প্রভু ! সবই তোমার ইচ্ছে

প্রভু ! সবই তোমার ইচ্ছে

খগেনের বয়স বত্রিশ রানিং। একটু তেঁদড় ধরনের ছেলে। ছেলে বলার মানে হল গিয়ে এই যে এখনও ওর বিয়ে থা হয় নি ! পড়া লেখা এগোয়নি–ওর অল্প বয়সে বাবা মরল,মার কথা আর কত দিন শোনা যায়। রোজ মার তাগাদা বিয়ে কর,বিয়ে কর ! আরে বুড়ি,থুড়ি,মা বললেই কি হল,বিয়ের মার প্যাচ কি কম ? না,ওসব ঝোপড় পট্টির মেয়ে সে মরে গেলেও নেবে না। তার কি কোন প্রেস্টিজ নেই নাকি ?

খগেন দেখতে শুনতে খারাপ না–বখাটে নয় আবার সভ্যও নয়—হ্যাঁ,দুটোর মাঝখানে বলা যেতে পারে। দোষের মধ্যে ও একটু ল্যাংচে চলে!

ক্লাস এইট টেনেটুনে পাস করে ক বছর পরে একেবারে মেট্রিক লাফ দিয়ে পার করবে ভেবে ছিল, কিন্তু সরস্বতী বাম,তাতেও গণেশ উল্টালো। এক বাংলায় পাশ ছিল,বাকি গুলোতে ? আজকাল টিচাররা খাতা দেখে নাকি–অল্প লিখলেও তার মধ্যে যে সার বস্তু থাকতে পারে তা বোঝার ক্ষমতা তাদের কোথায় ?

এখন চট কলে একটা কাজ করছে। না লেবারের না–হিসাব রক্ষকের এসিস্টেন্ট। লোকে জানে এসিস্টেন্ট কেশিয়ার। আসল কাজ হল নকলচি যাকে বলে–যা লেখা থাকে তা হুবহু অন্য খাতায় উগলে দাওয়া আর কি !

বিয়ে ঠিক হয়ে দুবার ভেঙে গেছে। খগেনের চাকরির আসল চেহারা ছবি যখন মেয়ের বাবা দেখে তখনি কেটে পড়ে। খগেন ঠিক করেছে,না,বিয়ে করব না তাও ভালো কিন্তু ওই বস্তি ঝোপড়ি পট্টির মেয়ে–কভি নেহী। কিন্তু ওর মার ঝোপড় পট্টির মেয়েতেও এখন আপত্তি নেই–তার মতে মেয়েরা হল গিয়ে আটার দলা–যেমনটা পাকাও তেমনি হবে!

আর যাই করো প্রভু,এমন কাজ কর না যেন–ওই বস্তির মেয়েগুলির গা থেকে বড় ভোঁটকা গন্ধ আসে। আজকাল খগেনের প্রভুর ওপরে ভরসা এসেছে। বয়সে এমনটা হয়েছে বোধ হয়। উল্টোপাল্টা কাজ ইচ্ছে করে করে ভগবানকে ডেকে বলে,সবই তোমার ইচ্ছে প্রভু !

এই সে দিন যতীন বাবু এসে বিপুল বাবুর ঘর কোন দিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। খগেন জেনে শুনে উল্টো দিকে দেখিয়ে দিল,সোজা চলে যান,পাড়ার শেষ বাড়িটা।

বিয়েটিয়ে না করে আওয়ারার মত ঘুরে বেড়িয়ে সময় কাটালেই বা মন্দ কি ? মনের মাঝে তার কখনও মন্দ,কখনও ভাল ভাবনা কাজ করছিল–এমনি স্বভাবের পরিবর্তন হয়ে চলেছিল খগেনের। যতীন বাবুকে উল্টো পথ দেখিয়ে মনে মনে সে স্বস্তি নিচ্ছিল, একবার ভাবছিল কাজটা কি করা ঠিক হল ? পর মুহূর্তেই ভাবল, লোকটাকে দেখলে তো মনে হয় হাঁটা চলা কখনো করে না–ভারী বপু নিয়ে বড় কষ্ট–না হয় আজ আধ কিলোমিটার হাঁটল–শরীরের পক্ষে তার ভালই হবে। তারপরই আকাশ দিগন্তে তাকিয়ে মনে মনে বলে উঠলো,প্রভু সবই তোমার ইচ্ছে !

নষ্ট চন্দ্রের রাতে নাকি মাটির হাঁড়ি ফাটাতে হয়–ও দিন কেউ কিছু বলতে পারে না—ফাটিয়েছে, অনেক হাঁড়ি খগেন ফাটিয়েছে,এমন কি অনেকের হাটের হাঁড়িও ফাঠিয়েছে–কোন বেটাচ্ছেলে মেয়েছেলে তা ধরতেও পারে নি। এই নষ্টচন্দ্রেও ফাটাতে হবে অনেক হাঁড়ি–না হলে উটকো আনন্দ আসবে কোত্থেকে? বিবাহহীন অকাটে-বখাটে ভাবনাগুলি দিনকে দিন ওর মন জুড়ে বসতে থাকে।

সরকারি টাইম জলকলের সামনে লম্বা হাঁড়ি কলসির লাইন রাখা ছিল। তার মধ্যে পিতল,এলমুনিয়ম হাঁড়ির সঙ্গে মাটির হাঁড়িই ছিল বেশী। নষ্টচন্দ্রের রাতে কত হাঁড়ি যে ঢিল ছুঁড়ে ফাটাল তার হিসাব রাখতে পারে নি খগেন। তবে শেষে কেলো হয়ে গেল,মনি নামের ঝোপড়ির মেয়েটার সঙ্গে সে হেভি ঝগড়া–খগেন যত বলে,আমি হাঁড়ি ভাঙিনি তত যেন মেয়েটা গায়ে পড়ে খেঁকিয়ে উঠছিল!

ঝুপড়ি ঘরের মেয়ে কি না, মুখে কিছুই আটকায় না,খগেনকে বলে কিনা–মিনসে !

–আমি মিনসে হলে তুই কি চিন্তা কর ! খগেন বলে ছিল।

–মানে,সত্যি ক্ষণকাল চুপ করে মনি ফুঁসলে উঠে ছিল,হারামজাদা, আমি তোর ভাতার হতে যাব কেন,শালা—মনি পালটি মেরে উঠেছিল।

খগেন হাসলো,সে ধীরে বলল,মনি,আমি কেন তোর শালা হতে যাব রে–তোর কি আর ভাই তাই নাই–সে হবে আমার–

কথা খগেন শেষ করতে পারে নি,দজ্জাল মেয়েটা কিনা সিধা খগেনের কলার চেপে ধরল !

মিচকে খগেন বলে উঠলো,ধর,ধর কলার কেন–আমার গাটা একটু ছুঁইয়া দেখ।

ছ্যাঁত করে উঠলো কি মনির মনটা ? ঝগড়া নিমেষে সরে গেল। বাবা,এ যে পুরুষের ছোঁয়া-ত্রস্তে মনি সরে দাঁড়ালো–যেন বিদ্যুতের ঝটকা খেয়েছে।

এ ঘটনার পর থেকে মনি অনেক শান্ত–খগেন মনে মনে আনন্দ পেয়েছিল। মনিকে শান্ত করতে পেরেছে বলে। এ যেন একেবারে বশীকরণ মন্ত্রের একশান ! একেবারে কাল কেউটের ফণা ধ্বস ! সে মনে মনে বলে উঠেছিল,প্রভু ! সবই তোমার ইচ্ছা।

ভুলে ভটকে কখনো মনির সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে মনি আড় চোখে দেখে–লক্ষ্য করেছে খগেন–সেই পুরুষের ছোঁয়াই কি তা হলে ঘায়েল করেছে মনিকে ? কে জানে বাবা।

গল্পের বিষয়:
হাস্যরস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত