তিন চোরের গল্প

তিন চোরের গল্প

এটা তিন চোরের গল্প

এই দিন দিন নয় আরো দিন আছে
এই দিনেরে নিবে তারা সেই দিনের কাছে
আমরা ও এই দিনরে সেই দিনের কাছে নিয়া যামু কুদ্দুস ভাই। রেডিওতে কুদ্দুস বয়াতি র গান শুনে আর জবাব দেয় তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে।

তাদের ধনুক ভাঙ্গা পন। ভাঙলে ও তারা মচকাবেনা। প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে বেশ কিছু টাকা হলে তারা পাশের গ্রামে গিয়ে একটা স্কুল করে দিবে সেখানে তারা পড়ানোর দায়িত্ব পালন করবে। এইজন্য মহা আনন্দে এখন থেকে কাজে নেমে পড়েছে।
তারা তিন চোর। জামাল ,কামাল ,তমাল। প্রতি রাতে গ্রামের কোন বাড়িতে সাফাই করা তাদের একমাত্র কাজ। ভাগ্য তাদের বেশ সহায়। এখন ও তারা ধরা পড়েনি। দিনের বেলায় তারা বয়স্ক স্কুল এ পড়তে যায়। সবার খেত খামার এ কাজ করে দেয়। অসহায় বৃদ্ধ দের বাজার এর থলি এগিয়ে দেয়। গ্রামের সবাই তাদের বেশ ভালবাসে। ঘুনাক্ষরে তাদের কেও সন্দেহ করেনা। তবে তারা দেখে শুনে সাফাই করে। যে বাড়িতে বিদেশী জিনিস পত্র আসে, যাদের ছেলে মেয়েরা বাহিরে থাকে। গোপনে খবরে যখন জানতে ডলার আছে এই বাড়িতে বা মূল্যবান কাপড় চোপড়, অলংকার আছে যে সব বাড়িতে সে সব বাড়ির সম্পদ হস্তগত করে।

মাঝে মাঝে নৈশ প্রহরীর কাজ করে স্কুল এ। স্কুল এর অনেক মূল্যবান জিনিস তাদের হাতের উপর থাকলে তারা তা স্পর্শ করেনা।

আজ তাদের এক বিশেষ অপারেশানের দিন। সাফাই হবে মাতবরের বাড়ী।ছেলেমেয়েরা সব মালদার কুয়েতী পার্টি। অনেক সোনাদানা নিয়ে এবার তারা গ্রামে এসেছে জনশ্রতিতে তা প্রকাশ। মাতবরের এক মেয়ে কণা ছিল তাদের খুব পছন্দের । তিনজনে একদিনে প্রনয় নিবেদন ও করেছিল। তিনজন ঝাটাবাড়ী সহ গ্রাম থেকে বহিস্কার হয়েছিল।গ্রাম থেকে বহিস্কার এর পূর্বে মাথার চুল বিসর্জন সহ ইট হস্তে বহিরাগত হয়েছিল। সেই অপমান তারা ভূলে যায়নি এখন ও।কণাকে দেখার সাথে সাথে প্রেমের অনির্বাণ শিখা জ্বলে উঠার আগে প্রতিশোধের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে উঠল মনের কোনে।

তিনজনের ধনুক ভাঙ্গা পন কণার সব অলংকার আজ রাতে সাফাই করবে বেটিরে মাইর খাওয়াইব জামাই এর হাতে।তিনজন দৃঢ়প্রতিগ্ঘ এই মিশনে সফল হবেই তারা। বাপ বেটির মুখ ছাই করে দিবে জামাই এর সামনে। জামাল কামাল আর তমাল তিন চোর। তারা প্লাষ্টিক লাঠির মত মচকে যায় কখন ও কখন ও কিন্তু নুয়ে পড়েনা। একবার কোন সিদ্বান্ত নিয়ে সেখান থেকে তাদের নড়ানো সম্ভব না। ভিতরে ভিতরে যদিও ক্ষয়ে যাচ্ছে কষ্টে,বেদনায় কণাকে স্বামী সহ হাসি আনন্দে মত্ত অবষ্থায় দেখে কিন্তু বাহিরে কিছু দেখিনা এরকম ভাবে তারা ও দ্বিগুন মত্ত থাকে হাসি খুশীতে কণার সামনে

রাত বাজে বার। নিশীথের অন্ধকার সারা প্রকৃতি জুড়ে।কোথা থেকে অলুক্ষনে পেচা ডেকে উঠল তা ও তাদের দমাতে পারলনা এই মুহূর্তে।

একজনের কাধে একজন চড়ে দেওয়াল টপকাল অবশেষে। উঠান দিয়ে সিদ কাটতে শুরু করল।

হঠাৎ টর্চের আলো মুখে পড়তে তিনজনে জমে পাথর হয়ে গেল।
বিরাশিকা ওজনের চড় পড়ল তমালের গালে,সে কিছুই শুনতে পায়নি মাতবর চাচা কি বলল কেন না চড়ের সাথে সাথে সে বয়রায় পরিনত হয়েছে। বাকী দুজন জামাল আর কামাল শুনল হুংকার সহ চাচার ছোট কথা

তোরা!!! চোরা।
তোরা চোরা।

এ তোরা কি দেখাইলি আমারে।
মানুষরে দয়া করস দিনে
চুরি করস রাতে।

এই চোরাগুলি কি শাস্তি দেই এখন।
বেইজ্জতির একশেষ।কণার জামাই বলে উঠল
আপতত বাইন্ধা রাখি বাবা।সকালে উইঠা দিমু বেতানী।
তিনজনে করুন চোখে তাকিয়ে রইল।তাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ভাব উধাও হওয়ার পথে।

গল্পের বিষয়:
হাস্যরস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত