মুই নাদান

মুই নাদান

বৌয়ের সাথে তার মামার বাড়িতে বেড়াতে এসেছি, না বেড়াতে না বিয়ের দাওয়াতে এসেছি। শ্যালিকার বিয়ে, শ্যালিকার নাম পাদিয়া বেগম। না আমি ভুল লিখিনি আপনিও ভুল পড়েননি। শালির নাম পাদিয়া বেগম। মেট্রিক পরিক্ষার প্রবেশ পত্রে Nadia বানানে N এর পরিবর্তে P চলে এসেছে।

নাদিয়া হয়ে গেছে পাদিয়া। তখন থেকে সকলে তাকে পাদিয়া বলেই ডাকে। বুঝেন তো বাংলাদেশে সরকারি কাগজে নামের বানান ভুল খুব স্বাভাবিক বিষয়। আমার এক কলিগের নাম নুরু শেখ। বেচারার স্মার্ট কার্ডে “র” এর জায়গায় “ন” বসিয়ে দিয়েছে। নুরু শেখ হয়ে গেছে নুনু শেখ, ছিঃ কি অশ্লিলতা।

শহরের কোলাহল থেকে গ্রামে এসে অন্যরকম শান্তি অনুভব করছি। বর্তমানে বাসার পাশেই এক মাচার উপরে বসে আছি আমরা চারজন। আমি, মামাশশুড়, আমার একমাত্র সালা আর বাড়ির কামলা সিকেন্দার। আগামিকাল বিয়ে, বাসার মহিলারা ব্যস্ত কাজে আর আমরা একটু গলা ভেজানোর আয়োজন করছিলাম। কি ভাবছেন মামাশশুড়ের সাথে মদ খেতে বসেছি এটা কিভাবে সম্ভব। জ্বী ভাই সম্ভব, মামাশশুড় একটু মর্ডান। তার ফেসবুক আইডিও আছে, কার কাছে আইডি খুলে নিয়েছেন সঠিক জানিনা। তবে আইডির নামটা আমার বেশ পছন্দ হয়েছে, আইডির নাম এঞ্জেল মতিন। সেদিন দেখি এঞ্জেল মতিন মানে মামাশশুড় আব্বা ফেসবুক লাইভে এসে গান গাচ্ছেন। তুতু তু তুতু তারা ময়নার মা মার্কা মারা। বুঝতেই পারছেন মামাশশুড় কোন চিজ।

বৌয়ের চৌদ্দ গুষ্টির মধ্যে হাতে গোনা দু চারজন মানুষ আমাকে পছন্দ করেন তাদের মধ্যে এঞ্জেল মতিন একজন।

এঞ্জেল মতিনের বৌ মানে মামি শাশুড়ি অবশ্য আমাকে যথেষ্ট অপছন্দ করেন। তার উপযুক্ত কারন অবশ্য আছে। ঘটনাটা কি বলবো? আচ্ছা বলি,

তখন আমি নতুন জামাই, বৌয়ের সাথে তার মামা চাচা ফুপু সবার বাসায় দাওয়াত খেয়ে বেড়াচ্ছি। তো এ বাসায় প্রথম এসেছি রাতে ফিরতে দিবেনা। মাঝ রাতে পেট মোচড় দিলো। মামা শশুড়ের বাসায় তখন টয়লেট ছিলোনা। পাশেই কচু গাছের আড়ালে বদনা নিয়ে বসতে হয়। কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছি ঠিক তখনি তাকিয়ে দেখি লম্বা সাদা কিছু একটা এদিকে আসছে। এমনিতেই ছোট থেকে আমার ভুতে প্রচন্ড ভয়। ভয়ের চোটে বদনা ছুঁড়ে মারলাম ভুতের মাথা বরাবর। বদনা গিয়ে খটাশ করে লাগলো ভুতের মাথায়, ধাড়াম শব্দে ভুত মাটিতে পড়লো। আমি নিজের বদনা ছোড়ার প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে ইয়াহু করে চিৎকার দিলাম। আনন্দ বেশিক্ষন স্থায়ী হলোনা। ওটা জ্বীন ভুত কিছু ছিলোনা, তিনি ছিলেন আমার শ্রদ্ধেয় মামি শাশুড়ি।

প্রত্যেক ঘটনার ভালো খারাপ দুটো প্রতিক্রিয়া থাকে। এই ঘটনার ভালো প্রতিক্রিয়া হলো মামাশশুড় বাড়িতে টয়লেট বানিয়েছেন। খারাপ পতিক্রিয়া হলো মামি শাশুড়ি মাঝে মাঝে পাগলামি করেন।

মাল খাচ্ছি ভালো মাল কিন্তু নেশা হচ্ছেনা। মনে বৌয়ের ভয় থাকলে কি নেশা হয়।

সিকেন্দার বললোঃ –দুলাভাই আপা মনে হয় আপনেরে ডাকতেছে। . সাথে সাথে সবাই মাচা থেকে নেমে পড়লাম। সিকেন্দারের কানের উপর সন্দেহ করা যায়না। মামি শাশুড়ির মাথায় যখন বদনা ছুঁড়ে মেরেছিলাম সবাই ঘুমে কিন্তু সিকেন্দার ঠিকই মাথায় বদনা লাগার শব্দ শুনতে পেয়েছিলো।

সিকেন্দারকে আমি বড়ই পছন্দ করি, মাটির মানুষ। বয়স ষাটের কাছাকাছি। রাত্রিকে আপা আর আমাকে দুলাভাই ডাকে। আমাকে বড়ই শ্রদ্ধা করে। কিন্তু তার একটা সমস্যা, বেচারা নার্ভাস হলে বড়ই খতরনাক হয়ে যায়। রাত্রি মানে আমার বৌ মানে আপনাদের একমাত্র ভাবির কাছে সিকেন্দারের একটা ঘটনা শুনেছিলাম।

যুদ্ধের সময় নাকি মুক্তিবাহিনিতে নাম লিখিয়েছিলেন। কোন এক মিশনে নার্ভাস হয়ে নাকি নিজের লোকদের উপর বোমা ছুড়তে শুরু করে দিয়েছিলেন। বোমা শেষ হওয়া মাত্র নাকি লুঙ্গি খুলে পশ্চাৎদেশ বের করে বললেন- গুলি কর বেটা, সাহস থাকলে গুলি কর। এক পাদ দিমু সব গিয়া পাকিস্তানে পড়বি।

আহা কি সাহসি মানুষ, শুধু নার্ভাস না হলেই হয়। . . গ্রামের মুরুব্বি মহিলারা ছোট খাটো গানের আয়োজন করেছেন। শ্যালিকা পাদিয়া বেগম বারান্দায় বসে মুচকি মুচকি হাঁসছে। আমি, এঞ্জেল মতিন মানে আমার মামাশশুড় আর নার্ভাস সিকেন্দার চুপচাপ গুটিসুটি মেরে বসে আছি।

নার্ভাস সিকেন্দার আর আমার তেমন কিছু না হলেও এঞ্জেল মতিনের যথেষ্ট নেশা হয়েছে। হঠাৎ দৌঁড়ে উঠানে গিয়ে সবার সামনে কোমড়ে হাত দিয়ে গান আর ড্যান্স শুরু করলেন- “দোলা দে দোলা দে দোলা দেরে পাগলা দোলা দে রো”

বাড়ির বৌ-ঝি সবাই আঁচলে মুখ লুকিয়ে হাসি শুরু করলো। হঠাৎ অনুভব করলাম কেউ একজন শক্ত করে শার্টের কলার পেছন দিক থেকে ধরে রেখেছে। মাথা ঘুরিয়ে দেখি রাত্রি। বুঝেছি আজ কপালে শনি রবি সোম- শুক্র পর্যন্ত সব আছে।

নার্ভাস সিকেন্দার দেখি ভয়ে অন্ধকারে দৌঁড় দিছে, কোন কিছুর সাথে বাড়ি খেয়ে অজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত সে দৌঁড় থামাবেনা এটা কন্ফার্ম। সালা বাবু কোথায় চিৎ হয়ে পড়ে আছে কে জানে।

আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম “আল্লাহ্ এইবার বাঁচাইয়া লও মোরে, মুই নাদান।”

গল্পের বিষয়:
হাস্যরস
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত