আন্টি সরি ফর দ্যাট

আন্টি সরি ফর দ্যাট

সেদিন বাসায় ফিরে দেখি আন্টি এসেছেন। আন্টি মানে আমার ছোট কাকির মামাতো বোন। ব্যাপক স্টাইলিশ আবার কথায় কথায় ইংরাজি কয়; স্যরি ফর দ্যাট।

জিজ্ঞেস করলাম, -আন্টি কেমন আছেন? আন্টি ফোনে কথা বলতেছেন। আমাকে পাত্তাই দিলেন না।
একটু পর বললেন, ব্যস্ত ছিলাম ফোনে। স্যরি ফর দ্যাট!

ছোট কাকিকে বললাম, তোমার বোনের ইতিহাস কি? এত ইংরাজি শিখছে কোথা থেকে? স্যরি ফর দ্যাট!
আহা! তাহার ইতিহাস সুমধুর। পরাণডা জুড়াইয়া গেল!

স্যরি ফর দ্যাটে তিনবারে এস এস সি দিয়ে পাশ করতে পারে নাই। পরে কারিগরি থেকে পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে এলাকার হগলকে মিষ্টি খাওয়াইছে।

এইচ এস সি তে তিনবার পরীক্ষা দিয়া তিনবারেই তিনি ইংরাজিতে ডাব্বা মেরেছেন। শেষ নাগাদ এলাকার মানুষ কবে মিষ্টি খেয়েছিলেন তার স্বাদ ভুলিয়া গেলে তিনি আবার একবার মিষ্টি খাওয়াইতে পেরেছিলেন। অর্থাৎ আই এ পাশ দিয়েছেন।
এখন অনার্সে কিংবা ডিগ্রিতে পড়েন। কোন ইয়ারে আছেন? কেউ জিজ্ঞেস করলে মাথা আওলায়ে যায় তার। কেমন তালগোল পাকায়ে উত্তর দেন, স্যরি ফর দ্যাট!

তো সেই আন্টি আমার পাশ দিতে পারলো কি না পারলো না তা নিয়া আমার মাথাব্যথা মোটেও নাই। ইহা আন্টির ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু আন্টির মোবাইল হলো, মাত্র চারখান! তাতে আবার দুটো করে সিম! সবগুলোতেই তার সমানতালে ফোন আসে।

হিন্দি ওয়েলকাম মুভিতে দেখছিলাম মল্লিকা শেরওয়াত দুই কানে দুই মোবাইলে দুইডার সাথে এক লগে কথা কয়। আমি আন্টির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, মানুষের কান কেন চারডা হইলো না! এর কারণ আন্টি আমার গুলায়ে ফেলে কখন কার সাথে কি বলছে, পরে বার বার বলতেই থাকে স্যরি ফর দ্যাট!

ইহা নিয়াও আমার মাথা ব্যথা নাই। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো অন্য জায়গায়, কাকি রান্না করতে যাবে তো ফ্রিজ খুলেছে দেখে ফ্রিজ বন্ধ! কারণ কি? ফ্রিজের লাইন খুলে স্যরি ফর দ্যাটে পাওয়ার ব্যাংক চার্জে দিছে।

ছোট ভাইটা টম এন্ড জেরি দেখবে টিভিতে লাইন আসে না। কারণ কি? স্যরি ফর দ্যাটে মোবাইল চার্জে দিয়েছে।
কম্পিউটারে গেমস খেলবে, তারও উপায় নাই!
সব মিলিয়ে বাসায় তখন প্লাগ সংকট! কাকি আমার দিকে তাকায়, ছোট ভাইটা কাকির দিকে তাকায়! আমার সকলে মিলে তাকাই স্যরি ফর দ্যাটের মোবাইলগুলোর দিকে!

সেদিন রাতে বাসায় ফিরে কাকা সকলকে ডেকে আনলো রুমে। জানতে চাইলাম ঘটনা কি? কাকা বললেন, আমার শ্যালিকার জন্য গিফট এনেছি। তোমাদের সকলের সামনে দিতে চাই। সকলের সামনে রেপিং কাগজে মোড়ানো একটা প্যাকেট দেয়া হইলো, স্যরি ফর দ্যাটে রেপিং কাগজ খুলে দেখে ; ইহা একটা মাল্টি প্লাগ! সেদিন রাতে সবাই একসাথে খেতে বসছি। একটু পর ভ্রুর….ভ্রুর… করে ভাইব্রেশনে ফোন কাঁপে। আন্টি খাওয়া বাদ দিয়া দৌড় দিলো। আর জবাব দিল ফোনে..খাইতেছি। কথা বলতে পারব না এখন। স্যরি ফর দ্যাট।

আন্টি খাবার টেবিলে ফিরে আসতেই সবাই তাকালাম আন্টির দিকে। আন্টি সকলকে একসাথে বলল, স্যরি ফর দ্যাট। শাবনুরের পি এস ফোন দিয়েছিল। কিছুক্ষণ বাদেই আবার ফোন। আন্টি আবার এসে জবাব দিলো, স্যরি ফর দ্যাট। রঙ্গলীলা সিনেমার সেকেন্ড হিরো ফোন দিয়েছিল। আমার কাকা কাকী দুজনেই রঙ্গলীলা সিনেমা নিয়ে পরলো। গুগলে সার্চ দিয়া দুজনেই কোন কুল কিনারা পাইতেছে না। এই নামে কোন সিনেমা আছে কিনা আদৌ? আমি বললাম, ইউ টিউবে সার্চ দিয়া দেখেন, কিছু পাইলেও পাইতে পারেন! সকলেই আমার কথায় কিছুটা স্বস্তি পাইলেও আস্থা রাখিতে পারল না।

পরদিন দুপুরে ভাত খেয়ে ঘুম দিয়েছিলাম। কাকী বলল, স্যারি ফর দ্যাটে আজিমপুর যাবে। রামপুরা থেকে কোন বাস যায়? বললাম, ফাল্গুন। উঠাইয়া দাও একটু। মনে মনে শুকরিয়া আদায় করলাম যে ইহার লগে আমাকে আবার যাইতে বলে নাই। আর ভাবলাম, আজিমপুর ইডেন কলেজ। হয়তো কোন বান্ধবীর সাথে দেখা করতে যাবে। ফাল্গুন বাসে আন্টিকে উঠিয়ে দিয়ে আমি আমার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে গেলাম। রাত প্রায় দশটা নাগাদ বাসায় এসে দেখি, এক ট্রাফিক পুলিশ ভাই বইসা আছে, কাছেই স্যরি ফর দ্যাটে ফিকুইরা ফিকুইরা কান্না করতেছে। আমার কাকা কাকী দুজনেই বসে আছে।

বললাম, ঘটনা কি? ব্যাখ্যাটা হইলো এই, রঙ্গলীলা সিনেমার সেকেন্ড হিরো তাহাকে ডেটিং এর জন্য আমন্ত্রণ জানাইছে আজমপুর, উত্তরা। সে ভুল কইরা চইলা গেছে আজিমপুর। যারা ঢাকায় থাকেন তারাই বলিতে পারিবেন আজিমপুর হইতে আজমপুরের দূরত্ব এবং যাওয়ার কত বিড়ম্বনা। সেই আন্টি আমার আজিমপুর ছাড়িয়া পলাশীর মোড়ে দাঁড়াইয়া দাঁড়াইয়া কান্না করিতেছিল। তার কারণ ঢাকা শহরের রাস্তাঘাট কিছুই চেনে না সে! এখন কি হইবে তার?

এক ট্রাফিক ভাই ডিউটি করিতেছিলেন। তিনি এগিয়ে এসে বলছেন, কি হইছে ম্যাডাম? ট্রাফিক ভাই নেহাতই ভাল মানুষ। সে বলেছে, আপনাকে আবার বাসে উঠাইয়া দেই? কিন্তু আন্টি আমার সাহস পায় নাই। সে কান্না করিতে করিতে বলেছে, রামপুরা না যাইয়া আবার কোন পুরায় উঠিব তার ঠিক নাই। আমার কাজ নাই। একা যাইতে পারব না। এদিকে রঙ্গলীলা সিনেমার সেকেন্ড হিরো আন্টি আজিমপুর চইলা গেছে শুইনা সেই যে ফোন বন্ধ করছে আর খবর নাই! পরে আর কি! আন্টি এত রাত অবধি পুলিশ বক্সে বইসা ছিল। ট্রাফিক ভাই ডিউটি শেষ করে ফেরার পথে বাসায় পৌছে দিয়ে গেল।

কাকা বললেন, রঙ্গলীলা সিনেমার হিরো কই? আন্টি আমার ফিকুইরা কান্দন বাড়াইয়া দিয়া মনের সব দুঃখ একত্র কইরা আমার দিকে তাকাইয়া কইলো,
-তুমি ভাত খাও না ছাই খাও? আমি কইলাম, আন্টি স্যরি ফর দ্যাট! আমার কাকা বললেন, কইছিলাম না শ্যালিকা, সারাজীবন পিরিতি কইরা তোমার কপালে আছে মুরগির বিষ্ঠা! এইবার হইলো তো!

গল্পের বিষয়:
হাস্যরস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত