শুভ বিবাহ

শুভ বিবাহ

বিরাট সমস্যা হয়েছে হয়ত বাসা থেকে ঝাড়ু মেরে বের করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।

ফাজিল সাহেব আপনার ফাজলামি এবার রাস্তায় রাস্তায় হবে।

বাসায় আপনার জন্য ১৪৪ ধারা জারী হয়ে যাবে আপনি আসা মাত্র গুলি না চলে ঝাড়ুর বারির সাথে বুলেট গতিতে মধুর বাক্য চলবে।

এসব ভাবছি এসব ভাবার পিছনের কারণ টা এবার বলি।
.
হিন্দী রোমান্টিক মুভি দেখে আবেগের ধাক্কায় আম্মুরে গিয়ে বললাম আম্মু এত বড় বিছানায় একা কি থাকা যায়।

এ কেমন বিচার? এইরকম বর্বর তো পাকিস্তান ও ছিল না।আম্মু চোখ বড় বড় তাকিয়ে বললেন,
-তুই বড় হয়ে গেছিস?
-কি বল আম্মু লম্বায় ৬ফিট এর কাছাকাছি চলে আসছি।
-হারামজাদা লম্বায় কি হবে বয়স হয় নাই এখনো।
-কে বলেছে বয়স হয় নাই।ssc পাস করে আমার প্রাণের বন্ধু রাজু বিয়া করে ফেলল সেটা তো তুমি নিজেই জানো….

তার বিয়ে দেখে আমার মমতাজ আফার সেই বিখ্যাত গান মনে পরে গেল………….

“ফাইট্টা যায় বুক টা ফাইট্টা যায় পরাণের আধখানা বন্ধু তার লালা টুক টুকি বউ নিয়া….

আমার বাড়ির সামনে দিয়া বক্সি গাড়ি মাইরা চলিয়া যায় বুক টা ফাইট্টা যায়।”
-তর কি লজ্জা শরম সব উদাও হয়ে গেছে।তুই যদি আমার সামনে থেকে এখনি না গেলি তর কপালে দুঃখ আছে।

রাজুর বিয়ে সে নিজের ইচ্ছায় করেনি পরিস্থিতি ভয়াবহ ছিল তাই বিয়া করতে বাধ্য হয়েছে।

তাছাড়া তার বাপ তারে মেরে বিয়েতে রাজী করিয়েছিল।
-ইয়া আল্লাহ রাজুর বাপ মায়ের মত আমার বাপ মারে কেন দিলা না।তাহলে এত দিন আমার আম্মু দাদি হয়ে যেত।।
-হারামজাদা তরে আজ ঝাড়ু দিয়া পিডাইয়া হাড্ডি গুঁড়া করে ফেলব।
.
অতঃপর আম্মু হাড্ডি গুড়া করার জন্য আমারে হুসাইন বোল্ট এর মত দৌড়ানি দিয়ে রান্নায় মনযোগ দিলেন।।

যাই হউক এখন বাসা থেকে বের হতে হবে।

ফ্রেন্ড একটার সাথে দেখা করা প্রয়োজন বেচারা গত ২দিন ধরে আমাকে পাগলে মত হন্য হয়ে খোঁজ করছে।

অনেক্ষণ পর ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হল বেচারা একদম শুকিয়ে গেছে আমাকে দেখেই বলল,
-দোস্ত আমার তো জীবন শেষ।
-এইডস হয়ে গেছে নাকি রে আহা রে আমি আগেই সন্দেহ করছিলাম তর স্বভাব লুচু প্রকৃতির।

যা হয়েছে তা নিয়ে মন খারাপ করে লাভ নেই চল জীবণের শেষ কয়টা দিন একটু ভাল মন্দ খেয়ে মরবি।

দোস্ত আয় আজ তরে আমি পেট ভরে একটা সিঙ্গারা খাওয়ামু।
-শালা সত্যি যদি মইরা যাই তাহলেও তর ফাজলামি যাবে না।

আমার জিএফ এর সাথে ব্রেকআপ হয়ে গেছে তর খোঁজ করছি যাতে আবার জয়েন্ট করে দিতে পারিস।
-ব্রেকআপ টা কে করছে?
-ওই করছে।
-তাহলে আশা ছেড়ে দেয়া উচিত মেয়েরা যখন ব্রেকআপ করে তখন ১মাস আগে থেকেই ভেবে রাখে যে ব্রেকআপ করবে।

তকে হাজার টা যুক্তি দেখাবে এসব যুক্তি ১মাস আগে থেকেই তৈরি করা শুধু সুযোগের অভাব ছিল।
-এইটা কি বললি আমি বাঁচব না।
-সেটা তর নিজস্ব ব্যাপার।
-ফাজলামি করিস না। তর সাথে কি রুপার রিলেশন রয়েছে নাকি ব্রেকআপ।
-খবরদার মুখেও ব্রেকআপ এর কথা আনবিনা।
-দোস্ত আমার কি হবে।
-যা হবার তাই হবে Blue whale গেইম খেলিয়া মইরা যা।

অথবা স্যার মাহফুজুর রহমানের বিরহের গান শুনতে থাক উনার মত প্রতিভাবান মানুষ গোটা এশিয়াতে হাতে গোনা কয়েকজন রয়েছে মাত্র।
.
রুপার সাথে গত কয়েক দিন ধরে দেখা হয়নি।

ফোনে কথা হচ্ছে তাও অল্প পরিমাণে যখন সে ফোন দেয় তখন আমি সমস্যায় আমি যখন ফোন দেই তখন সে বিজি।

এখন রুপার সাথে হাটছি নিরব হাটা হচ্ছে হাতে ঝাল মুড়ি আছে মাঝে মাঝে আমি সেখান থেকে খাচ্ছি তবে সে শুধু তাল মিলিয়ে হাটছে,

আমি দূরে থাক ঝাল মুড়ির দিকেও একবার তাকায় নাই।

অভিমান, রাগ সব একসাথে মিক্স হয়ে রুপার ভিতর কি প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে আল্লাহ জানেন?

হঠাৎ হাটা বন্ধ করে আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তে থাকিয়ে বলল,
-সাহেদ এর ভিডিও তুমি পাবলিশ করেছো।
-ইয়ে মানে তোমাকে কে বলল?
-সে আমাকে আজ ফোন দিয়ে বলেছে।যাই হউক তোমার সাথে যদি এইরকম করা হত তাহলে কেমন লাগত?
-তাহলে এতক্ষণে সেলিব্রেটি হয়ে যেতাম।
-ফাজলামি পাইছো সেই দিন কি হয়েছিল বিস্তারিত বল।
-আচ্ছা বলছি।।
.
কয়েকদিন আগে সাহেদ আমারে কলেজের বাথরুমের চিপায় নিয়া গেল।

তারপর বলল যে এইখানে হাবিবা আসবে সে হাবিবা কে প্রপোজ করবে সব আগে থেকেই প্ল্যান করা আমাকে রেখেছে যাতে সাহস না হাড়ায়।

যথা সময়ে হাবিবা আসল সাহেদ বুকে থুথু দিয়া শুরু করল “হাবিবা রাতে তোমার জন্য আমার ঘুম হয় না”…..

এইটা শুনে আমি একটু দূর থেকে বললাম দোস্ত রাতে ভাল করে মাথায় কদুর তেল দিয়া ঘুমাইবি সেই ঘুম হয়।

এর পর বলা শুরু করল “তোমাকে দেখার পর থেকে আমার হার্টবিট এর অবস্থা একদম খারাপ হয়ে গেছে সব সময় আপ ডাউন করছে।

এইটা শুনে বললাম, দোস্ত তাহলে এখনি ডাক্তার দেখানো দরকার আমার পরিচিত একজন আছে ভিজিট এর ক্ষেত্রে ডিসকাউন্ট পাবি।

সাহেদ আমার দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল চুপ করে থাক তার অগ্নি দৃষ্টি দেখে আমিও চুপ করে রইলাম।

একদম শেষে বলল “তুমিই আমার প্রথম ভালবাসা তুমিই আমার প্রথম প্রপোজ।”

এইটা শুনে আর নিজেকে সামলে রাখা গেলনা আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম…..

“সাহেদ তুই ভুলে গেছস তর এইটা ৭নাম্বার প্রপোজ আর আগেও ২টা জিএফ ছিল।

“তর এত মন ভুলা কেন?।সাথে সাথে ঠাশ করে একটা শব্দ হল…….

তারপর দেখি সাহেদ গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে চোখ দিয়া আমার টপ করে পানি চলে আসল।

আমার সামনে আমার বন্ধুরে এত বড় অপমান।একটু পর সাহেদ এসে আমার চোখের পানি মুছিয়ে বলল……,

ফাহিম যা দেখেছিস দোস্ত ভুলে যা মনে কর থাপ্পড় এর আওয়াজ হয় নাই আকাশে মেঘ গর্জন করেছিল।

তুই এইখানের কর্মকান্ড ভুলেও কাউরে বলিস না।

আমি বললাম দেখ আমারে থামাতে আসিস না আমি প্রমাণ করে দেব দেশে শুধু নারী নির্যাতন হয় না পুরুষ নির্যাতন ও হয়।

এইটার প্রমাণ হিসাবে তর চড় খাওয়ার ভিডিও করে আমি আমাদের ফ্রেন্ডস গ্রুপে দিয়া দিছি এবার মেয়ে বুঝবে মজা।
.
রুপা দীর্ঘক্ষণ আমার বক্তব্য শুনে বলল,
-এখন আমার মন চাচ্ছে তোমার ২ গালে ২টা থাপ্পড় দেই।।
-আচ্ছা শোন বাসায় বিয়ের কথা বলছিলাম সেইটার জন্য বাসা ছাড়া হইছি তোমার বাসায় কি জায়গা হবে।
-আমার বাসায় কি? আমার মনেও এখন তোমার জায়গা নাই আউট।
-ইহা কি বলিলা বালিকা আমি যে তোমাকে ভালবাসি।
-ভালবাস ভাল কথা যাও ভালবাসা নিয়া থাকো দেখা করার কথা ছিল কবে আর দেখা করতে আসছো আজ।।
-বালিকা সে তো বিরাট কাহিনী একবার শুরু হলে কবে শেষ হবে ঠিক নাই।
.
যাই হউক রুপার অভিমাণ ভাঙ্গিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল।।বাসায় ঢুকে প্রথমেই আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
-আম্মু বিরাট কাহিনী হয়ে গেছে।
-কি কাহিনী?
-আমার ফ্রেন্ড যে আছে জুনেদ তার বিয়া ঠিক হয়ে গেছে।
-তো হয়েছে কি?
-না ভাবছিলাম ফ্রেন্ড গুলা সব ডাবল হয়ে যাচ্ছে কি যে দিন আসল সবার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।
-তো কি হয়েছে তর বিয়ার আরো ৫বছর বাকী রয়েছে।
-কি বলিলা মাদার এইটা শুনার আগে আমার হার্ট এট্যাক কেন হইল না?
-তর এট্যাক আমি বের করছি তরে না বলছিলাম বাসায় না আসতে তুই আসছিস কোন সাহসে..
.
অতঃপর দ্রুত নিজের রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে মনে মনে বলে উঠলাম,
বিয়ে তুমি হাজারো সিঙ্গেল যুবকের দীর্ঘশ্বাস,
বুকে জমাট বাঁধা হাহাকার,
বিয়ে তোমাকে না পেয়ে চলছে কোলবালিশের উপর অমানবিক অত্যাচার।

গল্পের বিষয়:
হাস্যরস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত