জলের কল্লোলে যেন কারও কান্না শোনা গেল, অরণ্যের মর্মরে কারও দীর্ঘনিশ্বাস। চকিত হয়ে ফিরে তাকাতেই দেখা গেল নির্বান্ধব সেই বাবলা গাছটাকে। আর আর তাকে গাছ বলে মনে হল না; মনে হল, সংসারের সমস্ত রহস্য জেনে…

চলন্ত ট্রেনের থেকে ধুধু মাঠ, ঘরবাড়ি এবং গাছপালা, পুকুর, পাখি, করবীর ফুলন্ত শাখায় প্রাণের উচ্ছ্বাস দেখে যতটুকু তৃপ্তি পাওয়া যায়, সেইটুকুই পাওয়া। তার অতিরিক্ত কে দেবে তোমাকে। দুই চক্ষু ভরে তবে দ্যাখো ওই সূর্যাস্তের রঙ…

অতঃপর সে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। জুঁইয়ের গন্ধে বাতাস যেখানে মন্থর হয়ে আছে; এবং রেলিংয়ে ভর দিয়ে, সেখান থেকে অল্প-একটু আকাশ দেখা যায়। আকাশ! এতক্ষণে তার মনে পড়ল, সারাটা সকাল, সারাটা বিকেল আর সন্ধ্যা কাজের পাথরে…

তোমাকে বলেছিলাম, যত দেরীই হোক, আবার আমি ফিরে আসব। ফিরে আসব তল-আঁধারি অশথগাছটাকে বাঁয়ে রেখে, ঝালোডাঙার বিল পেরিয়ে, হলুদ-ফুলের মাঠের উপর দিয়ে আবার আমি ফিরে আসব। আমি তোমাকে বলেছিলাম। আমি তোমাকে বলেছিলাম, এই যাওয়াটা কিছু…

উপর থেকে নীচে তাকাও, দ্যাখো, ছায়াছবির মতোই হঠাৎ চোখের সামনে থেকে এরোড্রমটা দৌড়ে পালায় পৃথিবী যায় বেঁকে। রইল পড়ে দশটা-পাঁচটা, ঝাঁকড়া-মাথা মেপ্‌ল গাছটা, চওড়া-ফিতে রাস্তাটা আর নদীর নীলচে শাড়ি, ফুলের বাগান, গির্জে, খামার, ছক-কাটা ঘরবাড়ি।…

না, আমাকে তুমি শুধু আনন্দ দিয়ো না, বরং দুঃখ দাও। না, আমাকে সুখশয্যায় টেনে নিয়ো না, পথের রুক্ষতাও সইতে পারব, যদি আশা দাও দু-হাতে। ভেবেছিল, এই দুঃখ আমার ভোলাবে আনন্দ দিয়ে; হায়, প্রেম শত জ্বালা,…

যা গিয়ে ওই উঠানে তোর দাঁড়া, লাউমাচাটার পাশে। ছোট্ট একটা ফুল দুলছে, ফুল দুলছে, ফুল সন্ধ্যার বাতাসে। কে এইখানে এসেছিল অনেক বছর আগে, কেউ এইখানে ঘর বেঁধেছে নিবিড় অনুরাগে। কে এইখানে হারিয়ে গিয়েও আবার ফিরে…

আংটিটা ফিরিয়ে দিও ভানুমতী, সমস্ত সকাল দুপুর বিকেল তুমি হাতে পেয়েছিলে। যদি মনে হয়ে থাকে, আকাশের বৃষ্টিধোয়া নীলে দুঃখের শুশ্রূষা নেই, যদি উন্মত্ত হাওয়ার মাঠে কিংশুকের লাল পাপড়িও না পেরে থাকে রুগ্‌ণ বুকে সাহস জাগাতে,…

অমলকান্তি আমার বন্ধু, ইস্কুলে আমরা একসঙ্গে পড়তাম। রোজ দেরি করে ক্লাসে আসতো, পড়া পারত না, শব্দরূপ জিজ্ঞেস করলে এমন অবাক হয়ে জানলার দিকে তাকিয়ে থাকতো যে, দেখে ভারী কষ্ট হত আমাদের। আমরা কেউ মাষ্টার হতে…