রসিক রাজ বকুল ভাই (রম্য গল্প )
বকুল এবং তার বাবা বজলুকে নিয়ে গ্রামের সকলের হাসির অন্ত নাই । দু’জনই বেশ রসিক বলিয়া লোকে তাদের নিয়ে হাসতে বিলম্ব করে না । তারা ও চেষ্টা করে গ্রাম বাসির মনোরঞ্জন করতে। পাড়ায় কার কোন অনুষ্ঠান হলে দু’জনের ডাক সবার আগে পড়িবে । প্রথম দুজন একসাথে নানা অনুষ্ঠানে গেলে ও এখন ব্যাস্ততার কারনে আলাদা ভাবে যায়। তবে দু’ই জন বেশ সাহসি লোক ।
দেশের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দু’জনের ভালো জ্ঞান আছে। এছাড়া বহিবিশ্ব সম্পর্কে ও তাদের ভাল ধরনা আছে। সেদিন পাড়ায় হাতেম আলীর মেয়ে সখিনার গায়ে হলুদ । সেখানে দাওয়াত পড়িল বকুলের । তার বাবা বজলু তখন পাশের গ্রামে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছে।
আমি শখ করে ফটো তুলি । নিজের সদ্য কেনা ডিজিটাল ক্যামেরায়। আফরিন পাশের বাড়ির চাচার মেয়ে , সকালে এসে বলল
টুটুল ভাই আজকে বিকালে কি ফ্রি আছেন ।
আমি ভাবিলাম হঠাত করে আফরিন কি প্রশ্ন করছে। তাই কোনরকম চিন্তা না করে হ্যা বলিলাম । উত্তরে সে বলে গেল আজ বিকালে যেন ক্যামেরা নিয়ে সখিনাদের বাড়ীতে যাই । অগ্যাতা আমি সেই বিকাল থাকে সখিনা’দের বাড়িতে এসে ফটো তুলছি। অবশ্য আফরিনের বেশ কয়েকটি ফটো তুলে নিয়েছি সবার আগে। এমন সময় কুচকুচে একটা কালো পাঞ্জাবী পড়ে বকুল এল। বকুল কে দেখিয়া সবাই বেশ খুশি হইল। আমি যদিও এর আগে বকুলের হাসি তামাসা দেখি নাই তাই এককোনায় চুপ করে বসে পড়লাম। আর আমার চখ বার বার আফরিন’কে খুজতে লাগল। এমন সময় পানের বাটা হাতে নিয়ে সখিনার মার সাথে আফরিন এসে আমার পাশেই বসল। বকুল যথারীতি তার রসের ভান্ডার খুলে বসল। (পরবর্তী অংশ বকুলের ভাষায়)
মিয়ারা সকলে ভাল আছেন তো । শুনেন সকলে কেন যে আমার কথা শুনে হাসাহাসি করে তা আমি বুঝি না । আমি কি বলি সেটা মন দিয়ে শুনেন । তারপর ভাবেন আমি কি বলেছি।
সেদিন আমাদের গ্রামে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একটি মিটিং চলছিল । এমন সময় একদল বলল আমাদের দল বড় , আমরা জনগনের কল্যানে অনেক কিছু করি । দর্শক তা শুনে হাততালি দিল। আমি চুপচাপ বসে শুনলাম। এরপর অন্য দলের নেতা এসে বলল আমাদের দল সবচেয়ে বড় দল। আমরা জনগনের বন্ধু। জনগন আমাদের সাথে আছে বলেই আমরা এখন ক্ষমতায়। সেকথা শুনিয়া জনগন আবারো হাততালি দিল । এভাবে নানা বাকবিন্ডতায় মিটিং শেষ হইল। আমি তখন আমার পাশে বসা এক বৃদ্ধ লোককে বললাম । দাদু আপনি দু’দলের কথা শুনে কেন হাততালি দিলেন। তখন দাদু যা বলল তা শুনে আমার মুখ বন্ধ হয়ে গেল।
দাদু বলল আজ থেকে বহুদিন পূর্বে তাহাদের ঠাকুর বাড়িতে একদিন সকাল বেলা দুই ব্রাক্ষন এসে উপস্থিত। দুজনেই ছিলেন উপোষী । ঠাকুর বাড়ির কর্তা মহাশয় দুজনকে আরাম করে বসতে দিলেন এবং দু’জনের জন্য খাবারের ব্যাবস্থা করতে অন্দরমহলে ছুটে গেলেন। অন্দরমহল থেকে এসে দেখেন এক ব্রাক্ষ্মন বসে আছে অন্য ব্রাক্ষ্মন নাই । তিনি বলিলেন ব্রাক্ষ্মন মশাই আপনার সাথের ব্রাক্ষ্মন তিনি কোথায়।
উহ তুমি কি সেই গরুটার কথা বলছ। সে তো ব্রাক্ষ্মন নয় । সে হল একটা আস্ত গরু , গোসল করতে গেছে বোধহয়।
এর কিছুক্ষণ পরে সে ব্রাক্ষ্মন ফিরে এল এবং ঘরে বসে থাকা ব্রাক্ষ্মন গোসল করতে চলে গেল। ব্রাক্ষ্মন যখন ঘর থেকে চলে গেল তখন বাড়ির কর্তা বলল
ব্রাক্ষ্মন জি , আপনাদের মাঝে কে বড় ব্রাক্ষ্মন।
কেন বাছা!আলবত আমি। আরে ও তো একটা ছাগল ।
একথা শুনিয়া কর্তা মহাশয় অন্দর মহলে চলিয়া গেলেন । কিছুক্ষণ পর তিনি দুটি বিশাল ঝুড়িতে করে দুই ঝুড়ি খাবার নিয়ে ব্রাক্ষ্মন দের সামনে রাখিলেন । তা দেখে ব্রাক্ষ্মনদ্বয় রাগান্বিত হয়ে বলে উঠলেন
এগুলো কি নিয়ে এসেছ।
কেন মহাশয় এগুলো আপনাদের খাবার । আমাদের এখানে গরু এবং ছাগল এসব খাবার খায়। গরুর জন্য ঘাস, আর ছগলের জন্য কাঁঠাল পাতা।
কর্তার কথা শুনে দুই ব্রাক্ষ্মন নিজেদের ভুল বুঝতে পারল এবং সেই গৃহ থেকে চলে গেল ।
বৃদ্ধ এবার বলে উঠল বুঝলে বাবা আমি কেন দুজনের কথায় তালি দিয়েছি।
হ্যা বাবা বুঝতে পেরেছি।
কিন্তু একটা জিনিস বুঝতে পার নাই। সেই ব্রাক্ষ্মনদের কিছুটা হলে ও মান সন্মান ছিল । কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দলের নেতাদের মাঝে সেই বোধটুকূ ও নাই । তাই তারা আমাদের কে মুক্ত করে দিতে চায় না ।
বকুল ভাই গল্প শেষ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল আরে টুটুল বাবা যে। আস আমার একখানা ফটো তুলে দাও।
আমি আনন্দের সাথে বকুল ভাইয়ের ফটো তুললাম এবং চিন্তিত মুখে বাড়ি ফিরলাম ।