বিয়ের যেহেতু বয়স হয়েছে, তাই সিদ্ধান্ত নিলাম বিয়েটা করেই ফেলব। বিয়েতো আর এমনি এমনি করা যাবে না। তার জন্য মেয়ে খুঁজে বের করতে হবে। এই কাজে অত্যন্ত দক্ষ আমার এক দুলাভাই আছেন, যার ওপর পড়ল আমার জন্য বউ খোঁজার ‘গরু দায়িত্ব’। গরু দায়িত্ব এজন্য বললাম, হারানো গরু খুঁজতে যে কষ্ট সহ্য করতে হয় বউ খুঁজে বের করতেও সেরকম কষ্ট সহ্য করতে হয়।
যেহেতু দুলাভাই আলু-পটোল টাইপের লোক, সে হিসেবে তাকে দিয়েই বউ খুঁজে বের করা যাবে বলে ঘরের ঊর্ধ্বতন সদস্যরা মনে করেন। যথারীতি তিনি এক মেয়ের সন্ধান পেলেন। আমরা পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করলাম যারা মেয়েকে দেখে এবং তার সার্বিক দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বউ হিসেবে সে নমিনেশন পাওয়ার যোগ্য কিনা।
কমিটির প্রধান হিসেবে মনোনীত হয়েছেন আমার শ্রদ্ধেয় বড় আপা। একটু বেশি চালাক হিসেবে তিনি আমাদের কাছে পরিচিত। তার চোখ ফসকে নড়বড়ে বউ ঘরে চলে আসবে তা ঘরের কেউ বিশ্বাসই করে না। আমি যেহেতু পাত্র, আমাকেও সাথে যেতে হবে মেয়ে দেখার জন্য।
আমাকে সুন্দর লাগার জন্য কড়া শেভ করে নিলাম। জিন্সের প্যান্টের সাথে ঝকঝকে লাল একটা শার্ট গায়ে দিয়ে মাঞ্জা মেরে নিলাম। একজোড়া কেডস পরে চোখে সানগ্লাস মাইরা নিলাম। আজ মেয়েটাকে দেখিয়ে দেবো আমি কত ধানে কত চাল। আমি নাকি বেশি কথা বলি তাই ঘটক সাহেব আমাকে একটু কথা কম বলার পরামর্শ দিলেন।
আমি যেন আগ বাড়িয়ে কিছু না বলি তা তিনি বারবার আমাকে খেয়াল করিয়ে দিলেন।
মেয়েদের বাড়িতে যখন যাচ্ছিলাম, প্রচণ্ড বৃষ্টি নামল। তাদের ঘরে ঢোকার আগে একটা বড় উঠান পার করতে হয়। বৃষ্টির কারণে উঠান পিছলা হয়ে ছিল। যেই না আমি উঠানটি পার হতে যাব, অমনি ধপাস।
আমি ধপাস করে পড়ে যাওয়াতে হি হি হি করে হাসির শব্দ কানে এলো। প্যান্টে যতই কাদা লাগুক আমি সানগ্লাসটা ভালো করে নাকের সাথে চেপে ধরলাম। স্টাইল তো ঠিক রাখতে হবে। কী বলেন।
ঘরে ঢুকেই এমন সিস্টেম করে বসলাম যাতে আমার গায়ে কাদা লাগার দৃশ্য মেয়েটি দেখতে না পায়। আমি মুখে হাসি রাখলাম। হাসলে মেয়েরা নাকি ছেলেদের প্রেমে পড়ে যায়। মেয়েটিকে আমাদের সামনে আনা হলো। চশমার ফাঁক দিয়ে একটু এঙ্গেল করে মেয়েটিকে দেখে নিলাম। দেখতে ভালোই লাগল। মুখের সৌন্দর্য ঠিকমতো আঁচ করতে পারলাম না। মুখে যেভাবে সাদা পাউডার দিয়ে ডিস্টেম্বার করেছে, তাতে করে মুখের প্রকৃত সৌন্দর্য নির্ণয় করা আমার মতো এই হেবলার জন্য দুরূহই হয়ে গেল। ঢুকেই মেয়েটি উচ্চৈঃস্বরে বলে উঠল হাই…। আমি ভাবলাম আমি কোন হাইস্কুল থেকে পাস করেছি মেয়েটি তাই জানতে চাইল। কিন্তু আমার ধারণায় সজোরে ধাক্কা খেলাম যখন মেয়েটি বলে উঠল হাই আঙ্কেল। আঙ্কেল বলাতে আমার মনটা ভেঙে খান খান আট খান হয়ে গেল। কিন্তু আমি কোনোভাবেই হাসি বন্ধ করলাম না।
আমার সামনে নানা পদের খাবার দেয়া হলো। আমি আবার খাবারকে না বলতে পারি না। তাই সমানে খেতে লাগলাম। আমার খাওয়া দেখে মেয়েটি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। মেয়েটির তাকানো দেখে আমি ভাবলাম আমার খাওয়াতে হয়তো আর্ট আছে, তাই সে চোখ বড় করে তাকাচ্ছে। যতই চোখ বড় করে তাকাক আমি কোনোভাবেই খাওয়া বন্ধ করলাম না।
দুলাভাই আমাকে ও মেয়েটিকে আলাদা করে কথা বলার জন্য বললেন।
মেয়েটির সামনাসামনি বসে চোখে চোখ রাখতে আমার লজ্জা লাগছিল। তাই তার চোখের দিকে তাকালাম না। মেয়েটি আমাকে বলল, ‘আমার ফেরেম আছে।’ আমি ভাবলাম আমাকে তার এতই পছন্দ হয়েছে যে, মেয়েটি হয়তো আমার ছবি বাঁধাই করে তার ফ্রেমে রাখার কথা বলছে। তার কথা শুনে আমি হাসতে লাগলাম। কিন্তু একটু পরেই আমার হাসি বন্ধ হয়ে যায় যখন মেয়েটি আমাকে বলল, আমার একটা ছেলের সাথে প্রেম আছে! আপনি এবার আসতে পারেন, আঙ্কেল!