দীর্ঘ ২ বছর ধরে মিলিকে প্রপোজ করছি । কিন্তু, আমার পোড়া কপাল বরাবরের মতো মিলি আমাকে জাস্ট বন্ধু বলে এড়িয়ে যায়। আর একবার এই ঈদে প্রপোজ করব যদি না করে দেয় তবে ওর ছোট বোনের সাথে ইটিস পিটিশ শুরু করে দিব ।
তখন বুঝবে বাছাধন কত দুধে কত ঘি । এবার তো ওকে আমার প্রপোজ একসেপ্ট করতেই হবে। কারন এবারের প্রপোজটাতে
ওকে এমন একটা সাপ্রাইজ দিব যেটাতে ও না বলার সাহস পাবে না । এবার আর কথা না বাড়িয়ে কাজ শুরু করে দিই । ঝটপট মিলিকে কল দিলাম। সুন্দরী বান্ধবী আমার কল রিসিভ করেই,
-হ্যালো ! (মিলি)
-হ্যালো জান তুমি কই ? (আমি)
-শালা তুই তোর এইসব আপেল মার্কা কথা রাখবি ?
-ওকে ওকে । আচ্ছা শোন তোকে একটা কথা বলার জন্য কল দিয়েছিলাম ।
– আর যায় বলিস না কেন প্রপোজের কথা বললে কিন্তু কলটা কেটে দিব ।
-তুই কি আমাকে নেড়ি কুত্তা ভাবিস? যাকে একবার তাড়িয়ে দিলেও বারবার ফিরে আসে ।
-সত্যি বলতে তোর আর কুত্তার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই ।
-শেষ পর্যন্ত আমাকে কুত্তার সাথে তুলনা করতে পারলি ?
-ইমশোনাল ব্লাকমেইল করা বাদ দিয়ে আসল কথা বল ?
-বিকালে আমার সাথে ঘুরতে যাবি ?
– ভাই তোর সাথে ঘুরতে গেলেই ভয় লাগে। তুই যে লেভেলের ছ্যাঁচড়া তাতে যেকোনো সময়ে প্রপোজ করতে পারিস ।
-যাবি কি না তাই বল ।
নৌকাতে চড়ে নদী ভ্রমনে যাব। তুই যদি না যাস তাহলে অন্য কাউকে নিয়ে যায় ?
-অন্য কাউকে নিতে হবে না। আমিই যাব ।
-ওকে জানু আমি কিন্তু অপেক্ষায় থাকব ।
-আবার !
-ওক্কে বান্দুপি চইলা আইসো। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।
-সারপ্রাইজ! কিসের সারপ্রাইজ ?
-আসলেই বুঝবি ?
-উল্টা পাল্টা কিছু নাতো ?
-আমাকে দেখে কি তোর তেমন মনে হয় ?
-সত্যি বলতে তোকে আমার বিশ্বাসও হয় না ।
-আজ গার্লফ্রেন্ড নেই বলে তোর সাথে ঘুরতে চাইলাম আর তুই আমাকে এসব বলতে পারলি ?
-হয়েছে হয়েছে তোর ন্যাকামি বাদ দে আমি চলে আসব ।
আমি জানি বান্ধবী আমার যতই মুখে না না বলুক কিন্তু মনে মনে আমাকে ঠিকই ভালোবাসে। আর সেজন্যই আমার পাশে
অন্য কোনো মেয়েকে দু চোখে দেখতেই পারে না। এই তো সেদিন ওকে রাগানোর জন্য ওর ছোট বোনকে কল দিয়েছিলাম তারপরে সেটা ও জানতে পেরে ছোট বোন রিমিকে যে হারে ঝাড়ি দিয়েছে সে কথা গোপন থাকাই ভালো ।
পড়ন্ত বিকেলের রোমান্টিক পরিবেশে নৌকাতে বসে আছি । প্রকৃতি রোমান্টিক ,আমিও রোমান্টিক । তারপরেও মাঝির গান
আরও রোমান্টিক করে তুলেছে । এই রোমান্টিক মুহূর্তে বান্ধবী আমার পৃথিবীর সব আটা,ময়দা,সুজি নিজের মুখে লেপন করিয়া মোর সামনে প্রকট হইলো। আমিতো হা করিয়া চাহিয়া রইলাম তাহার দিকে ।
অতঃপর,
-এই যে হ্যালো, মুখটা বন্ধ করুন এবার । (মিলি)
-অনন্য অসাধারন তুমি তাই তোমার দিকে চাহিয়া থাকি । (আমি)
-তোর চাপাবাজি বন্ধ করবি ।
-চোখের কি দোষ বলো, শুধু দেখতে চাই ।
-আবার শুরু হয়ে গেছেতোর ইতরামি। শালা তোরে জীবনে মানুষ করতে পারলাম না ।
-যতই অপমান করো না কেন আমায়, তবুও ফিরে আসব আমি তোমায় ।
-তোর মতিগতি আমার ভালো ঠেকছে না। তুই থাক আমি গেলাম ।
-এই দাড়া। চলে যাবি কেন? তোর সাপ্রাইজ আছে তো ?
অতঃপর মিলি নৌকাতে উঠে এলো। মাঝি চাচাও নৌকা চালাতে শুরু করলো ।
-তো কি সারপ্রাইজ রেখেছিস আমার জন্য ? (মিলি)
-আছে আছে । (আমি)
-বল ?
-এখন তো বলা যাবে না। আগে নৌকা মাঝ নদীতে যাবে তারপর ।
-মাঝ নদীতে গিয়ে সাঁতার কাটবি নাকি?
-গুড আইডিয়া। তুই সাঁতার কাটতে পারিস ?
-না না। আমি এই প্রথম নৌকাতে উঠে নদীতে এলাম ।
-তাহলে তো খেলা জমবে !
-খেলা জমবে মানে ?
-মিলি আমি তোকে ভালোবাসি !
-আবার তুই শুরু করেছিস ।
-তুই বুঝিস না কেন ?
-দেখ তুই আমার জাস্ট ফ্রেন্ড ।
-তাহলে আমার সাথে অন্য মেয়েকে সহ্য করতে পারিস না কেন ?
-বলতে পারি না ।
-এটাই তো ভালোবাসা ।
-এটা ভালোবাসা না ।
-আজ যদি তুই আমাকে ভালোবাসি না বলিস তবে তোকে ধাক্কা মেরে নদীতে ফেলে দিব ।
-তুই আমাকে কখনোই নদীতে ফেলতে পারবি না ।
-ঠিক বলেছিস । তোকে ফেলতে পারব না কিন্তু আমি নিজে তো লাফ দিতে পারব ।
বলা মাত্রই নদীতে দিলাম ঝাঁপ। এমন একটা ভাব নিলাম যেন আমি সাঁতার জানি না ।
মিলি উদ্ধিগ্ন হয়ে মাঝিকে দিয়ে আমাকে নৌকায় তুলে আনলো ।
আমার কিছুই হয়নি তবুও ভাব দেখালাম যে আমি নদীর পানি খেয়ে ফেলেছি। দুবার নাম ধরে ডাকলো কিন্তু সাড়া দিলাম না । পেটে হাল্কা চাপ দিকে থাকলো আর আমি সিনেমা হিরোদের মতো মুখ দিয়ে হাল্কা পানি বের করলাম। কিন্তু তাতেও কাজ হলো না ।
এবার প্ল্যান মতো মাঝি বললো,
-আফা ভাইয়া মনে হয় অনেক পানি খাইয়া ফেলেছে। এহন আন্নের একটা উপায়ই আছে ।
-কি উপায় ?
-মুখে মুখ লাগিয়ে পানি বের করন লাগবে ।
মিলি কোনো কিছু না ভাবে তাই করতে উদ্যত হলো। ওর মুখটা আমার দিকে যত এগিয়ে আসছিলো ততই শিহরন বেড়ে
যাচ্ছিল । এবার আর অভিনয় করতে পারলাম না ।
-আরে থাম থাম । (আমি)
-আবির । (বলেই কান্না শুরু করে দিল)
-আরে কাঁদছিস কেন ?
-তুই ওভাবে লাফ দিলি কেন ?
-আমি লাফ দিলে তাতে তোর কি? তুই আমার কে?
-তুই বুঝিস না ।
-না ।আমি বুঝি না ।
-তুই একটা গাধা ।
-হ্যাঁ আমি গাধা ।
-হাবলু ।
-হ্যাঁ আমি হাবলু ।
-শালা কূত্তা ,বিলাই তুই বুঝিস না আমি তোকে ভালোবাসি ।
-তাহলে এতদিন পিছু পিছু ঘুরালি কেন ?
-যাতে তুই আমাকে আরও ভালোবাসিস ।
-হু ঢং ।
-আচ্ছা আমার সারপ্রাইজ কোথায় ?
-সাপ্রাইজ কিসের ।
-ফোনে বললি যে সারপ্রাইজ দিবি ।
-দিলাম তো ?
-কই ।
-এই যে এতক্ষন যা ঘটলো তা সবই আমার সারপ্রাইজ ।
-তারমানে ?
-তারমানে এসবই সাজানো ছিল ।যাতে তোর মুখ থেকে আমি ভালোবাসি কথাটা বের করতে পারি ।
-যদি তোর কিছু হয়ে যেত ?
-আমিতো সাঁতার জানি ।
-তারমানে তুই আমাকে পুরো মুরগি বানিয়ে দিয়েছিস ।
-হুম ।
-তাহলে এখনো বসে আছিস কেন । যা আবার নদীর পানি খেয়ে আয় । যাতে একটু বুদ্ধি বাড়বে ।
অতঃপর বালিকা মোরে আবার নদীতে ফেলে দিল ।যদি একটু বুদ্ধি হয় ।