কালের বিবর্তন

কালের বিবর্তন

২১৫১ সাল ২৯ সেপ্টেম্বর । রাহাত স্কুলে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। খুব চিন্তায় আছে সে।

কারণ মায়ের কাছে শুনেছে দুদিন পরেই তাকে মেয়েপক্ষ দেখতে আসবে।

লেখাপড়া আর নাও হতে পারে তার। আইপ্যাড টা হাতে নিয়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হলো সে।তখনই তার দাদুর কথা মনে পড়ে গেলো।

তার দাদু তাকে বলেছিলো, একসময় এই আইপ্যাড নাকি অন্যরকম ছিলো। সেটা নাকি ব্যাটারি ছাড়াও ব্যবহার করা যেতো।

সেটাকে সবাই আদর করে বই বলতো।

কিন্তু কালের বিবর্তনে বইয়ের সেই জায়গা দখল করে নিয়েছে আইপ্যাড।
.
রাস্তায় এসে দেখে রাস্তা একদম ফাকাঁ। পথে আজ কোনো হেলিকপ্টার নেই। তখনই তার মনে পড়ে গেলো কালকের নিউজ এর কথা।

বিরোধী দলের অবরোধ চলছে।

সকাল সন্ধ্যা হরতাল। অথচ দুইদিন আগেও আকাশে হেলিকপ্টারের বেহাল জ্যাম ছিলো।

আর আজ হরতাল তাই আকাশে আজ কোনো হেলিকপ্টার উড়ছে না।

মন খারাপ করে সে আবার বাসায় চলে গেলো।
.
দুইদিন পর মেয়েপক্ষ এলো ছেলে দেখতে। রাহাতের মা রাহাতের বাবাকে পাঠালো ছেলেকে রেডি করার জন্য।

রাহাতের বাবা রাহাতের রুমে এসে রাহাতের কাধেঁ হাত রেখে বললো..
–বাবা জলদি রেডি হয়ে নে। মেয়ে পক্ষ বসে আছে।
রাহাত তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাদতেঁ লাগলো। আর কেদে কেদে বললো..
–বাবা এ বিয়ে আমি করবো না। আমি লেখাপড়া করতে চাই। আমি নিজের পায়ে দাড়াতে চাই।
কিন্তু তার বাবা তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো..
–কি করবি বাবা বল। অবলা পুরুষ হয়ে জন্মালে জীবনে কিছুই নিজের ইচ্ছাতে হয়না। সংসারের সবকিছু তো তোর মা সামলায়।

তার বিরুদ্ধে আমি কি কিছু বলতে পারবো। পুরুষের কোনো বেল নেই এ সমাজে।তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়েনে লক্ষি বাপ আমার।
বলেই রাহাতের বাবা রুম থেকে চলে গেলেন। রাহাত কাদতেঁ কাদতেঁ বালিশ ভিজাতে লাগলো।

কত আশা ছিলো তার জীবনে অনেক লেখাপড়া করবে নিজের পায়ে দাড়াবে।

কিন্তু সমাজের নিয়ম এমন হয়ে গেছে যে অবলা পুরুষদের ইচ্ছার কোনো মূল্য নেই।

সাবালক না হতেই চলে যেতে হবে শাশুড়ির বাড়ি। দাদুর কথা মনে পড়ে গেলো রাহাতের।

দাদু বলেছিলো, একসময় এই সমাজে শুধু পুরুষরাই রাজ করতো।

কিন্তু কোনো এক সময় নারীরা আন্দোলন করতে থাকে নারীপুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। একসময় সেটা সফল হয়।

কিন্তু কালের বিবর্তনের ফলে আজ নারীরাই সমাজে রাজ করছে।

এইতো কদিন আগেই নারী পুরুষ সমান অধিকারের জন্য ওদের স্কুলে সকল ছেলেদের নিয়ে একটা রেলি হলো।

সমাজে পুরুষ রাও একটা অংশ এটা নারীদের বুঝানোর জন্য। কিন্তু অবলা পুরুষদের কথা কি আর কেউ শুনে।
.
পুরুষরা আজ অবহেলিত শোষিত। এইতো কদিন আগের ঘটনা।রাহাত স্কুলে যাচ্ছিলো। পথে ছোনিয়া বখাটিনির সাথে দেখা।

দলবল নিয়ে প্রায়ই টিজ করে রাহাতকে। কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনা। কারণ ওর মা এই এলাকার চেয়ারম্যান।

ছোনিয়া তার দলবল নিয়ে অনেক ছেলেকেই গণধর্ষণ করেছে কিন্তু আজ পর্যন্ত পুলিশ ওর কিছুই করতে পারেনি।

ছোনিয়া তার দলবল নিয়ে রাহাতকে রাস্তায় আটকায় ..
–কিরে ছোকরা কই যাস?
–স্কুলে যাই। দেখছোনা আইপ্যাড হাতে।
–ওই ছোকরা এত দেমাগ ক্যা তোর? দিমুনি দেমাঘ কমায়া? দিন দিন তো শুধু হ্যান্ডসাম হইয়া যাইতাছোস?
ছোনিয়ার দলের অন্য মেয়েরা সবাই খিল খিল করে হেসে উঠে। রাহাতের অসস্তি হচ্ছিলো খুব।
–আমাকে যেতে দিন। ক্লাসের দেড়ি হচ্ছে।
সেদিনের মতো পার পায় ছোনিয়ার হাত থেকে। কিন্তু ভয়ে থাকতে হয় সবসময়। দেশের অবস্থা ভালো নয়।

দরজায় রাহাতের বাবা দাড়াতেই রাহাতের ভাবনায় ছেদ পড়লো।
–কিরে বাবা এখনো রেডি হসনি? মেয়েপক্ষ কখন থেকে বসে আছে।
–এইতো বাবা আসছি।
রাহাত তরিঘরি করে রেডি হতে লাগলো।
.
রাহাত বসে আছে অথিতিদের সামনে। অথিতি এসেছে মেয়ের মা, খালা আর মেয়ে। রাহাতের মা মেয়ের মাকে বললো..
–বিয়াইন আপনি বিয়াই সাহেবকে না এনে কিন্তু কাজটা ঠিক করেননি।
–আর বলবেন না বাসায় যত কাজ। এত কাজ ছেড়ে কি আর সে আসতে পারে!
মেয়ের খালা রাহাতকে উদ্দেশ্য করে বললো.
–বাবা একটু হেটে দেখাও তো।
রাহাতের মেজাজটা একটু খারাপ হয়ে গেলো। ছেলে হয়ে জন্মেছে বলে কি সে বাজারের পণ্য নাকি। তারপরও অনিচ্ছা সত্ত্বেও হেটে দেখালো সে।
মেয়ের মা জিজ্ঞেস করলো..
–বাবা রান্নাবান্না কি কিছু জানো?
রাহাত মাথা নাড়লো..
–মাশাল্লাহ, সোনার টুকরো ছেলে। আমার ঘরে জামাই হয়ে এলে নিজের ছেলের মতোই দেখবো। খুব পছন্দ হয়েছে।
..এদিকে রাহাত কে মেয়েটা দেখেই যাচ্ছে। রাহাত লজ্জা পেয়ে গেলো। তবে মেয়েকে তারও পছন্দ হয়েছে।

সেদিনের মতো তারা বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে চলে গেলো। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো আরেক জায়গায়।

মেয়েপক্ষ যৌতুক হিসেবে একটা ছোট হেলিকপ্টার চেয়েছে।

কিন্তু রাহাতের অভাবি সংসারে সেটা অনেক কষ্টের। তবুও ভালো ঘরে ছেলের বিয়ে হবে এই ভেবে হ্যাঁ করে দেয় রাহাতের মা।

যৌতুক বাকি রেখেই বিয়ে দিয়ে দেয় ছেলের।রাহাত অনেক কষ্টে বিয়ের রাতে বাবা মার কাছে বিদায় নেয়।

রাহাতের বাবা কেদে কেদে বলে ..
–কাঁদিস না বাবা। ছেলেদের নিজের ঘর নেই। জন্মের পর মায়ের ঘর আর বিয়ের পর বউয়ের ঘরই তাদের ঠিকানা। তুই কাঁদিস না।
রাহাতের মা বলে ..
–ছেলে হয়ে জন্মেছিস বউয়ের ঘরে তো যেতেই হবে। তোকে এতদিন আগলে রেখেছি এই দিনের জন্যই। আজ আমার দায়িত্ব শেষ।

ভালো থাকিস বউয়ের সাথে। এই বলে বউয়ের হাতে রাহাতের হাতটা তুলে দেয়।
.
.
কিন্তু বিয়ের পরের দিন থেকেই যেনো রাহাতের জীবনে নেমে আসে অন্যরকম সব দুর্যোগ।

শাশুড়ির বাড়ির সবাই তার উপর অত্যাচার করতে থাকে।

শালা শালিরা তাকে জালিয়ে মারে। সবসময় সব কাজ করে নেয়।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই বাসন মাজা রান্না করা থেকে শুরু করে সব কাজ করতে হয় তাকে।

বাড়ির অন্য সব জামাই শুধু পড়ে পড়ে ঘুমায়। কারণ তারা বড়লোক ঘর থেকে এসেছে। আর রাহাত এসেছে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে।

আর যৌতুকের হেলিকপ্টার এখনো দিতে পারেনি তার মা বাবা। তাইতো তার আজ এই অবস্থা।
.
একদিন রাতে তার বউ তার কলার ধরে ঝাকি দেয়।
–ওই হারামির পো তোর মায়ে হেলিকপ্টার দিবো কবে?
রাহাত ভয়ে ভয়ে শুধু কাদে। এই সমাজে যৌতুকের জন্য আর কত পুরুষ নির্যাতন হবে সেটাই ভাবতে থাকে সে।
.
শাশুড়ির বাড়ির সবাই তাকে গলাধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। রাহাতের বউ বজ্রকন্ঠে বলে ..
–চলে যা তোর মায়ের বাড়ি। হেলিকপ্টার না নিয়ে ফিরবি না।
.
অন্ধকার রাতে রাহাত কাদতেঁ কাদতেঁ মায়ের বাড়ির দিকে হাটতে থাকে। রাস্তাঘাটে তাকিয়ে খুজতে থাকে হেলিকপ্টার।

অন্তত একটা হেলিকপ্টার পেলেও তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়া যাবে। পথে যে বখাটিনিরা মাতাল হয়ে ঘুরছে।

তারমত হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই যে ছিড়েকুরে খাবে। তাই ভয়ে ভয়ে এগোতে থাকে সে।

গল্পের বিষয়:
হাস্যরস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত