জমিদার বাড়ি ২য় পর্ব

জমিদার বাড়ি ২য় পর্ব

হ্যা।বুবুর সাথে সাথে ছায়ার মতো থাকতাম।একসাথে আম চুরি।রোদে শুকো দেয়া আচার কত খেয়েছি মনে নেই।কিন্তু…….
রইস আলী একটা নিঃশ্বাস নিলেন।
-আমি বল্লাম কিন্তু কী? থামলেন কেনো? কি হয়েছিলো আপনার বুবুর।…. কতগুলো প্রশ্ন করে কৌতুহলি দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলাম।
দেখলাম রইস আলীর চোখ অশ্রু সজল হয়ে উঠেছে।
কিছুটা সময় নিয়ে তিনি বলা শুরু করলেন।
“সেবার বাবুর ব্যাবসায় ধ্বস নামলো।ওদিকে খরার কারনে ক্ষেতের ফলন ও ভালো না।
ওদিকে হরপদ জমিদারের গোমেস্তারা খাজনার জন্য বারবার তাগাদা দেয়া শুরু করলো।সংসারের এমন দুর্দিনে আমাকে আর বুবুকে পাঠিয়ে দেয়া হলো বুবুর এক দুঃসম্পর্কীয় দিদার বাড়ি।

সেখানে মোটামুটি ভালোই চলছিলো।মাঝে আমি আর বুবু বাবুদের বাড়িতে এসে দেখা করে যেতাম।দু একদিন থাকাও হতো মাঝে মাঝে।
এভাবে একমাস পেরেই গেলো। সেবার এসে তিন দিন থেকেছিলাম। তৃতীয় দিনে গোমেস্তা সহ হরপদ জমিদার হাজির হলো।নানা বাগবিতান্ডের মধ্যে শেষ পর্যন্ত বাবুরই হার হলো।বর্গাচাষী খাজনার টাকা বাকী।কিছুই করার রইলো না।
বাবুর সাদা কাগজে টিপ সই নিলো।এই টিপসই ই বাবুর কাল হয়ে দাড়ালো।এই টিপসইয়ের ঘোলাজলে বাবুর ভিটে মাটি সব কেড়ে নিলো হরপদ ব্যানার্জি।রক্ষা পায়নি প্রিয়দর্শীনি বুবুও
প্রিয়দর্শীনি বুবু সুন্দরী ও মায়াবতী।এই সৌন্দর্য হরিপদ বাবুর নারীলিপ্সু চোখ ও এড়ালো না।
একদিন রাতে তারাশঙ্কর বাবু বাড়ি ফেরার পথে জমিদারের লোকেরা তাকে নির্মম ভাবে হত্যা করে।কারন একটাই; তিনি প্রিয়দর্শীনিকে জমিদারের রংমহলে পাঠাতে নারাজ ছিলেন।

স্বামী শোক বেশীদিন সইতে পারলেন না তারাশঙ্কর বাবুর স্ত্রী।
ভবধারায় বাকী রইলাম আমি আর প্রিয়দর্শীনি বুবু।তাও পারলাম কই?
কিছুদিন পর জমিদারের লোকেরা এসে বুবুকে তুলে নিয়ে যায়। আর একটা দলিলে টিপসই দেখিয়ে তারাশঙ্কর বাবুর ভিটে মাটি দখল করে নেয়।আমি আবার সেই পথের মুসাফির।
আমার স্থান হয় রাস্থায়। আর প্রিয়দর্শীনি র স্থান হয় জমিদারের রংমহলে।

“এই সেই রংমহল”বলেই দেখালো আমাকে জমিদারের রংমহল।
এই রংমহলের সাথে মিশে অনেক নারীর স্মৃতি।অনেক নারীকে এই রংমহলে নারীলিপ্সু হরপদ ব্যানার্জির নীল চোখের দংশনে দংশিত হতে হয়েছে।
প্রিয়দর্শীনি যেই পায়ে সকালের শিশির ভেজার উষ্ণতা লাগাতো সেই পায়ে পরিয়ে দেয়া হলো নাচনেওয়ালীর ঘুঙুর।

আমি তারাশঙ্কর বাবুর বাড়ি থেকে চলে এলেও বুবুর সাথে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করতাম। অবশেষে একদিন বুবুর দেখা মিললো।আমাকে দেখেই কান্নায় ভাঙে পড়লো।”আমাকে এই নরক থেকে নিয়ে চল ভাই” বলেই হাউ মাউ করে কাদতে লাগলো।একদিন রাত্রে পরিকল্পনা মাফিক বুবু হরিপদ কে শরবের নেশায় মত্ত রেখে রংমহল থেকে বেরিয়ে আসলো। আমি বুবুকে নিয়ে গ্রাম ছেরে অন্য গ্রামে চললাম।সেখানে আবার ঘর বাধলাম। বুবু সারাদিন মনমরা হয়ে থাকতো দেখতে দেখতে বুবুর কোল আলোকিত করে আাসলো চন্দনা।লোকলজ্জার ভয়ে বুবুও আর বেশীদিন রইলে না। সেদিন সন্ধ্যা বেলা মজুর কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরতেই বুবু আমায় বললো”আমি না থাকলে তুই চন্দনাকে দেখিস ভাই।”
আমি বুবুকে রাগ দেখিয়ে বললাম “অমন বজে বক না বুবু।”
→তার মানে চন্দনা?
: হ্যা।চন্দনা প্রিয়দর্শীনির মেয়ে।হরিপদের ঔরসজাত কন্যা।
→তারপর।
: রইস আলী গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে বলে চলল,সকাল বেলা উঠে বুবুকে কোথায়ও খুজে পেলাম না। পরেরদিন বুবুর শবদেহ লাল দিঘিতে ভেসে উঠলো।

কিছুদিন আগেও আমার সব ছিলো আজ আমি নিঃস্ব।তারপরেও বুবুদের মায়া ছাড়তে পারলাম না।চন্দনাকে নিয়ে ফিরে এলাম আবার হরিপদের এলাকায়।হরিপদকে উচিত শিক্ষা দিতে।
কিন্তু বড় মাছ কুলে উঠানো যেমন কঠিন জালে বাজানো আরো কঠিন।

চন্দনাকে বড় করতেছিলাম আপন মনে। বুবুকে দেওয়া কথা হেরফের হবার নয়।আমার মতে বুবু, তারশঙ্কর বাবু এবং তার স্ত্রী হত্যার জন্য হরিপদই দায়ী।

চন্দনাকে বড় করছিলাম আর মনের ভিতর হরিপদের উপর প্রতিশোধের ছক কষছিলাম।
কায়দা করে প্রথমে হরিপদের বাড়ির মালীর কাজটা জুটিয়ে নিলাম। দীর্ঘ্য পাঁচ বছরের সাধনাশ আস্তে আস্তে হরিপদের বিশ্বাস অর্জন করলাম। মালী থেকে লেঠল, লেঠেল থেকে লেঠল সর্দার। এবং একেবারে খাস লোক।

খাস লোক হওয়ায় হরপদ ব্যানার্জির অনেক পৈচাশিক কার্যের স্বাক্ষী ছিলাম।
চন্দনার মা বাবা বলতে সবই আমি।দেখতে দেখতে চন্দনা দশ পেরিয়ে এগারোয় পা রাখলো।এটা তৎকালীন হিন্দু মেয়েদের বিয়ের উপযুক্ত বয়স।চন্দনার মুখের দিক তাকিয়ে ভুলে যাই হরপদের উপর প্রতিশোধের স্পৃহা।

চন্দনা দেখতে একেবারে ওর মা প্রিওদর্শীনির মতো।ওর মুখের পানে চাইলে ভেসে উঠতো বুবুর মুখখানা।
সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিলো।
কিন্তু হঠাৎ একদিন আচমকা ঝড় এসে সব ওলট পালট করে দিয়ে গেলো।

ঝড়?
: হুম।। বলে রইস আলী আবার বলা শুরু করলো।
চন্দনা প্রিয়দর্শীনির মতো চঞ্চলা।সারাক্ষন বনে বাদরে ঘুরে বেড়াতো।আমি কখনো নিষেধ করিনি।কারন ওর ভিতর আমি প্রয়দর্শীনি বুবুকে দেখতাম।
হু বলে একটা দীর্ঘস্বাস ফেললো রইস আলী।
আাবার বলা শুরু করলো,:

আরো গল্প পড়তে লিংক এ ক্লিক করুন……

জমিদার বাড়ি প্রথম পর্ব

জমিদার বাড়ি  ২য় পর্ব

জমিদার বাড়ি শেষ পর্ব

গল্পের বিষয়:
ভৌতিক
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত