–“ঘুম থেকে উঠবা নাকি প্ল্যান বি প্রয়োগ করতে হবে?”
–“আরে আজ তো শুক্রবার। আর একটু ঘুমাতে দাও না!”
–“বেলা বাজে ক’টা সেই খেয়াল আছে তো নাকি?”
–“৮ঃ০০ টা হবে হয়ত।”
–“বেলা বাজে ৯ঃ৩০। উঠে একটু বাজারে যাও।”
–“তুমি যাও।”
–“কিহহহ! বাজারে যাব,তাও আমি! একটা মেয়ে মানুষ হয়ে আমি বাজার করতে যাব?”
–“তো যাও। তোমার যা যা লাগবে সব নিয়ে এসো,নিজ পছন্দমত।”
–“নাহ তোমার সাথে সোজা কথায় কাজ হবে না দেখছি। দাঁড়াও একটু।”
–“রহিমা খালা? ও খালা?”
–“জ্বে আফা! কিছু কইবেন?”
–“ফ্রিজ থেকে এক মগ ঠান্ডা পানি নিয়ে আসেন তো।”
–“আইচ্ছা,আনতাছি আফা।”
ঠান্ডা পানির কথা শুনে ধড়ফড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে গেলাম। শীতের সময় ঠান্ডা পানি শরীরে দেয়া আর জলন্ত আগ্নেয়গিরিতে লাফ দেয়া একই কথা। বিশেষ করে শীতের সময়,ঠান্ডা পানির চেয়ে ভয়ানক জিনিস আর দ্বিতীয়টি নেই।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সবেমাত্র ৭ঃ২৭। খুব রাগ হল বউয়ের উপর। শুক্রবারেও উনার এমন করা লাগবে আমার সাথে! বিরক্তির দৃষ্টি নিয়ে বউয়ের দিকে তাকালাম।
–“বাজে মাত্র ৭ঃ২৭ আর তুমি কিনা বলছ ৯ঃ৩০!”
–“তো কি করব! তুমি উঠছ না তাই বলেছি।”
–“তুমি না একদম আমার আম্মুর মত। আম্মু যেমন ছোটবেলায় ৯ টার কথা বলে সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠিয়ে পড়তে বসাতো তুমি ঠিক তেমনই।”
–“তো আজ থেকে আমায় আম্মু বলেই ডেকো।”
–“নাউজুবিল্লাহ!”
–“এইসময় বাজারে না গেলে কিছুই পাবে না। জলদি বাজারে যাও।”
–“নাহ তোমার জ্বালায় একটু শান্তিতে ঘুমাতেও পারব না।”
–“আচ্ছা থাক,তোমাকে বাজারে যেতে হবে না।”
–“সত্যি বউ?”
–“হ্যাঁ সত্যি। একদম সত্যি।”
–“এইতো আমার লক্ষি বউ।”
বউয়ের কথা শুনে কেন যেন মনটা ভরে গেল। শীতের সকালে বাজারে যাওয়া যে কি একটা যন্ত্রণা সেইটা একমাত্র তারাই বুঝবে যারা শীতের সকালে উঠে বাজার করতে যায়। যাক বাঁচা গেল। এইবার দেই একটু ঘুম। আরামের ঘুম।
–“কিন্তু কথা একটাই।”
–“আবার কী কথা?”
–“সকাল,দুপুর,রাত্র….!”
–“কী?”
–“শুধু এই তিনবেলা রান্না বন্ধ থাকবে।আর রান্না বন্ধ মানে খাবারও বন্ধ।”
ভ্রুঁ-কুচকিয়ে বউয়ের দিকে তাকালাম। ব্যপারটা অনেকটা চিপসের প্যাকেটে পাওয়া গাড়ির মত। ১৫ টাকার চিপস কিনলেই পাচ্ছেন একটি প্রিমিউ সুপিরিয়র গাড়ি কিন্তু সাইডে একদম ছোট্ট করে লেখা থাকবে ‘শর্ত প্রযোজ্য’। যেইটা কিনা আমি আর আপনি খালি চোখে কখনও দেখব না। তারপরে গাড়ির জন্য গেলে তারা সুন্দর করে বলবে ‘স্যার,আপনি হয়ত খেয়াল করেননি সাইডে ছোট্ট করে লেখা ছিল শর্ত প্রয়োজ্য’। তারপর দিয়ে দিবে একগাদা শর্ত।শর্ত মানতে পারলে গাড়ি পাবে নয়ত উলটোদিক ঘুরে বাসায় ফিরে যাবে। যাও এবার,আমও গেল ছালাও গেল। সাথে যাওয়া আসার ভাড়াটাও ফাও গেল।
–“আচ্ছা কি কি আনতে হবে শুনি?”
–“আলু দুই কেজি,পেয়াজ এক কেজি,রসুন এক কেজি,আদা এক কেজি….”
–“থাক থাক আর বলতে হবে না। তুমি বরং লিস্টটা দাও। এভাবে বললে সারাদিন চলে যাবে কিন্তু তোমার বলা শেষ হবে না।”
–“এইতো আমার জামাইটা বুঝেছে। এই নাও লিস্ট।”
এইটা দৈনন্দিন বাজারের লিস্ট নাকি বিয়ে বাড়ির কেনাকাটার লিস্ট আল্লাহই ভালো জানেন। কেন যে বিয়েটা করতে গিয়েছিলাম! সিঙ্গেল লাইফটাই বেস্ট ছিল। নাই কোনো প্যারা,নাই কোনো জ্বালাযন্ত্রণা। একদম বিন্দাস লাইফ।
–“বউ শুনছ?”
–“হু বল।”
–“বলছিলাম কি!”
–“কি বলছিলে?”
–“না মানে!”
–“আরে কি বলবা সোজা বল।”
–“একটা দাও না!”
–“কি দিব?”
–“আরে ওইটা।”
–“ওইটা কোনটা?”
–“আরে ওইটা মানে ওইটা।”
–“আজব তো! ওইটা আবার কি?”
–“একটা!”
–“একটা কী?”
–“তুমি কি ছোট খুকি? কিছুই বুঝো না?”
–“না বললে বুঝব কীভাবে!”
–“আরে একটা চুমু দাও।”
–“কিহহহ!”
–“আরে চুমু দাও চুমু।”
–“চুমু কি? এইটা খায় না পড়ে?”
–“মজা করবা না একদম।”
–“মজা কই করলাম!”
–“আচ্ছা এখন একটা চুমু দাও আমাকে।”
–“না পারব না।”
–“কেন পারবা না?”
–“আমার লজ্জা লাগে।”
–“আরে স্বামীর কাছে আবার কিসের লজ্জা হু?”
–“জানি না অতকিছু।”
–“আচ্ছা জানতে হবে না।এইবার একটা চুমু দাও।”
–“না দিব না যাও।”
–“আচ্ছা আমিই দিচ্ছি। তারপর তুমি দাও।”
–“এইই না না!”
–“চুপ। দিচ্ছি আমি।”
–“এই না না না!”
বউ মানা করছে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমি বউয়ের কথা শুনতে মোটেই ইচ্ছুক না। বউয়ের কথা উপেক্ষা করেই বউয়ের গালে একটা চুমু দিয়ে দিলাম।
–“এইটা কি করলা তুমি?”
–“চুমু দিলাম।”
–“মানা করেছিলাম না?”
–“তাতে আমার কি!”
–“তোমার কিছুই না?”
–“একদমই না। এইবার আমাকে একটা চুমু দাও। আমি তোমাকে যেমন করে দিলাম তুমি ঠিক তেমন করেই আমাকে দাও।”
–“দিতেই হবে?”
–“হ্যাঁ দিতেই হবে।”
–“আচ্ছা গালটা এদিকে নিয়ে এসো।”
বউয়ের কথা শুনে আমি আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলাম। আহা কি আনন্দ! বউয়ের কাছ থেকে চুমু খাওয়ার ফিলিংসই অন্যরকম। বউয়ের মুখের কাছে আমার গাল আনতেই বউ আমার কানের নিচে কষে এক চড় বসিয়ে দিল। গালে হাত দিয়ে সোজা বসে পরলাম।
–“শালার ভাই,প্রতিদিন বলি ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমাবি। রাতে আজেবাজে স্বপ্ন দেখে আর আমাদের উপর অত্যাচার করে।”
চারপাশটায় একবার ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম। ছোট্ট একটা রুম তার ভিতরে দুইটা ছোট ছোট খাট। আর পাশে থাকা তিনটা ছেলে আমার দিকে আক্রমনাত্মক ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে দুইদিনের অনাহারী বাঘ এখনই বুঝি আমাকে খেয়ে ফেলবে।
–“স্বপ্ন দেখছিস?”
–“না মানে হ্যাঁ ভাই।”
–“স্বপ্নে কি দেখছিস?”
–“বিয়ে করেছি। ভালো একটা বউ পেয়েছি। একটু রোমান্স করতে গিয়েই কানের নিচে জোরে একটা থাপ্পড় খাইলাম।”
–“শালার ভাই চুমুটা কাকে দিয়েছিস জানিস?”
এতক্ষণে মাথায় হুশ আসল। আরে আমি তো ভার্সিটির হলে। আর এই তিনজন তো আমার রুমমেট। একই ক্লাসে পড়ি আমরা।আর যার সাথে এখন কথা বলছি সে তো নিবির। তারমানে কি চুমুটা আমি….!! ইয়াক থু!
–“তোকে ভূতে ধরেছে তাই না?”
–“আমাকে! কই না তো!”
–“তাহলে প্রতিদিন এইসব কি উলটা পালটা স্বপ্ন দেখিস তুই?”
–“আমি কি ইচ্ছে করে দেখি নাকি!”
–“হু বুঝেছি। রোমান ছনের ঝাড়ুটা নে তো। ঝাড়ু দিয়া পিটাইয়া ওর ভূত ছুটাই।”
রোমান ছনের ঝাড়ুটা হাতে নিতেই আমি বিছানা থেকে উঠে একদৌঁড়! একদৌঁড়ে সোজা বাথরুমের ভিতরে। ভিতরে গিয়েই দরজাটা লক করে দিলাম।
–“তুই বের হ বলছি।”
–“না ভাই আমি বের হব না।”
–“দেখি তুই কতক্ষণ বাথরুমের ভিতরে থাকতে পারিস। আজকে তোর ভণ্ডামির ভূত আমি ছুটাবই ছুটাব।”
হায় আল্লাহ! এতক্ষণ কি এক স্বপ্ন দেখলাম! কি ভূত চেপে বসেছে আমার উপর! এখন কি হয়েছে সেইটা আর মনে করতে চাই না। মনে করলেই জ্বালা বাড়বে।
বয়স বিশ পেরিয়ে একুশে পা দিয়েছি মাত্র। এই দীর্ঘ একুশটি বছর ধরে আমি ব্যাচেলর। এই একুশ বছরে বউ তো দূরের কথা একটা গার্লফ্রেন্ডেরও দেখা পেলাম না। ছোটবেলায় বড় আপুরা কোলে নিয়ে কত্ত কত্ত চুমু খেত আমার গালে,আর এখন চুমু খাব তো দূরের কথা উলটো কানের নিচে কষে থাপ্পর খাওয়া লাগে।
আশেপাশে এত্ত এত্ত বিয়ে বাড়ি দেখি,বর দেখি,কনে দেখি,এইসব দেখে কোন ব্যাচেলরদের হিংসে না হবে! এইসব দেখে ব্যাচেলর পোলাপানদের অবশ্যই অবশ্যই হিংসে হবে। তাদেরও তো স্বাদ-আহ্লাদ বলতে কিছু একটা থাকে। তাদেরও তো ইচ্ছে করে বিয়ে করতে,বউ নিয়ে এখানে ওখানে ঘুরে বেড়াতে,বউয়ের জন্য গোলাপ ফুল নিয়ে যেতে,বউয়ের ভেজা চুলের ঘ্রাণ নিতে। শুনেছি মেয়েদের ভেজা চুলের ঘ্রাণ নাকি পৃথিবীর সকল পারফিউমকেও হার মানিয়ে দিতে পারে।এইসব হার্ট টাচিং,ইমোশনাল কাহিনী শুনলে কার না ইচ্ছে হবে বিয়ে করতে! তবে এখানেও একটা কথা আছে কিন্তু। গোসল করার পর সব মেয়েদের ভেজা চুল থেকেই কিন্তু বিশ্বের সেরা পারফিউমের ঘ্রাণ আসে না। কিছু মেয়ে আছে যারা শীতের সময় গোসলও করে না আর মাথায় শ্যাম্পুও করে না। ফগ,স্যান্থর,ব্লু লেডি,ওয়াইল্ড স্টোন ইত্যাদি দিয়ে দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে নেয়। তাদের ভেজা ভুল থেকে কিন্তু কখনও পারফিউমের ঘ্রাণ আসবে না। তাদের ভেজা চুল থেকে শুধুই ইদুর মরার ঘ্রাণ আসবে😝
আশেপাশে এসব বিয়ে বাড়ি দেখলে খুব হিংসে হয়। প্রচন্ড রকমের হিংসে হয়।