এক দেশে ছিল একটি ফেসবুক। সেখানে বাস করতো ‘রাখাল দ্য কাউবয়’ নামে একটি আইডি। সে অনলাইনে ‘কাউডটকমে’ ফ্রিল্যান্সিং করতো। কিন্তু অন্য ফ্রিল্যান্সারদের মতো সে সৎ ছিল না। সে ছিল মিথ্যাবাদী এবং অ্যাটেনশন সিকার।
অন্যদের অ্যাটেনশন নেয়ার জন্য সে নানারকম গুজব আর ফেক নিউজ শেয়ার করতো। ‘অমুক মেসেজ বিশজনকে না পাঠালে আইডি ডিঅ্যাক্টিভ হয়ে যাবে’, ‘সোনিয়ার সঙ্গে এ কী করলেন তানিয়া’ এরকম যাবতীয় ভুয়া পোর্টালের নিউজ শেয়ার করে সে হিট খাওয়ার চেষ্টা করতো। ফেক নিউজ না পেলে সে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় ভুয়া চেক ইন দিতো, কখনও বা রাত করে দিতো মন খারাপিয়া ‘আই কুইট’ ধরণের পোস্ট। তবু কেউ তাকে পাত্তা দিতো না। পাত্তা না দিলে কী হবে, কী করে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়, সেই চেষ্টায় সে দিনরাত ব্যস্ত থাকতো।
এমনই একদিন যখন কোনোভাবেই কারো অ্যাটেনশন নেয়া যাচ্ছে না, তখন না জানি কী ভেবে সে একবার সে ফ্রিল্যান্সারদের গ্রুপ ‘বিডি ফ্রিল্যান্সার’-এ গিয়ে পোস্ট দিলো, ‘বাংলাদেশে PayPal আসতে যাচ্ছে। ফিলিং এক্সাইটেড।’
পুরো গ্রুপভর্তি ফ্রিল্যান্সাররা তার ইনবক্সে হুমড়ি খেয়ে পড়লো। ‘ভাই পেপাল কী এসেছে?’ ‘কবে থেকে আসবে বলেন তো?’ ‘ভাই নিউজ লিংক হবে?’ রাখালও মনের আনন্দে ভুয়া পোর্টালের নিউজ ছড়িয়ে দিতে লাগলো।
একদিন যায়, দু দিন যায়। দেখতে দেখতে মাস পেরিয়ে যায়। কিন্তু দেশে পেপালের টিকিটারও খোঁজ মেলে না। রাখালের আবারও অ্যাটেনশন নেয়ার প্রয়োজন হয়, এবার সে নিজের টাইমলাইনেই শেয়ার দেয়, ‘অবশেষে দেশে পেপাল আসছে। থ্যাংক গড।’ আবারও ফ্রিল্যান্সার আর নিয়মিত অনলাইনে কেনাকাটা করা মানুষজন তাকে নক দিতে থাকে। ‘ভাই ঠিক জানেন?’ রাখাল সবাইকে রিপ্লাই দেয়, ‘আরে হ্যাঁ, আমি নিজে পেজ থেকে কনফার্ম হয়েছি। পেপাল গোপাল তাপস পাল সব পালই আসবে!’ ফেসবুক ফ্রেন্ডরা তো বটেই, ফলোয়াররাও তার কথা বিশ্বাস করে পেপাল আসার অপেক্ষায় থাকে। আবারও দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়, কিন্তু পেপাল আর আসে না!
রাখাল চিন্তা করলো, আরে জোস তো! এই সিস্টেমে তো ফ্রিল্যান্সার থেকে শুরু করে আম ফেসবুকার, সবাই খুব পাত্তা দিচ্ছে! এবার সে স্ট্যাটাস দিলো, ‘এইমাত্র পেপাল থেকে পেমেন্ট রিসিভ করলাম। ওয়েলকাম পেপাল টু আওয়ার কান্ট্রি।’ আবারও রাখালের ইনবক্সে তোলপাড়। রাখাল আবারও সবাইকে ভুয়া লিংক দিলো। কাউকে কাউকে বললো, ‘সব এলাকায় এখনও চালু হয় নি, আস্তে আস্তে হবে। ওয়েট করুন।’ সবাই অপেক্ষা করলো। মাস বছর চলে যায়, সেই পেপাল আর আসে না!
হঠাৎ একদিন জানা গেলো, দেশে সত্যিই পেপাল আসছে। রাখাল তো এবার খুশি, যাক, এবার সত্যি নিউজ শেয়ার করেই অ্যাটেনশন সিক করা যাবে। রাখাল আবারও পোস্ট দিলো, ‘ফ্রিল্যান্সার ভাইয়েরা, তোমাদের কষ্টের দিন শেষ। পেপাল অবশেষে আসছে।’
রাখালের ফেসবুক ফ্রেন্ডরা এবার এমন স্ট্যাটাস দেখে বেজায় চটে গেলো। একের পর এক পড়তে লাগলো অ্যাংরি রিঅ্যাকশন। যেই ফ্রেন্ডই এই স্ট্যাটাস দেখে, রাখালকে কেউ ব্লক করে দেয়, কেউ বা আনফ্রেন্ড করে। অবস্থা এমন চরমে পৌঁছল, ফ্রিল্যান্সারদের গ্রুপে একজন রাখালকে ট্যাগ করে তার আইডির স্ক্রিনশট দিয়ে পোস্ট দিলো, এই মিথ্যাবাদী রাখালের আইডি যেন দলে দলে রিপোর্ট করা হয়, সে পেপাল নিয়ে একের পর এক মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে।’ ব্যস, দলে দলে মানুষ রাখালের আইডি রিপোর্ট করা শুরু করলো। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছলো, রাখালকে অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাকটিভ করে দিতে হলো। ক্রুদ্ধ ফেসবুকাররা কাউডটকম-এ যোগাযোগ করে অভিযোগ করায় সেখান থেকেও তাকে বহিষ্কার করা হলো।
সেই যে রাখালের অ্যাকাউন্ট ডিজেবল হয়ে গেলো, তা আর কখনও অ্যাকটিভ হয় নি।
মরাল: ভাই, দেশে সত্যিকারের PayPal আসলে নিজেই টের পাবেন, ভূয়া অনলাইন নিউজ পড়ে টের পেতে হবে না!