সকাল সকাল আব্বায় খাটে ভুমিকম্প ধরায় দিল। কতকরে বললাম ৫মিনিট খাড়ায়েন, মুই আইতেছি শুনলোই না মোর কথা।
–এই হ্রামি, উঠবি নাকি সাপ পিডামু?
–না আব্বা, এইতো উঠতাছি। তয় জিগায় এত সকালে কেডা মরলো?
–হ্রামি, তুই মরবি।
–আমারে কি পাগলে কামড়ায়ছে? সাতসকালে উঠে মরার শখ করবো? যান আন্নের চরকায় তেল দেনগা।
এই বলেই কাঁথাটা গায়ে চড়িয়ে দিলাম আর একটু ঘুমাবো বলে।
.
আব্বায়ও কম যায়না। পিছন থেকে একটানে কাঁথাটা মঙ্গল গ্রহে পাঠায় দিল।
–এইডা কি করলেন আব্বা?
–হাছা করছিনি? গরু কিনতে যামু, তাড়াতাড়ি আয়।
আমারে আর পায় কে? এক লাফে খাটের নিচে, আরেক লাফে দরজার বাইরে। আইজ পেটের মধ্যে হাম্বা হাম্বা রব উঠেছে।
সেইরাম খুশি লাগছে। দরজার কাছে আসতেই চোখ দুইটা উপতা হয়ে গেল। লুঙ্গি বাবাজি খাটের নিচে কাইন্দা মরতাছে।
আর ৩৩পাটি দাত বাইর করে বলতাছে পারভেজ তুই এইটা কি করলি?
যে আমি সারাজীবন তোর ইজ্জত রক্ষা করছি, সেই আমাকেই এভাবে ফেলে চলে যাচ্ছিস?
লুঙ্গি বেচারা আর খুলার সময় পাইলো না? আলগা গিট আছিল, খাটের নিচে আসতেই চিৎপটাং।
.
দরজার কাছেই ছিল পাশের বাড়ির এক ভাবি। যা হবার তাই হলো, দোকানপাটে যা মূল্যবান সম্পদ আছিল, সব ফাস হয়ে গেল।
অচিরেই হয়তো চুরি হইতে পারে। লুঙ্গি হয়তো মাইন্ড করবো।
তয় অত্যন্ত বিষাদদের সাথে গান ধরলাম,
লুঙ্গি লুঙ্গি লুঙ্গি আমার সোনা টুকরি রে…রে…..রে………
লুঙ্গি লুঙ্গি লুঙ্গি আমার কি সব্বনাশ করলি রে…রে…..রে………
কি সব্বববনাশশ করররলি রেরেরে……….
–হারামজাদা রে… এই তোর ৫মিনিট?
–আব্বা, লুঙ্গি বেচারা…ইকটু ঝামেলা করছিল।
–তাড়াতাড়ি আয়, তোর ছোডো মামা আয়তাছে।
–হাচানি?
.
হেতে একজন স্পেশালিষ্ট গরু বিশেষজ্ঞ। গরু নিয়ে বিখ্যাত সব উপন্যাস উনার একদম মুখস্থ।
আলু, পটল, বেগুন সব বিষয়ে উনি গরুকে মিশিয়ে গরুমিশ বানাবেই। গত ঈদের কথা,
.
বিশাল এক এড়ে বাছুর কুরবানীতে হেল্প করতে গিয়ে নিজেই চিতপটাং। লেজ ধরে কত যে কসরত দেখাতে পারে।
ব্যাকসাইডে দাড়িয়ে সেই কসরতটাই দেখাতে গিয়ে অতি জ্ঞানীদের ঘিলু গায়ের উপর ছেড়ে দিয়েছিল।
বেচারা ঘিলুর অতি সুবাসে তিনদিন ধইরা বমি করতেই থাকে করতেই থাকে।
.
আমি আর আব্বায় ওই গরু বিশেষজ্ঞ হাম্বাকে লইয়া হাটে গেলাম। যাবার পথে ফুলভলিউমে হাম্বা হাম্বা করেই যাচ্ছিল, তো আমি কইলাম,
–মামা, আন্নে কি রাইতে বকনার লগে ইটিশ-পিটিশ করেন?
–বকনা আবার কেডা?
হেতে এত্তবড় গরু বিজ্ঞানী হইয়াও বকনারে চিনলোনা। হেইডাই আফসোসের কথা।
.
–দুলাভাই, এই গরুডার লেজ ছুডো। ভালা হইবো না।
–আচ্ছা অন্য গরু দেহি।
–হেইডার কান ঝোলা ঝোলা। তয় গরুর কান তো খাড়া খাড়া থাকবো। হেইডা মনে হয় তিত্বীয় লিঙ্গের গরু।
–আচ্ছ তাহলে বাদ।
–হেইডার শিং ছুডো ছুডো মনে হয়। একটু বড় বড় শিং ওয়ালা, তাগড়া গরু কিনতে হইবো।
–আচ্ছা, খুজে দেখ।
.
অনেক খোজাখুজির পর পেলাম মামার পছন্দের গরু। যেমন তেজ, তেমন শিং।
মামারে কইলাম, একটাই প্রবলেম গায়ের একহাতের মধ্যে গেলে অসম্ভব রকমের শান্ত হয়ে যায়।
–মামা, হেইডা এহন বাড়িত নিবো কেমনে?
–তোর এত টেনশন করতে হবেনা। তুই আর তোর বাপে বাড়িত যাইয়া নাক ডেকে ঘুমা।
–আইচ্ছা মামা,
.
সকালে উঠে দেখি গরু নাই, আব্বারে কইলাম,
–আব্বা গরু কই?
–তোর মামারে তো এহনো দেহিনা। খবরও পাইলাম না, গেল কই?
–গরু নিয়ে ভাগছে হয়তো। মিয়া গরু চোর উপাধিডাও বগলদাবা করবে।
–দাড়া খোজ লাগাই।
.
খুজতে খুজতে পেটের ভাত শুকাইয়া চাল হয়ে গেল, তবুও গরু তথা গরু চোরের কোন তথ্যই পেলাম না। বেলাও অনেক হইতাছে তাই আব্বা কইলো,
–এখনকার মতো বন্ধ শেয়ারচিং কার্যক্রম। নামাজ পড়ে তারপর দেখা যাবে।
–আব্বা, গরু না পাইলে মুই নামাজে যামু না। জেদ ধরে পড়ে থাকলাম।
–কানের নিচে যহন দুইটা লাগামুনে, বুঝতে পারবি।
.
আব্বারে খুব ডরাইতাম। তাই নামাজ পড়তে বাড়িতে আইলাম।
–একি ভূত দেখতাছি নাহি? আন্নেরে গ্রাম সুদ্ধ তন্নতন্ন করে খুজতাছি। আর আন্নে বাসায় বইয়া হাওয়া খাইতাছেন। তয় জিগায় কাহিনী কি?
–এই যা, আগে গোসল সেরে নে। নামাজের সময় হয়ে যাবে।
মামাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আব্বায় কইলো। উঠানের ডান সাইডে রাখা লাল গরুটাকে একনজর দেখে গোসল করতে গেলাম।
.
মামার মতোই আরও আট-দশ টুকরা গরু বিশেষজ্ঞের সাহায্যে ভালোই ভালোই কুরবানী দেওয়া হয়ে গেল।
অবশ্যি মামার চিতপটাং হওয়ার পরিমাণডা একটু বেশিই ছিল। একবার তো একটা গুতাও হজম করলো। যাইহোক পূর্বের কাহিনীটা জিগায়,
–তোর মোখলেস মামারে জিগা।
মোখলেস উনার লেংটা কালের দোস্ত। কিছু না জিগাতেই বলতে শুরু করলো,
–ভালাই ভালাই গাড়িতে কইরা হাটের পর আইলাম। হেরপর যহনি গাড়ি থেইকা নামলাম, তোর মামার অতি বুদ্ধিতে তহনি দড়ি ছিড়ে ছুট লাগাইছে।
হেরপর আর পায় কে? ধানের ক্ষেত, পাটের ক্ষেত, পার হইয়া পুরো গ্রাম চক্কর খাওয়াইলো। পাশের গঞ্জে রহিমের মাইয়ারে এক গুতায় কাত কইরালাইছে।
–প্রেগন্যান্ট হইছে না.? বাচ্চাডা আইনেন। হের আব্বা আমাদের গরু আছিল না?
–ধূর বেডা, কাহিনীডা শোন আগে। বাশঝাড়ের ওপারে যাইয়া একটু জিরাইতাছিল। তোর মামা লেজ ধরে টানতেই দিল এক ঘুড়ান্টি। তোর মামা তো আর নাই।
–যাক, অবশেষে গরু বিশেষজ্ঞেরর প্যাদানি খাওয়ার একটা গল্প শুনলাম। আর শুনবার চাইনা।
–হা হা হা, খালি কি তোর মামাই…..? রহিমের বেডি, মনছুরের পোলা, আর সদ্য বিয়া করা আবুলের বউের গায়ের উপর দিয়া একটা ছক্কা মারছে।
–হা হা হা,,,থামেন থামেন। একটু হাইসা লই।