাও খালু
-খামোশ….মারারজন্য প্রস্তুত হ ।
-আমি আর বিয়ে করবোনে কাকু সরি খালু । খালু কালকে সকালে আমি বাড়ি চলে যাবো । আপনার মাইয়ার দিকে আর চোখ তুলে তাকামু না ।
আমাকে মাফ করে দাও খালু ।
–বিয়ে করবিনা মানে । তুই বিয়ে করবিনা তোর বাপ বিয়ে করবে
-আব্বু করলে করুক তবুও আমি করবো না
-গুলি করে মারবো
-না কাকু…সরি খালু আমি রাজি
-এইতো ভালো ছেলের মতো কথা । তবে বিয়ে ৪ বছর পর
-আচ্ছা খালু
*
আহহহহা শেষ পর্যন্ত বিয়ে ঠিক হয়েই গেল । হুররে আমি বিয়া করমু । হ্রামিটা কই গেল । আমার গুলি করতে কইছে ।
আজকে ওর খবর আছে । ওর রুমে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম ।
-সুন্দরী আজকে তোমার খবর আছে..হুহুহাহাহাহাহাহাহাহাহাহা
ভিলেনী হাসি দিলাম ।
*
এই যে এখন আপনারা যান । আমাদের কে আমাদের মতো থাকতে দেন…….