আবার যখের ধন (পর্ব ১৮)

আবার যখের ধন (পর্ব ১৮)

টর্চের আলো নিবিয়ে গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে প্রায় দম বন্ধ করে অনেকক্ষণ তারা অপেক্ষা করলে,—কিন্তু গুহার ভিতরে কোনরকম শব্দ শোনা গেল না। তারা প্রতিমুহূর্তে আশা করছিল, শত-শত তীক্ষ্ণ বর্শা বা তরবারির তীব্র আঘাত, কিন্তু অনেকক্ষণ পরেও কেউ তাদের আক্রমণ করলে না!
চারিদিক এত নিঃশব্দ যে, কেউ সন্দেহই করতে পারবে না, রণসাজে সজ্জিত হাজার-হাজার যোদ্ধা এই বিরাট গুহার মধ্যে শত্রুসংহারের জন্যে প্রস্তুত হয়ে অপেক্ষা করছে! অস্বাভাবিক সেই নিঃশব্দতা!

সে অনিশ্চয়তা সহ্য করতে না পেরে বিমল আবার টর্চ জ্বেলে তার আলো চতুর্দিকে নিক্ষেপ করলে।

আশ্চর্য, আশ্চর্য শত্রুরা কেউ এক পদও অগ্রসর বা পশ্চাৎপদ হয় নি, তাদের মুখের ভাব ও দেহের ভঙ্গি ও একটুও বদলায় নি, ঠিক তেমনি করেই বর্শা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, নিশ্চল প্রস্তরমূর্তির মতো!

এও কি সম্ভব! অবাক ও হতভম্ব হয়ে সকলে পরস্পরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগল।

বিমল রিভলবারটা বাগিয়ে ধরে দুপা এগিয়ে গেল,—শক্রদের জনপ্রাণীর দেহে তবু এতটুকু চাঞ্চল্য দেখা গেল না।

তবে?…তবে কি এরা মানুষ নয়। তবে কি সত্যিই এরা যখ…রত্ন-গুহার প্ৰেতরক্ষী, গাটুলা-সর্দারের মুখে যাদের কথা তারা শুনেছিল ?

হঠাৎ গাটুলা-সর্দার বলে উঠল, “হয়েছে। এতক্ষণে মনে পড়েছে! ওরে আমার পোড়া মন, বুড়ো হয়ে তুই সব ভুলে যাস্?”

–“কী মনে পড়েছে, সর্দার?”

—“এদেশের এক অদ্ভুত রীতি আছে। গুহার বাইরে যে-সব রক্ষী-সৈন্য পাহারা দেয়, বেঁচে থাকতে তারা এই গুহার ভেতরে ঢুকতে পায় না। কিন্তু তাদের মৃত্যু হলে পর তাদের দেহকে গুহার ভেতরে নিয়ে আসা হয়। তারপর প্রাচীন মিশরে যে উপায়ে মমি তৈরি করা হতো তেমনি কোন উপায়ে তাদের চিরদিনের জন্যে রক্ষা করা হয় ….এদের কথা অনেকদিন আগেই শুনেছিলুম, কিন্তু এতক্ষণ সে কথা আমার মনে পড়ে নি। ওরে আমার পোড়া মন, খ্যাঁক থুঃ, তোর গলায় দড়ি, গলায় দড়ি।”

মানিকবাবু এতক্ষণ আতঙ্কে দুই চোখ মুদে, অন্তিমকাল উপস্থিত হয়েছে ভেবে মনে মনে ইষ্টদেবতার নাম জপছিলেন; এখন গাটুলার কথা শুনে সহসা চোখ খুলে বললে, “তাহলে সামনে যাদের দেখছি, তারা জ্যান্ত মানুষ নয়,-মমি?”

রামহরির দুই চোখ তখনো কপালে উঠেই আছে! সে বললে, “মামি! জ্যান্ত মানুষ নয়, মামি! ওরে বাবা, মামি আবার কোন দেশি ভূত গো?”

মানিকবাবু সগর্বে বললেন, “আহা, মামি নয়, মামি নয়, –মমি ৷ বাঘ-সিঙ্গির দেহকে জিইয়ে বৈঠকখানায় সাজিয়ে রাখা হয় দেখেছ তো। মমিও তেমনি মরা-মানুষের জিয়ানো দেহ! তোমার কিছু ভয় নেই রামহরি, তুমি শান্ত হও আমার দিকে চেয়ে দেখ, আমি কি একটুও ভয় পেয়েছি?”

রামহরি বললে, “ভয়? ভয় আমি আর কারুকে করি না, ভয় করি খালি ভূতকে! খোকাবাবু জানে, আমার এই বুড়ো হাড়ে এখনো ভেল্কি দেখাতে পারি,—দু-চারটে জোয়ান পাঁঠাকে এখনো কুপোকাত করবার জোর আমার আছে। কিন্তু ভূতের কাছে তো আর গায়ের জোর খাটে না, কাজেই সেইখানেই আমি বেজায় কাবু!”

কুমার বললে, “ও-সব বাজে কথা যেতে দাও । এ গুহা তো দেখছি, প্রকাণ্ড ব্যাপার, এর কোথায় কি আছে তা বুঝে ওঠা কঠিন। এখন আমাদের কর্তব্য কী?”

গাটুলা বললে, “আগেই বলেছি, গুহার ভেতরের কথা আমিও কিছুই জানি না! তবে শুনেছি এ গুহা নাকি অনন্ত গুহা, এর শেষ নেই! এর মধ্যে নাকি মন্দির আছে, ঘরবাড়ি আছে, রত্নভাণ্ডার আছে, পথ-বিপথ আছে, আর এখানে বাস করে যারা, তারা মানুষ না যক্ষ না রক্ষ, তাও আমি বলতে পারি না। গুহায় ঢুকেই তো এক আশ্চর্য ব্যাপার দেখলুম—মৃত যোদ্ধার বিভীষিকা এমন আরো কত বিভীষিকা যে এই বারে সিংহদমন গাটুলা-সর্দারকে ভয় দেখাবে তা কে বলতে পারে?”

বিমল বললে, “তাইতো, এবারে কোন দিকে যাব,–এ ভীষণ আঁধারপুরীতে পথের সন্ধান দেবে কে? হায় হায়, এই সময়ে ম্যাপখানা যদি কাছে থাকত।”

বিমলের মুখের কথা শেষ হতে-না হতেই বাহির থেকে গুহা মুখের গলিপথে অনেকগুলো টর্চের আলো এসে পড়ল!

গাটুলা বললে, “নিশ্চয় আমাদের শক্ররা এইবারে আসছে।”

—“শত্রুরা?”

–“হ্যাঁ, যারা ম্যাপ চুরি করেছে তারা। এখন আমরা লুকোই কোথায়?”

বিমল টপ্‌ করে চারিদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে বললে, “এস আমরা ঐ মরা যোদ্ধাদের দলে ঢুকে গা-ঢাকা দিয়ে থাকি গে।”

সকলে তাড়াতাড়ি সেই মৃত যোদ্ধাদের দলে গিয়ে ভিড়ে পড়ল এবং তাদের আড়ালে লুকিয়ে থেকে শত্রুদের জন্যে অপেক্ষা করতে লাগল।

অল্পক্ষণ পরেই বাহির থেকে এ-লোকগুলো ভেতরে এসে ঢুকল, আন্দাজে বোঝা গেল, সংখ্যায় তারা চল্লিশ-পঞ্চাশ জনের কম হবে না। তাদের দলে দশবারোটা টর্চ আছে, কিন্তু তাদের আলো পড়ছে সামনের দিকে, কাজেই কারুর মুখ দেখা যাচ্ছে না।

কুমার চুপি-চুপি বললে, “ও-দলে খোঁজ নিলে নিশ্চয়ই মানিকবাবুর গুণধর কাকা মাখনবাবুকে তার বন্ধু ঘটোৎকচকে, আর সেই রামু রাস্কেলকে দেখতে পাওয়া যাবে।”

বিমল বললে, “হ্যাঁ, আমারও সেই বিশ্বাস!”

–শত্রুদল ভেতরে ঢুকেই সেই সহস্ৰ সহস্র আক্রমণোদ্যত যোদ্ধার মূর্তি দেখে প্রথমে থমকে দাড়িয়ে পড়ল মাত্র কয়েক মুহূর্তের জন্যে; তারপরেই বামদিকে মোড় ফিরে সকলে মিলে এগিয়ে চলল ।

বিমল বললে, “দেখছ, ওরা এ মূর্তিগুলোকে দেখে ভয় পেলে না? নিশ্চয়ই ওরা আগে থাকতে সব সন্ধান নিয়ে এসেছে। তারপর দেখে, সকলের আগে টর্চ হাতে করে একটা লোক যাচ্ছে। আমার বিশ্বাস, ও লোকটাই হচ্ছে দলের সর্দার মাখনবাবু। ওর কাছেই ম্যাপ আছে, তাই সবাইকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে!.. দেব নাকি গুলি করে ওর মাথার খুলি উড়িয়ে?”

কুমার বলল, “না না, ওরা দলে খুব ভারি, একজনকে মেরে লাভ কী? তার চেয়ে চল, তফাতে থেকে আমরাও ওদের পিছনে-পিছনে যাই, তাহলে আর আমাদের ভাবনা থাকবে না, ওরাই আমাদের পথপ্রদর্শকের কাজ করবে!”

বিমল কুমারের পিঠ চাপড়ে বললে, “তুমি ঠিক বলেছ। সর্দারের মত কী?”

গাটুলাও কুমারের প্রস্তাবে সায় দিলে! মানিকবাবু বললেন, “বাপুরে ঘটোৎকচ যদি দেখতে পায়?”

বিমল বললে, “তাহলে আপনি এইখানে বসে আমাদের জন্যে অপেক্ষা করুন!”

মানিকবাবু বললেন, “একলা? ও বাবা, বলেন কী? তার চেয়ে আপনাদের সঙ্গে যাওয়াই ভালো! আর আমি কারুকে ভয় করব না। এবার আমিও মরিয়া হয়ে উঠব! প্রাণ যখন যাবেই, তখন আর ভয় পেয়ে লাভ কী। চলুন, কোথায় যাবেন চলুন!”

সকলে অত্যন্ত সন্তর্পণে অগ্রবর্তী দলের টর্চের আলো লক্ষ করে অগ্রসর হল । প্রায় দশ মিনিট এইভাবে অগ্রসর হবার পর দেখা গেল, শক্র দলের টর্চের আলো একে-একে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।

গাটুলা বললে, “বোধ হচ্ছে ওরা যেন নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে!” শত্রুদের আলোর চিহ্ন যখন একবারে অদৃশ্য হয়ে গেল, বিমল তখন নিজের টর্চের আলো মাটির উপরে ফেলে আবার এগুতে লাগল।

খানিক এগিয়েই দেখা গেল, পাহাড়ের গায়ে খোদা সুদীর্ঘ এক সিঁড়ির সার প্রায় চারতলা নিচে নেমে গেছে কিন্তু সেখানে শক্রদের কোন সাড়াশব্দই নেই।

ধীরে ধীরে অন্ধকারেই তারা সিঁড়ি ধরে নিচে নামতে লাগল, সিঁড়ির নিচে গিয়েও শত্রুদের কোন পাত্তা পাওয়া গেল না। চারিদিকে বিদ্যুতের মত টর্চের আলোক রেখাকে একবার ঘুরিয়ে নিয়ে বিমল দেখলে, তারা প্রকাণ্ড এক লম্বা-চওড়া উঠানের উপরে দাঁড়িয়ে আছে। উঠানের পরেই দালান ও সারবন্দী ঘর ও মাঝে মাঝে এক-একটা পথ । কিন্তু শক্ররা কোন পথে গেছে?

তারা হতাশভাবে সেইখানেই মিনিট পনেরো দাঁড়িয়ে রইল। চুপি চুপি অনেক পরামর্শের পরও স্থির করতে পারলে না, তারা কোন দিকে যাবে এবং শত্রুরা কোন দিকে গেছে!

আচম্বিতে সেই বিরাট রত্ন-গুহার নিদ্রা-স্তদ্ধতা ভেঙে গেল!

প্রথমেই শোনা গেল আট-দশটা বন্দুকের অগ্নি-উদ্‌গারের শব্দ এবং তারপরেই হঠাৎ শত শত সিংহের প্রাণ-চমকানো গম্ভীর গর্জন সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য ঘণ্টার ধ্বনি, অগণ্য মানুষের চিৎকার ও আর্তনাদ। সারা গুহা থর থর করে কাঁপতে লাগল। অন্ধকারের ভিতরেই প্রাঙ্গণের চারিদিককার দরজা খোলার শব্দ হতে লাগল,—এদিকে ওদিকে সেদিকে দলে দলে মানুষের-না কাদের পদশব্দ শোনা যেতে লাগল!

গাটুলা সর্দার বলে উঠল– “আর নয়, যদি বাঁচতে চাও তো পালাও! গুহার যখেরা জেগে উঠেছে; ঐ শোনা, শত-শত সিংহ চিৎকার করতে করতে এদিকে এগিয়ে আসছে, যারা ভেতরে গেছে তারা আর ফিরবে না আমরাও ভেতরে থাকলে আর বাইরের আলো দেখতে পাব না,.এস, এস, পালিয়ে এস।”

গাটুলার সঙ্গে সঙ্গে সকলেই দ্রুত পদে সিঁড়ি দিয়ে আবার উপরে উঠল এবং মাঝে মাঝে—আলো জেলে যে পথ দিয়ে এসেছে সেই পথ ধরে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে লাগল……খানিক পরেই বুঝতে পারলে, অনেক তফাতে তাদের পিছনেও আরো কারা বেগে ছুটে আসছে। তারা কারা?

শত-শত সিংহের গর্জন, হাজার হাজার মানুষের কোলাহল, অসংখ্য ঘণ্টাধ্বনি সেই রহস্যময় রত্নময় রত্ন-গুহাকে তখনো তোলপাড় করে তুলছে কিন্তু বন্দুকের শব্দও বহুকন্ঠের আর্তনাদ আর শোনা যাচ্ছে না!

এই তো গুহার মুখ। তারপরেই বাহিরের মুক্ত আকাশ! কিন্তু চাঁদের আলো তখন নিভে গেছে এবং শেষ-রাতের পাতলা অন্ধকারের ভিতরে আসন্ন ভোরের ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে!

বিমল বললে, “ঐ বড় পাথরখানার আড়ালে সবাই লুকিয়ে পড়ি এস! পিছনের পায়ের শব্দ খুব কাছেই এসে পড়েছে!”

তারা পাথরখানার আড়ালে গিয়ে দাঁড়াতে না-দাঁড়াতেই গুহার ভিতর থেকে পর পর তিনটি মূর্তি বেরিয়ে এল, ঝড়ের মতো। বাইরে এসে তারা এক মুহূর্তও থামল না, সোজা গিয়ে পাহাড় থেকে নামবার পথ ধরলে!

পাতাল অন্ধকারে ভালো করে বোঝা যাচ্ছিল না বটে, কিন্তু সর্বশেষে যে পাহাড় থেকে নামবার পথ ধরলে, তার চেহারার অস্বাভাবিকতা সকলেরই চোখে পড়ে গেল! যেমন লম্বা তেমনি চওড়া তার দেহ, গায়ের রং তার যেন অন্ধকারের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে এবং তার সর্বাঙ্গে এক টুকরো কাপড়ও নেই! সেই অদ্ভুত মূর্তির কাঁধের উপরে বড় বাক্সের মত কী একটা যেন রয়েছে!

বিমল বললে, “কুমার! কুমার! ঐ দেখ ঘটোৎকচ যাচ্ছে, ঐ দেখ ঘটোৎকচ যাচ্ছে। কাঁধে ও কী নিয়ে যাচ্ছে?— গুপ্তধন ?–কুমার ! কুমার আজ ঘটোৎকচের একদিন কি আমারই একদিন!”—বলতে-বলতে বিমল একলাফে পাহাড়ের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল!

পাপের ফল

বিমল পাহাড় থেকে নামবার উপক্রম করতেই গাটুলা তাড়াতাড়ি এগিয়ে গিয়ে দুই হাতে তার দুই কাঁধ চেপে ধরে বললে, “না বাবু, এখনও রত্ন-গুহার সীমানা আমরা ছাড়াই নি, এখানে গোলমাল করা আর যেচে গলায় ফাঁসি দেওয়া একই কথা।”

বিমল মাথা ঝাঁকানি দিয়ে উত্তপ্ত স্বরে বললে, “না সর্দার! তুমি আমাকে ছেড়ে দাও! তুমি জানো না, ঐ ঘটোৎকচ কতবার আমাদের ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছে! ও যেন আলেয়া, ওকে দেখা যায়, ধরা যায় না। ও যে কি, মানুষ, না জন্তু, না প্রেত তাও আমরা জানি না! আজ ওকে আমি ধরবই ধরব,–সকল রহস্য ভেদ করব।”

হঠাৎ নিচ থেকে একাধিক কন্ঠের তীব্র আর্তনাদ জেগে উঠল!

কুমার ও রামহরি চমকে একসঙ্গে বলে উঠল, “ও কী-ও কী!”

খানিকটা নেমেই দেখে, ভীষণ ব্যাপার! রক্তগঙ্গার মাঝখানে দুটো দেহ পড়ে রয়েছে, একটা দেহ একেবারে স্থির এবং একটা দেহ তখনো ছটফট করছে।

যে ছটফট করছিল তাকে দেখেই মানিকবাবু কাতরস্বরে বলে উঠলেন, “অ্যাঁ, ছোটকাকা! ছোটকাকা!’

আহত লোকটির দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে গাটুলা বললে, “হু, চিনতে পেরেছি! এ যে দেখছি সুরেনবাবু হুজুরের ভাই মাখনবাবু !”

মাখনবাবু হাঁপাতে-হাঁপাতে অতি কষ্টে বললেন, “আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না,— রক্তে আমার দুই চক্ষু বন্ধ হয়ে গেছে ! কিন্তু আমি বুঝতে পারছি তোমরা কে! তোমাদের অনেক কষ্ট দিয়েছি, তার ফলে নিজেও মরতে বসেছি,–তোমরা আমাকে ক্ষমা কর ।”

মাখনবাবুকে জড়িয়ে ধরে মানিকবাবু বললেন, “আপনার এ-দশা কে করলে, ছোটকাকা?” –

—“ঘটোৎকচ। আমাকে আর রামুকে সে ছোরা মেরেছে।”

–ছোরা মেরেছে! কেন?”

—“গুপ্তরত্ন সে একলাই ভোগ করতে চায়।”

বিমল সাগ্রহে জিজ্ঞাসা করলে, ‘গুপ্তধন! আপনারা কি গুপ্তধন পেয়েছেন?”

—“পেয়েছি, কিন্তু গুহায় যা আছে, তার তুলনায় যা পেয়েছি তা যৎসামান্য। সে গুহায় যা আছে, কুবেরের ভাণ্ডারেও বোধহয় তা নেই! কিন্তু সে হচ্ছে ভূতুড়ে গুহা। আমার সঙ্গীরা প্রায় সবাই মারা পড়েছে! একটা বাক্স নিয়ে কোন গতিকে আমি, রামু আর ঘটোৎকচ প্রাণ নিয়ে গুহা থেকে বেরিয়েছি বটে, কিন্তু এখন রামুও মরেছে আমারও মরতে দেরি নেই! ঘটোৎকচ। বিশ্বাসঘাতক ঘটোৎকচ রত্নের বাক্স নিয়ে আমাদের মেরে সে পালিয়েছে! উঃ, সে বাক্সে যা আছে, তা দিয়েও একটা রাজ্য কেনা যায়! কিন্তু সে পাপের ফল আমার ভোগে এল না। আমাকেই নরকে যেতে হচ্ছে! উঃ! উঃ! গেলুম-গেলুম! আমার বুক ফেটে যাচ্ছে-মানিক-মানিক–” বলতে-বলতে মাখনবাবু ধনুকের মতো বেঁকে গেলেন,—তারপরেই মাটিতে সিধে হয়ে আছড়ে পড়ে একেবারে স্থির হয়ে রইলেন।

ঘটোৎকচ আমাদের ফাঁকি দিয়ে পালাল! এতক্ষণে যে অনেক দূরে গিয়ে পড়েছে, আর তাকে ধরতে পারব না!

কুমার এদিকে-ওদিকে তাকিয়ে বললে, “কিন্তু সর্দার, গাটুলা সর্দার কোথায় গেল?”

বিমল বলে উঠল, “হুশিয়ার গাটুলা-সর্দার। নিশ্চয় সে ঘটোৎকচের পিছু নিয়েছে, চল চল, দৌড়ে চল।”

মানিকবাবু করুণ স্বরে বললেন, “কিন্তু আমার কাকার মৃতদেহ? তার সৎকারের কী হবে?”

বিমল দ্রুতপদে পাহাড় থেকে নামতে-নামতে বললে, “শয়তানের মড়ার সৎকার করবে শেয়াল-কুকুরেরা। চলে আসুন!”

আরো গল্প পড়তে লিংক এ ক্লিক করুন……

‘আবার যখের ধন’ (পর্ব ১৭)

‘আবার যখের ধন’ (১৯তম ও শেষ পর্ব)

গল্পের বিষয়:
রহস্য
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত